জুমবাংলা ডেস্ক : মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষক পদ শূন্য। এমন পরিস্থিতিতেই অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে। শিক্ষক সংকট নিয়েই বাস্তবায়ন হওয়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাশাপাশি আগামী বছর অষ্টম ও নবমের ক্লাস নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নিতে হবে। তাই প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক পদে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বলছে, জানুয়ারিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরুর আগে নতুন শিক্ষক নিয়োগের উপায় নেই।
এর আগে বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৬০ হাজারের বেশি শিক্ষক পদ শূন্য রেখেই ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়।
এনটিআরসিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সর্বশেষ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। চতুর্থ ধাপে শিক্ষক যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, ৬৮ হাজার পদ শূন্য। এমপিওপ্রাপ্য এসব এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ করতে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনটিআরসিএ। কিন্তু মাত্র সাড়ে ৩২ হাজার পদে প্রার্থী নির্বাচন করা যায়। যেখান থেকে মাত্র ২৭ হাজার নতুন শিক্ষককে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষাংশে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়। যাদের কেউ যোগ দিচ্ছেন, কেউ দিচ্ছেন না। নতুন শিক্ষকরা সবাই যোগদান করলেও ৪১ হাজারের বেশি শিক্ষক পদ শূন্যই থাকছে। এসবের সঙ্গে যোগ হবে ২০২২ এর অক্টোবর থেকে ২০২৩ এর অক্টোবর পর্যন্ত গত এক বছরে অবসরজনিত কারণে শুন্য হওয়া শিক্ষক পদ। এ হিসাবে ৩৫ হাজার এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্ধলক্ষাধিক পদ এখনও শূন্য।
এনটিআরসিএর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মতে, স্কুল ও মাদরাসায় ভৌতবিজ্ঞান, আইসিটি, জীববিজ্ঞান, চারুকলা বিষয়ের শিক্ষক পদ এ মুহূর্তে বেশি খালি। দাখিল মাদরাসায় সহকারী মৌলভীর পদ ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড ইন্সট্রাক্টরের পদ বেশি খালি।
প্রধান শিক্ষকরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের অনেকটা সময় সম্পৃক্ত থাকতে হচ্ছে। তাই শিক্ষক সংকট নিয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ছিলো অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তা কোনোভাবে পার করা গেলেও আসছে বছর চারটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন আরো অধিকতর চ্যালেঞ্জের হবে।
নতুন নিয়োগের পরও শিক্ষক সংকট নিয়ে জানতে চাইলে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা এনটিআরসিএর শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান শাখার একজন কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে এমপিওভুক্ত ৪১ হাজারের বেশি পদ শূন্য থেকে যাওয়ার কারণ যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া। বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের পূর্ব শর্ত শিক্ষক নিবন্ধন। ইতোমধ্যে যারা নিবন্ধিত আছেন তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। নিবন্ধিত কিছু প্রার্থী বেকার আছেন যাদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি হয়ে গেছে। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী তারা আর শিক্ষক হওয়ার যোগ্য নন। নতুন করে প্রার্থী নিবন্ধনের আগে নতুন শিক্ষক নিয়োগও সম্ভব নয়।
এদিকে এনটিআরসিএর পরীক্ষা শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন প্রার্থী নিবন্ধনে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভা চলছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষে বা আগামী বছর জানুয়ারির শুরুতে এ নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হতে পারে।
অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষক পদ শূন্য রেখে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও শিক্ষক সংকট কাটানোর প্রস্তুতি ও কৌশল সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়েছিলো শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছে। দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে গত ২৯ অক্টোবর এ বিষয়ে মৌখিকভাবে জানতে চাওয়া হলে মন্ত্রী প্রশ্নটি লিখিতভাবে পাঠানোর পরামর্শ দেন। দ্বিতীয় দফার চেষ্টায় গত ৮ নভেম্বর রাতে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে প্রশ্ন উপস্থাপন করা সম্ভব হলেও গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত কোনো উত্তর মেলেনি। ইউনেস্কো সদর দপ্তরে একটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে তিনি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয় সূত্র।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।