হাড় শক্ত রাখা আমাদের সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। জন্মের পর থেকেই আমাদের শরীরে হাড় গঠন শুরু হয় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা শক্ত ও মজবুত হয়। তবে এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হতে হলে ছোটবেলা থেকেই সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। শৈশব হলো সেই সময় যখন শরীর দ্রুত বৃদ্ধি পায়, হাড়ের দৈর্ঘ্য ও ঘনত্ব বাড়ে। এই সময় প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পেলে ভবিষ্যতে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই শৈশবকালেই এমন খাবার খাওয়া উচিত যা হাড়ের জন্য উপকারী।
হাড়ের প্রধান উপাদান হলো ক্যালসিয়াম। এটি হাড়কে শক্ত ও ঘন করে তোলে। শিশুদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত জরুরি। দুধ, দই, ছানা, পনির এসব খাবারে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের জন্য উপকারী।
গরু বা মহিষের দুধ থেকে তৈরি খাবার শিশুরা সহজেই খেতে পারে এবং এতে হাড়ের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেলে। এছাড়া ছোট মাছ, বিশেষ করে মলা, শিঙি, কাচকি বা পোনা মাছ ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। মাছে থাকা ক্যালসিয়াম শিশুদের জন্য সহজপাচ্য এবং এটি হাড়ের গঠনে সহায়তা করে।
ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি ভিটামিন ডি-ও হাড়ের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়াম শরীরে থাকলেও ভিটামিন ডি না থাকলে হাড় তা সঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর প্রাকৃতিক উৎস।
সকালে কিছুক্ষণ রোদে খেলা বা হাঁটাচলা শিশুদের জন্য উপকারী। খাদ্য থেকেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। ডিমের কুসুম, চর্বিযুক্ত মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন ইত্যাদি ভিটামিন ডি সরবরাহ করে। শিশুর খাদ্যতালিকায় এসব খাবার রাখলে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
প্রোটিনও হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রোটিন হাড়ের কাঠামোকে মজবুত করে এবং বৃদ্ধির হার বাড়ায়। মুরগির মাংস, ডিম, ডাল, মটর, বাদাম, সয়াবিন প্রোটিনের ভালো উৎস। শৈশবে নিয়মিত এসব খাবার খেলে শুধু হাড় নয়, পেশিও শক্ত হয় এবং সামগ্রিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
সবজি ও ফলও হাড়ের জন্য অপরিহার্য। গাঢ় সবুজ পাতা যেমন পালং, লাল শাক, কলমি শাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। গাজর, লাউ, কুমড়া, ব্রকলি ইত্যাদি সবজি এবং কমলা, পেঁপে, আমের মতো ফল ভিটামিন সি ও অন্যান্য খনিজ উপাদান সরবরাহ করে যা হাড়ের সঠিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি হাড়ের সংযোগস্থল ও লিগামেন্ট মজবুত করে, যা হাড়কে ভেঙে যাওয়া বা আঘাত থেকে রক্ষা করে।
শৈশবে শিশুরা অনেক সময় খাবারে খুঁতখুঁতে হয়। তাই তাদের খাবারে বৈচিত্র্য আনতে হবে। একই খাবার একভাবে না দিয়ে নানা রকমভাবে রান্না করে পরিবেশন করলে তারা আগ্রহ নিয়ে খাবে।
যেমন, দুধ দিয়ে ফলের স্মুদি, ডিম দিয়ে সবজি অমলেট, বা মাছের কাবাব তৈরি করা যেতে পারে। এতে তারা প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে এবং খাবারের প্রতি আগ্রহও বাড়বে।
শিশুদের হাড়ের জন্য শুধু খাবারই নয়, পর্যাপ্ত শারীরিক কর্মকাণ্ডও দরকার। নিয়মিত খেলা, দৌড়ানো, লাফানো এসব ক্রিয়াকলাপ হাড়ের উপর প্রাকৃতিক চাপ সৃষ্টি করে যা হাড়কে আরও মজবুত করে। তবে শক্তিশালী হাড়ের ভিত্তি হলো সঠিক পুষ্টি। পুষ্টি ঘাটতি থাকলে শুধু ব্যায়াম হাড়কে সুস্থ রাখতে পারবে না।
যদি শৈশব থেকে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে হাড়ক্ষয়, অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
তাই বাবা-মায়ের উচিত শিশুর খাদ্যতালিকায় নিয়মিত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, প্রোটিন, ভিটামিন সি ও অন্যান্য খনিজসমৃদ্ধ খাবার রাখা। শৈশবের এই বিনিয়োগ ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী, সুস্থ ও সক্রিয় জীবন নিশ্চিত করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।