জুমবাংলা ডেস্ক : গাইবান্ধায় বিয়ে করা স্ত্রীকে ২০ দফা লিখিত শর্ত দিয়েছেন স্বামী ফিরোজ মিয়া। এসব ২০ শর্ত মানলে স্ত্রীকে নিয়ে ঘর করবেন বলে জানান তিনি।
আজব এই ঘটনা মানতে রাজি নয় স্ত্রী ও তার বাপের বাড়ির লোকজন।
তাই শর্ত না মেনে স্বামীর সংসার করার দাবি আদায় করতে গাইবান্ধার আদালতের আসেন সন্তানসহ স্ত্রী জেমি আকতার।
জানা যায়, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন। তার মেয়ে জেমি আকতারের সঙ্গে ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল বিয়ে হয় পাশের গ্রামের ফিরোজ মিয়ার।
বিয়ের পর তাদের ঘরে একটি ফুটফুটে সন্তানের জন্ম হয়। পুত্র সন্তান জন্ম হওয়ার পর থেকে তাদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। জেমিকে তার ননদ ও শাশুড়িরা সন্দেহ করতে থাকে। সন্দেহের প্রভাব পড়ে ফিরোজের ওপর।
তারপর শুরু হয় মানসিক দ্বন্দ্ব। কথায় কথায় স্ত্রীকে মারধর করা, তারপর তাকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা ও ফোন কেড়ে নেওয়া হয় তার হাত থেকে। এভাবে তার ওপর চলে মানসিক নির্যাতন।
এসবের প্রতিবাদ করলে জেমি আকতারের ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এসব ঘটনার কথা জেমি তার বাবা ও মায়ের কাছে জানালে তারা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে। সালিশও বসে কয়েকবার।
কিন্তু সমাধানের কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত স্বামী ফিরোজ স্ত্রীর ওপর ২০টি শর্ত জুড়ে দেন।
শর্তে বলা হয়- স্বামীর দুলাভাইকে অভিভাবক হিসেবে মানতে হবে, মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না, শ্বশুর-শাশুড়ির অনুমতি ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না, সংসারের যাবতীয় কাজ স্ত্রী জেমিকে করতে হবে, রান্না করে শাশুড়িকে টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিতে হবে। এরকম ২০টি শর্ত দিতে হবে। এসব শর্ত না মানলে কোনো দুর্ঘটনার জন্য জেমি নিজেই দায়ী থাকবেন বলে জানান তারা।
স্ত্রী জেমি আখতার বলেন, সংসার করতে রাজি কিন্তু শর্ত বাদ দিয়ে। এছাড়া এ বিষয়ে নিজেদের পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ, না হলে এমন শর্ত একজন নারীর জন্য অসম্মানজনক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।
এদিকে স্বামী ফিরোজের শর্তের প্রতিবাদ জানাতে জেমি স্বজনদের নিয়ে গাইবান্ধায় আদালতে মামলা করতে আসেন স্বামীর বিরুদ্ধে।
জেমির বাবা জয়নাল আবেদিন বলেন, এতও শর্ত দিলে কী আর সংসার করা যায়? সংসার তো নিজেদের বিষয়। কিন্তু আমার মেয়েটাকে শর্ত জুড়ে দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। আমরা এই অমানবিক ঘটনার জন্য জামাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে এসেছি গাইবান্ধায়।
স্ত্রী জেমি আকতার বাদী হয়ে গাইবান্ধার নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্বামীর ফিরোজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন আদালতে।
আইনজীবী নিলুফার ইয়াসমীন শিল্পি বলেন, অমানবিক এই ২০টি শর্ত জুড়ে দিয়ে একজন নারীর সংসার জীবন চলতে পারে না। তাছাড়া এ ধরনের শর্ত দিয়ে সংসারও হয় না। আমরা চাই নারীর মর্যাদা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে জেমি আকতারের প্রতি সদয় হতে হবে। তার দাবির প্রতি সমর্থন ও আইনের প্রতি সমর্থন থাকতে হবে।
গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, শর্ত দিয়ে সংসার করার ঘোষণা দেওয়া নারীর প্রতি অবমাননা করা। অসম্মানজনক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে শর্ত দেওয়া স্বামীকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।