জুমবাংলা ডেস্ক : উসিংনু মারমার সামনে বিভিন্ন পদের খাবার ও ফলমূল সাজানো। এগুলো আনা হয়েছে পাহাড় থেকে। ক্রেতা সামাল দিতে হিমশিম বান্দরবান থেকে আসা উসিংনু এক ফাঁকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের খাবার নিয়ে সমতলের মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা আছে। এসব ধারণা মুছে দিতে এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে সৌন্দর্য, খাবারে যে বৈচিত্র্য– তা জানাতে এই আয়োজন।’
রাজধানীতে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হয়েছে ‘ইন্ডিজিনাস ফুড ফেস্টিভ্যাল’। শুক্রবার মিরপুর-১৩ এলাকায় বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে এ উৎসব শুরু হয়। অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আইপিনিউজ এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নাগরিক উদ্যোগের আয়োজনে শনিবার পর্যন্ত চলবে উৎসব। এতে নৃগোষ্ঠীদের নিজস্ব খাবার ও জুমে উৎপাদিত অর্গানিক পণ্যের প্রদর্শন করছেন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর উদ্যোক্তারা।
উৎসবের প্রথম দিন সকাল থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় বাড়তে থাকে। তাদের ভিড় ঠেলে স্টলের এক পাশে রাখা পাহাড়ি ছোট বেগুন, মুন্ডি, বাঁশ, সাবারাং দেখছিলেন পিনাকি রায় নামে এক ক্রেতা। সেখান থেকে তিনি একটি বাঁশ তুলে নিলেন। পিনাকি বলেন, বাঁশের মধ্যে রান্নার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ‘পার্বো’ নামক এক ধরনের বাঁশ। বাঁশ যত বয়স্ক হবে, ততই ভালো। কারণ কচি বাঁশ দ্রুত পুড়ে যায়। তাই পরিবারের সদস্যদের জন্য বাঁশের মধ্যে মাংস রান্না করতে এটি কিনে নিলাম।
‘বাঁশ কোড়ল’ আদিবাসীদের অন্যতম প্রিয় খাবার। মিরপুরে বেশ কয়েক বছর ধরে বসবাস করছেন ডালিয়া চাকমা। দেশীয় খাবারের স্বাদ নিতে তিনিও ছুটে এসেছেন উৎসবে। ডালিয়া বলেন, ‘বাঁশ কোড়ল কখনও চিংড়ি শুঁটকি দিয়ে তেলযোগে, আবার কখনও তেল ছাড়া রান্না করা হয়। তবে যেভাবেই রান্না করা হোক না কেন, এর স্বাদ অসাধারণ।’
বাঁশ কোড়ল ছাড়াও বাঁশ মুরগি, লাকসু সালাদ কিংবা মুংদি, মুরগি হরবো, গরুর গুদেয়ি, শুঁটকি হেবাং, সান্যে-পিদে, বালাচাওসহ পার্বত্য অঞ্চলের বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার মিলছে এই উৎসবে। রয়েছে পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ঐতিহ্যবাহী নানা পিঠা, শাকসবজি, ফলমূল, বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা জাতের কৃষিপণ্যের সমাহার এবং বাহারি পদের শুঁটকি।
উৎসব উদ্বোধন করে বনফুল আদিবাসী ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো বলেন, ‘ফুড ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমে বৃহত্তর সমাজকে এই বার্তাই দিতে চাই, তারা যেন অর্গানিক খাবার গ্রহণের দিকে মনোযোগী হয়।’
অনুষ্ঠানের অতিথি দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, ‘আদিবাসীরা প্রকৃতিকে লালন করছে, পালন করছে। আমার মনে হয় বাঙালিদের চেয়ে আদিবাসীরাই এ দেশের প্রকৃতিকে রক্ষায় বেশি অবদান রাখছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা যারা বসবাস করি, তারা শুধু মূলধারার খাবারের স্বাদই বেশি গ্রহণ করি। অল্প হলেও ধীরে ধীরে আমরা বিভিন্ন আদিবাসী বর্ণাঢ্য খাবারের স্বাদ নিতে শুরু করেছি।’
স্বাগত বক্তব্যে আইপিনিউজের বিশেষ প্রতিনিধি লভ চাকমা বলেন, ‘এই ফেস্টিভ্যালের মধ্য দিয়ে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার এবং অর্গানিক পণ্যসামগ্রী রাজধানীর বুকে পরিচয় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছি, যা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের আন্দোলনকে আরও সামনে এগিয়ে নেবে।’
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন। উৎসবটি সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।