১৮৮৬ সালে কীভাবে আবিষ্কার হয়েছিল কোকা-কোলা

Coca-Cola

লাইফস্টাইল ডেস্ক : মার্কিন ফার্মাসিস্ট জন পেম্বারটন। তাঁর স্বপ্ন ছিল মানুষের জন্য নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কার করা। এ লক্ষ্যে তিনি একটা লাইসেন্সও নিয়ে নিয়ে নেন। বেশ ভালোই এগুচ্ছিল পেম্বরটনের কাজ।

Coca-Cola

কিন্তু সেই সময় দাসপ্রথা নিয়ে পুরো যুক্তরাষ্ট্র উত্তাল হয়ে উঠেছিল। তার ফল গড়িয়েছিল গৃহযুদ্ধে। সেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন পেম্বরটনও।

যুদ্ধ কখনো ভালো কিছু বয়ে আনে না—এ কথাটা পেম্বারটনের জীবনেও সত্যি হয়ে উঠেছিল।

যুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। তখনো শক্তিশালী কোনো অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হয়নি। যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে তাই মরফিয়া নিতে শুরু করেন। বাঁচবেন এ আশাও ছিল না।

মরফিয়া গ্রহণ করে আসলে মৃত্যুর আগে যন্ত্রণাটাই কমাতে চেয়েছিলে পেম্বারটন।

আঘাত থেকে একসময় সেরে ওঠেন পেম্বরটন। কিন্তু ততদিনে পেয়ে বসেছে মরফিয়ার ভয়ংকর নেশা। পেম্বারটন নিজে ফার্মাসিস্ট, চিকিৎসাটাও ভালোই জানতেন। তাই জানতেন মরফিয়ার আসক্তি কতটা ভয়ানক হতে যাচ্ছে তাঁর জন্যে।

মরফিয়া তখন অত্যন্ত দামি বস্তু। এই নেশা চালিয়ে গেলে আর্থিক এবং শারিরিক—দুদিক থেকেই ভয়ংকর পরণতি ডেকে আনবে। তাই আসক্তি থেকে বাঁচার উপায়ও খোঁজেন তিনি।

একটা উপায় অবশ্য পেয়ে যান। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা যাকে বলে। কোকা নামের এক ধরনের গাছের পাতার বিশেষ গুণ আছে। এটা মরফিয়ার নেশা কাটাতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু কোকা থেকেই আরেক ভয়ংকর মাদক কোকেন তৈরি হয়। তাই পেম্বারটন খুব স্বল্প পরিমাণ কোকার পাতা নিয়ে চিবোতেন নিয়ম করে। এতেও অবশ্য তাঁর নেশা হতো। সেটা খুব সামান্য। কিন্তু কোকার পাতা ভীষণ তেতো। তাই একে কী করে সুস্বাদু করা যায় ভাবতে লাগলেন পেম্বাররটন। নিজে যেহেতু ফার্মাস্টিস্ট, তাই বিভিন্ন রকম উপদান মিশিয়ে চেষ্টা চালিয়ে গেলেন। এভাবেই একদিন কোকার সিরাপে ‘কোলা’ নামের এক ধরনের বাদামের গুড়ো মিশিয়ে দিলেন। তৈরি হলো ধরনের এক সিরাপ। সেটা খেতে বেশ ভালোই লাগল পেম্বারটনের।

পরদিন আরেকটা ভূত মাথায় চাপল তাঁর। পরদিন তাঁর মনে হলো, কোকা আর কোলার সিরাপে খাবার সোডা মেশালে কেমন হয়! সেটাই করলেন। নতুন এই মিশ্রণে চুমুক দিয়েই বুঝলেন এই তরলের ভবিষ্যৎ। সেটাই ছিল কোকাকোলার জন্যর ইউরেকা মোমেন্ট।

পরদিন এক বন্ধুর কাছে নিয়ে গেলেন সেই মিশ্রণটি। বন্ধুটি ছিলেন ওষুধের দোকানদার। নাম উইলিস ভেনাবল। তাঁকে খেতে দিলেন সেই পানীয়। সেটাতে চুমুক দিয়ে ইউলিস আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন। সেদিনই ঠিক হয়ে গেল এই পানীয়ের ইতিহাস। দুই বন্ধু মিলে এটাকে বাজারজাত করার কথা ভাবলেন। তবে স্রেফ ব্রেন টনিক হিসেবে।
ব্রেন টনিক কেন?

আগেই বলেছি, এটা খেয়ে কেমন ফুরফুরে হয়ে উঠেছিলেন দুবন্ধু। সঙ্গে আরও খেয়াল করলেন মানসিক অবসাদ দূর করে মনকে চাঙা করে করে তুলতে পারে এই মিশ্রণ। কয়েক দিনের মধ্যেই সেটা বাজারজাতের উপযোগী করে ফেললেন পেম্বারটন।

‘বিগ বস’ তারকা আব্দুর রেজিকের বিয়ে স্থগিত

কিন্তু শুধু দোকানে রাখলেই তো আর বিক্রি হবে না। মানুষকে তো জানাতে হবে। এজন্য দরকার বিজ্ঞাপনের। আর বিজ্ঞাপন দিতে গেলে তো এর একটা নামও দেওয়ার দরকার। যে বিজ্ঞাপন কোম্পানির মাধ্যমে বিজ্ঞাপন করাতে চেয়েছিলেন, সেই কোম্পানির মালিক ম্যাসন রবিনসন পানীয়টির নাম দেন ‘কোকা-কোলা’। এভাবে ইতিহাসের সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোমল পানীয় কোকা-কোলার জন্ম হয়। যদিও এর মিশ্রণ আর উদপাদনের ফর্মুলা আজও কোম্পানির গোটা পাঁচেক লোক ছাড়া আর কেউ জানেন না।

সূত্র: ব্রিটানিকা