জুমবাংলা ডেস্ক : ১০০ শয্যার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসকসহ চারজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এক রোগীর স্বজনের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার পর জরুরি সভা করে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্ৰেপ্তারের দাবিতে হাকপালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা।
তবে জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা চালু রয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পরেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেকেই চলে যাচ্ছেন আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন শারমিন নামের এক রোগী। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ওই রোগীর স্বজন পরিচয় দিয়ে রায়হান পাহাড় নামের এক তরুণ রোগীর ফাইল আনতে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় নার্সদের কক্ষে যান। সেখানে দায়িত্বে থাকা নার্স নাসিমা আক্তার চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে রোগীর ফাইল নিতে বলেন। তখন রায়হান ৪-৫ জন সহযোগী নিয়ে ওই নার্সের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। এক পর্যায়ে তাকে মারতে উদ্ধত হন। তখন হাসপাতালের অন্য কর্মিরা প্রতিবাদ করেন। ওই ঘটনার অন্তত ১৫ মিনিট পর রায়হান বেশ কিছু লোকজন নিয়ে হাসপাতালের কর্মিদের ওপর হামলা চালান।
তখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ব্রাদার আবু হানিফ, পরিচ্ছন্নতাকর্মি দুলাল ঢালী, বাবুর্চি খালেদ সিকদার,অফিস সহকারী জোবায়ের হোসেনকে মারধর করা হয়। এমন পরিস্থিতি দেখে ওই স্থানে যান তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান। হামলাকারীরা তাকেও লাঞ্ছিত করে সরিয়ে দেন। ওই হামলার ঘটনার সময় হাসপাতাল জুরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।
ঘটনার প্রতিবাদে সকাল পৌনে ১১টা হতে চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের কর্মিরা সেবা প্রদান বন্ধ করে দিয়েছেন। তখন জরুরি বিভাগের সেবা দেয়ার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। দুপুর ১টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগের সকল সেবা বন্ধ থাকে। সেবা বন্ধ থাকায় অনেকে রোগী নিয়ে বিপাকে পরেন। অনেকে রোগীদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ঢাকায় নিয়ে যান। নিরাপত্তা ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জরুরি বিভাগের সেবা ছাড়া হাসপাতালের সকল সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স নাসিমা আক্তার বলেন, মেডিসিন বিভাগের এক রোগীর স্বজন পরিচয় দিয়ে রোগীর ফাইল নিতে আসেন এক তরুণ। তাকে শুধু বলেছি এভাবে কোনো রোগীর ফাইল আমরা দিতে পারি না। ওই ফাইল রোগীর চিকিৎসা ফলোয়াপে রাখার জন্য সার্বক্ষণিক নার্সদের কাছে থাকে। কারো বিশেষ প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে নিতে হয়। আমি ওই ব্যক্তিকে চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে ফাইল নিতে বলেছিলাম। তখন তিনি আমরা ওপর চরাও হন, আমাকে অপদস্থ করেন।
হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মি দুলাল ঢালী বলেন, আমরা হাসপাতালের প্রথম ফ্লোরে কাজ করছিলাম। এর মধ্যেই রায়হান পাহাড়ের সঙ্গে কয়েকজন লোক এসে জরুরি বিভাগে ও ফার্মেসিতে প্রবেশ করে আমাদের মারধর করেন। এর আগেও ওই রায়হানের বাড়ির লোকজন হাসপাতালে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছিল। এখন ওদের ভয়ে আমরা কাজও করতে পারছি না। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো কাজ করব না।
রায়হানের বাড়ি শরীয়তপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালুচরা এলাকায়। যার দূরত্ব হাসপাতাল ক্যাম্পাস হতে ১ কিলোমিটার। ঘটনার পর সে আত্মগোপনে চলে গেছে। তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার স্বজনরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, প্রায়ই চিকিৎসকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে। আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও হামলাকারীদের গ্ৰেপ্তার না করা পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান বলেন, যারা হামলা চালিয়েছেন তাদের মধ্যে রায়হান নামের একজনকে চিনতে পেরেছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অন্যদের শনাক্ত করা হবে। এ হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালের সকল সেবা বন্ধ থাকবে। শুধু জরুরি বিভাগের সেবা চালু থাকবে।
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দীহ আহমেদ বলেন, হাসপাতালের কর্মিদের ওপর হামলা তথ্য পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। ততক্ষণে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তাদের আটক করতে অভিযান চালানো হবে। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মি ও রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।