জুমবাংলা ডেস্ক : দিনকে দিন কমে আসছে গ্যাসের রিজার্ভ। যে হারে গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না জোগান। চাহিদা ও যোগানের এমন অসামঞ্জস্যে বর্তমান রিজার্ভে ঠিক কতদিন চলবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
বিগত কয়েক বছর গ্যাস সংকট নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে ২৯টি গ্যাসক্ষেত্র থাকলেও, উত্তোলন হয় ২০টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে
পেট্রোবাংলার সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশের ২৯টি গ্যাসক্ষেত্রে মোট প্রমাণিক রিজার্ভের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৭৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। যার মধ্যে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ২০ দশমিক ৩৩ টিসিএফ গ্যাস উৎপাদন করা হয়েছে। সে হিসাবে বর্তমানে দেশে গ্যাসের রিজার্ভের পরিমাণ ৮ দশমিক ৪৬ টিসিএফ।
যে হারে গ্যাসের রিজার্ভ দিনকে দিন কমছে, আর চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছে; তাতে আগামী ৬ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করতে হবে।
ডেনমার্কের এনার্জি কনসালটেন্সি গ্রুপ রামবোলের বাংলাদেশের ওপর করা গ্যাস সেক্টর মাস্টার প্ল্যান-২০১৭ এর হিসাবে বলা হয়েছে, তৎকালীন সময়ে প্রতিদিন দেশে গ্যাসের চাহিদা ছিল ৩ হাজার ৭৩৬ মিলিয়ন ঘনফুট যা ২০৪১ সালের মধ্যে বেড়ে হবে ৮ হাজার ৩৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট। এ কয় বছরের মধ্যে গ্যাসের চাহিদা এত বাড়লেও যোগানের ক্ষেত্রে থেকে যাবে বড় রকমের ঘাটতি।
রামবোলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের গ্যাসের চাহিদা বেড়ে হবে দৈনিক ৫ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। কিন্তু সে তুলনায় যোগান থাকবে ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের কম। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর থেকেই প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকবে।
পরবর্তী বছরগুলোতে এ পরিসংখ্যান আরও খারাপ বার্তা দেয়। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক সাড়ে ৫ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট হলেও, আদতে গ্যাসের সরবরাহ থাকবে ১ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। ২০২৯-৩০ অর্থবছরে হিসাব থেকে দেখা যায়, সে সময়ে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা থাকবে ৬ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। অথচ গ্যাস সরবরাহ হবে ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো।
এ বিপুল পরিমাণ ঘাটতি মেটাতে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের কোনো বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিজার্ভে যে পরিমাণ গ্যাস আছে তা দিয়ে পাঁচ-সাত বছরের বেশি চলা যাবে না।
এ ব্যাপারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেন, পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী যে ৮ টিসিএফ গ্যাস রিজার্ভে আছে ; সেখানে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির (আইওসি) আওতায় আছে ১ টিসিএফ। বাকি ৭ টিসিএফ গ্যাস পেট্রোবাংলার নিজস্ব রিজার্ভে আছে। খেয়াল করলে দেখা যায়, মাত্র ১ টিসিএফ রিজার্ভ থাকার পরও আইওসি প্রতিদিন ১ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে, অন্যদিকে ৭ টিসিএফ গ্যাস নিয়েও পেট্রোবাংলা সাতটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে।
ম তামিম আরও বলেন, পেট্রোবাংলার মজুতে যে পরিমাণে গ্যাস আছে তা উত্তোলন জোরদার করতে পারলে সামনে সংকটের সময়ে এখান থেকে ভালো পরিমাণে গ্যাসের যোগান দেয়া সম্ভব। এছাড়া সামনে গ্যাসকূপ খনন করে যদি নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যায়, তাহলে সেটি বাংলাদেশের জন্য বাড়তি সুবিধা যোগ করবে।
পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, ১৯১০ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৯৭টি গ্যাসকূপ খনন করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি গ্যাসক্ষেত্র ও ২টি খনিজ তেলের খনি আবিষ্কার হয়েছে। কূপ খননের সাফল্য হিসাব করলে বর্তমানে গ্যাস পাওয়ার সাফল্যের অনুপাত ৩ দশমিক ৪ অনুপাত ১। সুতরাং বড় রকমের খনন কার্য চালালে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব নূরুল আলম বলেন, বর্তমানে দেশে যে পরিমাণে গ্যাসের রিজার্ভ আছে তা দিয়ে আসলে এক দশকের বেশি সময় চলবে না। এ অবস্থায় আগামী বছর থেকে ১০০টি গ্যাসকূপ খননের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গ্যাসের নতুন উৎস পাওয়া গেলে তা দেশের গ্যাস রিজার্ভের আশার আলো সঞ্চারণ করবে।
আদৌ গ্যাস পাওয়া যাবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি সচিব বলেন, ‘আমি একজন আশাবাদী মানুষ। এমনও হয়েছে শেষবার গ্যাস খুঁজতে গিয়ে খনিজ তেলের দেখা মিলেছে। সুতরাং নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। ১০০ গ্যাসক্ষেত্র খনন করলে কয়েকটি জায়গায় গ্যাস পাওয়া যাবে এমন আশা করাই যায়।’
দেশে গ্যাসের ব্যবহার নিয়ে সবশেষ বার্ষিক রিপোর্ট-২০২২ এ পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, দেশে সবচেয়ে বেশি গ্যাস ব্যবহৃত হয় এনার্জি খাতে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ১ হাজার ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। এ বিপুল পরিমাণ বিক্রি হওয়া গ্যাসের ৪০ শতাংশের ভোক্তা দেশের এনার্জি খাত। এনার্জি খাতের পর সবচেয়ে বেশি গ্যাস ব্যবহৃত হয় শিল্পখাতে, যা মোট বিক্রির ১৯ শতাংশ।
সাধ্যমতো সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
দেশে গ্যাস ব্যবহারের পরিসংখ্যান দেখলে সহজেই অনুমেয়, রিজার্ভ শেষ হয়ে গেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে বিদ্যুৎখাত এবং শিল্পখাত। এছাড়া সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে দেশের কৃষি এক রকমের ধ্বংসের মুখে পড়বে। এখন থেকে বিকল্প খুঁজে বের করতে না পারলে গ্যাসের অভাবে গোটা দেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র : সময় সংবাদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।