জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর রায়েরবাগ এলাকার বাসিন্দা ও ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈমুল হাসান (ছদ্মনাম)। স্থানীয় একটি স্কুল থেকে অসাধারণ রেজাল্ট পেয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাজীবনের নবীনবরণের দিনই নাঈমসহ অন্তত ১৫ শিক্ষার্থীকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়েছে। নাঈম মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। বর্তমানে বাসায় বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের এমন রক্তাক্তের নেপথ্যে পার্শ্ববর্তী কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় ঢাকা কলেজ ও ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। যার মধ্যে বেশিরভাগই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী।
ঘটনার বিষয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আইডিয়াল কলেজের একদল শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজের ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করে হামলা চালায়। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আইডিয়াল কলেজের হামলা চালিয়ে প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড খুলে নিয়ে যায়।
রাজধানীর ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত সায়েন্সল্যাব ও নিউ মার্কেট এলাকায় থাকা দেশের শিক্ষাঙ্গণের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ ও ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের অবস্থান। যদিও তিনটি কলেজ ডিএমপি তিন থানা এলাকায়। এরপরও নানা কারণে তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। চলতি বছরে অন্তত তিনবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনায় উভয় কলেজের শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন। পাশাপাশি সংঘর্ষের মধ্যে পড়া যানবাহনও ভাঙচুর করা হয়েছে।
বার্তা২৪.কমের দীর্ঘ অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সায়েন্সল্যাব এলাকায় তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের নেপথ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে মেয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে প্রেম। যদিও ঢাকা কলেজে কোনো মেয়ে শিক্ষার্থী নেই।
বুধবারের সংঘর্ষও একই কারণে। যদিও শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের নবীনবরণে অনুষ্ঠানে কথা কাটাকাটির দাবি করলেও এই ঘটনার নেপথ্যে আইডিয়ালের এক মেয়ে শিক্ষার্থী।
নাঈমের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তার মা নাসরিন (ছদ্মনাম) বলেন, আগামীকাল আবারও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। মাথায় প্রচণ্ড আঘাতের কারণে তার শারীরিক অবস্থা ভালো না।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সরকার পতন হলো। সেই শিক্ষার্থীরা যদি এখন নিজেরাই মারামারি করে তাহলে বিষয়টা কেমন দেখায় না! একটা মেয়ের কারণে এতোগুলো ছেলেকে হাসপাতালে যেতে হলো।
ডিএমপির রমনা বিভাগের দায়িত্ব পালন করা একাধিক কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। টানা কয়েক বছর ধরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে চলেছে। মূলত এই সকল শিক্ষার্থী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের বাইরে ধানমন্ডি লেক ও চায়ের দোকানের আড্ডায় গিয়ে নানা দ্বন্দ্বে জড়ায়। এরপর এসকল ঘটনার সূত্র ধরে এক কলেজ আরেক কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এছাড়াও এই তিন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে একই সঙ্গে কোচিং করে। সেখানেও তারা দ্বন্দ্বে জড়ায়। ফলে তারা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের নাম জড়াচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলছেন, প্রতিবার সংঘর্ষের পর শিক্ষকদের নিয়ে সামাধান করা হলেও শিক্ষার্থীরা একই কাজ বারবার করছে। ফলে বছর বছর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেই চলেছে।
বুধবারে সংঘর্ষের ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) রমনা বিভাগের নিউ মার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তারিক লতিফ বলেন, এই ঘটনার পরে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে। পাশাপাশি ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের আশেপাশে নিরাপত্তা ও টহল জোরদার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ধানমন্ডি লেকসহ কলেজের আশেপাশে কোনো শিক্ষার্থী যেন এদিক সেদিক ঘোরাফেরা না করতে পারে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষকদের অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ধানমন্ডি লেকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাদের বিষয়টা বলা হয়েছে কলেজের পোশাক পরিহিত অবস্থায় ক্লাস টাইমে কোনো শিক্ষার্থী অবস্থান করতে না পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।