ধর্ম ডেস্ক : চুল-দাড়িতে কলপ, খেজাব বা মেহেদি অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। ইদানীং বার্ধক্যজনিত কারণ ছাড়াও অপরিণত বয়সে অনেক যুবকের মাথার চুল পেকে যায়। তা ছাড়া সাদা দাড়িওয়ালা অনেকে দাড়ি ও চুলে খেজাব বা মেহেদি ব্যবহার করেন।
পাকা চুল-দাড়ি সাদা না রেখে মেহেদি দিয়ে রাঙিয়ে রাখতে রাসুল (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তাতে কালো কলপ ব্যবহার করা বৈধ নয়।
হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মক্কা বিজয়ের দিনে আবু কুহাফাকে আনা হলো। তখন তার চুল-দাড়ি ছিল ‘ষাগামা’ ফুলের মতো সাদা। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘এটিকে কোনো কিছু দ্বারা পরিবর্তন করো। তবে কালো থেকে বিরত থাকো।’ (সহিহ মুসলিম : ৫৪৬৬, মিশকাত ৪৪২৪ নং)
এ হাদিসে কালো ছাড়া মেহেদি রঙ বা অন্য খেজাব ব্যবহারের উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং কালো খেজাব ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
আর সবার উদ্দেশ্যে সাধারণ নির্দেশ দিয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, শেষ যুগে এমন এক শ্রেণির লোক হবে, যার পায়রার ছাতির মতো কালো কলপ ব্যবহার করবে, তারা জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। (আবু দাউদ ৪২১২, নাসাই, সহিহুল জামে ৮১৫৩ নং)
হজরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কিছু আনসার সাহাবাদের উদ্দেশে বলেন, সাদা দাঁড়ি চুলগুলো লাল অথবা হলুদ রঙ দ্বারা পরিবর্তন করো এবং আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করো। (আহমাদ ২২৩৩৭)
এসব হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, চুল বা দাঁড়িতে কালো রঙ করা যাবে না। তবে অন্য যে কোনো রঙ করা যাবে। অর্থাৎ কালো বাদে অন্য যে কোনো রঙ করা যাবে এবং সেটি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। কেননা নারীদেরও তো চুল সাদা হতে পারে।
মৌলিকভাবে চুলে রং করাতে কোনো সমস্যা নেই; এবং শরীয়তে এর অনুমতি রয়েছে।
তাই বৃদ্ধ বয়সে যারা চুল রাঙিয়ে নিতে চান, তারা তিনটি শর্তসাপেক্ষে নিঃসন্দেহে তা করতে পারেন।
প্রথমত: চুল রং করার ক্ষেত্রে কালো রং তথা কলপ ব্যবহার করা যাবে না; কারণ এর দ্বারা পাকাচুল পুরোপুরি আবৃত হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত: চুলে রং করতে গিয়ে কোনো কাফির-মুশরিকের স্টাইল ধারণ করা যাবে না।
তৃতীয়ত: যে রং চুলে লাগানো হচ্ছে, তার মধ্যে যদি কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক না থাকে।
তদ্রূপ নারীদের জন্যও কালো রং ছাড়া অন্য যে কোনো রং দ্বারা পাকা চুল রাঙিয়ে নেওয়া জায়েজ আছে। পাকা চুল রং করার ক্ষেত্রে কালো রং পরিহার করার ব্যাপারে একাধিক হাদিস বর্ণিত আছে।
তবে অসুস্থতা, চুলের যত্ন না নেয়া, কোনো ওষুধ ব্যবহারের কারণে বা অন্য কোনো কারণে অপরিণত বয়সেই যে যুবকের চুল-দাড়ি সাদা হয়ে গেছে, যেহেতু সে আসলে বৃদ্ধ নয়, এখানে বার্ধক্য গোপন করা হচ্ছে না; তাই সে কালো খেজাব ব্যবহার বৈধ বলেই অনেক আলেম মত দিয়েছেন। (ফায়জুল কাদির : ১/৩৩৬)।
ইসলামে সাজসজ্জার অংশ হিসেবে চুলে রং করা নিষিদ্ধ নয়। তবে রং এমন হতে হবে যা চুলের ওপর পৃথক কোনো প্রলেপ তৈরি করে না বরং চুলের সঙ্গে মিশে যায়। কারণ রং যদি চুলের ওপর প্রলেপ তৈরি করে, তাহলে চুলে পানি না পৌঁছার কারণে তার ওজু ও গোসল হবে না। ওজুর সময় মাথা মাসাহ করা ফরজ, গোসলের সময়ও পুরো শরীরসহ চুল ধোয়া ফরজ।
মেহেদির মতো যেসব রং চুলের ওপর পানির জন্য প্রতিবন্ধক আলাদা প্রলেপ তৈরি করে না, ওইসব রং চুলে লাগানো অবস্থায় গোসল ও ওজু শুদ্ধ হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।