বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ১৯৯৬ সালে হুমায়ুন আহমেদের একটা নাটক প্রচারিত হতো বিটিভিতে। ‘আজ রবিবার’ নাম। নাটকটা সে সময় খুব বিখ্যাত হয়। এই নাটকে দাদাজান ছিলেন, আর ছিলেন তার দুই নাতনি তিতলি আর কংকা।
দাদাজান নাতনি তিতলিকে একদিন জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবীর ওজন কত? আসলে দাদাজান জানতে চেয়েছিলেন পৃথিবীর ভর কত। ভর আর ওজনের মধ্যে পার্থক্য আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ ভর বলে না, ভরকেই ওজন বলে। এখানেও আমরা ওজন বলতে ভরকেই বোঝাব।
তিতলি বুদ্ধিমতি, দাদাজানের প্রশ্নের চটপট উত্তর দেয় সে। বলে পৃথিবীর ওজন ৫.৯৭২২ × ১০২৪ কেজি। ৫৯,৭২, ০০, ০০,০০,০০,০০,০০, ০০,০০,০০, ০০০ কেজি।
বিশাল বড় সংখ্যা।
দাদা উত্তর শোনার পর বলেন, ‘আশ্চর্য, এত বড় দাঁড়িপাল্লা পেল কোথায়?’
দাদার প্রশ্ন অযৌক্তিক নয়। পৃথিবীর আকার এত বিশাল, এর ওজন (ভর) মাপতে হলে যে দাঁড়িপাল্লা দরকার সেটা বিজ্ঞানীরা কোথায় পেয়েছিলেন?
পৃথিবীর আয়তন মাপার জন্য যেমন ফিতার দরকার হয়নি বিজ্ঞানীদের, তেমনি ওজন মাপার জন্য দাঁড়িপাল্লারও প্রয়োজন হয়নি। পুরোটাই হিসাব করেছিলেন গাণিতিক পদ্ধতিতে। আর সেই গণিতিক পদ্ধিতিও কিন্তু সঠিক।
আপনি অবশ্য বলতেই পরেন, এই পদ্ধতি যে সঠিক, তার প্রমাণ বিজ্ঞানীরা পেলেন কীভাবে?
সহজ ব্যাপার।
যে পদ্ধতি পৃথিবীর ওজন বের করা হয়েছে, সেই পদ্ধতিতে একটা পাথরের ওজন বের করে দেখুন। তারপর সেই পাথরটাকে আবার বার দাড়িপাল্লায় মেপে দেখতে পারেন। দুটো পদ্ধিতেই যদি একই মান বেরিয়ে আসে তাহলে বুঝবেন উত্তর পদ্ধতিটা সঠিক। তারপরেও মনের ভেতর খচখচ করে, তাহলে একাধিক ছোট ছোট পাথর নিয়ে পাথরের ওজন এভাবে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
যাইহোক, এখন আমরা দেখি, ঠিক কী কোন্ হিসাব থেকে পৃথবীর ভর বের করা হয়।
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রের কথা নিশ্চয়ই জানো। কোনো বস্তুর ওপর বস্তুর পৃথিবীর যে আকর্ষণ বল কাজ করে সেটাকেই বলে মহাকর্ষ বল। বস্তুর ওপর পৃথিবীর ওপর মহকর্ষ বল ঠিক কতটা শক্তিশালী, সেটা জানা যায় নিউটনের সূত্র থেকে। এই সূত্র বলে বস্তুর সঙ্গে দূরত্ব যত বেশি হবে, মহাকর্ষ বল তত কম শক্তিশালী। বস্তুটির ভর যত বেশি হবে মহাকর্ষ বল তত শক্তিশালী হবে।
সূত্রটা এমন দাঁড়ায়, বস্তুর ভর আর পৃথিবীর ভর আর আর মহাকর্ষ ধ্রুবক গুণ করতে হবে। সেই গুণফলকে আবার ভাগ করতে হবে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে বস্তুটির কেন্দ্র পর্যন্ত দূরত্ব দিয়ে। তারপর সেই ভাগফলকে আবার একই দূরত্ব দিয়ে ভাগ করতে হবে। তাহলে মহাকর্ষ বলের মান আমরা পেয়ে যাব।
এখন ধরা যাক, আমরা পৃথিবীর ভর জানি না। কিন্তু বস্তুটার ভর জানি। আবার এ-ও জানি ওই বস্তুটাকে ওপর থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে কী বেগে নামবে। বস্তু যত পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে, তত এর মহাকর্ষীয় বল শক্তিশালী হবে, বস্তু তত দ্রুত এগিয়ে আসবে। অর্থাৎ পড়ন্তু বস্তুটা যত নিচে নামবে এর বেগ বাড়তে থাকবে তত। বেগ বৃদ্ধির এই হারকে বলে ত্বরণ। মহাকর্ষ বলের কারণে বেগ বাড়ে বলে, এই ত্বরণকে বলে মহাকর্ষীয় ত্বরণ।
মহাকর্ষীয় ত্বরণের মানও আবার সব জায়গায় সমান নয়। পৃথিবী থেকে যত উচুঁতে থাকবে বস্তুটা, ত্বরণ তত কম হবে। তবে একই উচ্চাতায় সব বস্তুর ক্ষেত্রে মহাকর্ষীয় ত্বরণের মান সমান।
অর্থাৎ বস্তু ভারী হোক কিংবা হালকা, নির্দিষ্ট উচ্চতায় মহাকর্ষীয় তরণের মান সব বস্তুর জন্য সমান। একটা বড় ভারী পাথর তাই যে ত্বরণে পৃথিবীতে পড়ে, একটা হালকা টেনিস বলও সেই ত্বরণেই পৃথিবী পড়বে। তবে মনে রাখতে হবে, এই ব্যাপারটা ঘটে বাতাসের বাধা না থাকলে।
ভূ-পৃষ্ঠে মহাকর্ষীয় ত্বরণের মান 9.8 ms-2। সেটা সব বস্তুর জন্যই। পৃথিবীর ভর বের করতে গেলে এই মানটা লাগবেই। অন্যদিকে দূরত্বের জায়গায় দরকার হবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ। বস্তুটার ভর দরকার হবে না। কারণ, সমীকরণের দুদিকেই বন্তুর ভর পাওয়া যায়। তাই দুদিক থেকে দুটো কাটাকাটি হয়ে যায়।
সবশেষে সূত্রটার চেহারা দাঁড়ায়—M=gR2/G.
এখানে M হলো পৃথিবীর ভর, g ভূপৃষ্ঠে মহাকর্ষীয় ত্বরণ, R হলো পৃথিবীর ব্যসার্ধ আর G হলো মহাকর্ষীয় ধ্রুবক। ধ্রুবক মানে হলো, যার কোনো পরিবর্তন হয় না। হিসাব মেলানোর জন্য এটা ব্যবহার করা হয়।
এই সূত্রে ডান দিকে সবগুলো মান বসালেই পাওয়া যাবে পৃথিবীর ভর। এভাবেই প্রথমে পৃথিবীর ভর—ভুল করে আমরা যেটাকে বলি ওজন— সেটা পরিমাপ করা হয়েছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।