জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশসহ ১৫টি সোর্স কান্ট্রি থেকে নতুন করে বিদেশি কর্মী নেওয়ার কোটা অনুমোদনের আবেদন স্থগিত করেছে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অনুমোদন স্থগিত করা হয়।
শনিবার (১৮ মার্চ) এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী ভি শিবকুমার জানান, ফরেন ওয়ার্কার এমপ্লয়মেন্ট রিল্যাক্সেশন প্ল্যানে (পিকেপিপিএ) বিদেশি কর্মীদের জন্য কোটার আবেদন ও অনুমোদন ১৮ মার্চ থেকে পরবর্তীসময়ে তারিখ ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হলো।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) পর্যন্ত বিভিন্ন সেক্টর থেকে বিদেশি কর্মীদের জন্য মোট ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৩৯৬টি কর্মসংস্থান কোটা মন্ত্রণালয় অনুমোদন করার পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পিকেপিপিএর মাধ্যমে উৎপাদন, নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, কৃষি এবং পরিষেবা খাতে কোটা অনুমোদনের সংখ্যা বিবেচনায় নেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত বিদেশি শ্রমিকদের জন্য যে সংখ্যক কোটা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ খাতসহ শিল্পকারখানায় এসব কর্মীকে দিয়ে শ্রম চাহিদা মেটানো সক্ষম বলে আশা করছেন মানবসম্পদ মন্ত্রী।
এই সময়ের মধ্যে কর্মীদের নিয়োগের প্রক্রিয়া ও শ্রমিকদের অবিলম্বে প্রবেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনুমোদনপ্রাপ্ত সব নিয়োগকর্তাকে অনুরোধ করে মানবসম্পদ মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত কোটার তুলনায় বিদেশি কর্মীর প্রবেশের সংখ্যা এখনও কম।
গত ৫ মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ২১ জন কর্মী গেছেন মালয়েশিয়ায়। এছাড়া ৫ মার্চ পর্যন্ত জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৫০০ জনকে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখন প্রতিদিন হাজারের বেশি কর্মীর ফ্লাইট দিতে পারছে অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো।
অন্যদিকে, গত ৫ মার্চ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার নিয়োগদাতারা বাংলাদেশ থেকে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৪৭৩ জন কর্মী নিতে সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন পেয়েছেন। দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের জন্য এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ১৪ হাজার ৪৭৩ কোটা অনুমোদন দিয়েছে।
এর আগে গত ১ মার্চ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম-কল্যাণ উইং থেকে ২ লাখ ১৯৯ কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্রে সত্যায়ন করা হয়েছে। মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের ভিসা ইস্যুতে সহযোগিতা করা প্রতিষ্ঠান এমইএফসি থেকে ই-ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল ১ লাখ ২২ হাজার ২টি।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী ভি শিবকুমারের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে কর্মী নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা আয়োজনের অনুরোধ জানান বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী।
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর গতি বাড়ানো ও অভিবাসন খরচ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং দেশটিতে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া কীভাবে আরও সহজ করা যায় এসব বিষয় নিয়ে সেই বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।
এছাড়া বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত অনলাইন পদ্ধতি যুক্ত করার বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনার কথা জানা গেছে।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল ও প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ যৌথ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন, দেশটিতে কর্মী পাঠানোর গতি বৃদ্ধি এবং অভিবাসন খরচ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে দুই দেশের মধ্যকার সমঝোতা স্মারকে পরিবর্তন আনা হবে।
২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ ছিল বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া। দীর্ঘ দেনদরবার ও নানা অনিশ্চয়তার পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর ২০২২ সালের ২ জুন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানানের নেতৃত্বে ঢাকায় দুই দেশের বৈঠকে কারিগরি বিষয়সহ অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধান হয়। শ্রমবাজার খোলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন দুই মন্ত্রী। তুন সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ২০২২ সালের ৮ আগস্ট থেকে কর্মী যাওয়া শুরু হয় মালয়েশিয়ায়।
শুরুতে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়ার ঘোষণা দেয় মালয়েশিয়া সরকার। এরপর দুই দফায় আরও ৭৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি যুক্ত করে মালয়েশিয়া সরকার। এখন বাংলাদেশের মোট ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার।
Get the latest Zoom Bangla News first — Follow us on Google News, Twitter, Facebook, Telegram and subscribe to our YouTube channel.