জুমবাংলা ডেস্ক : এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে ২০০ থেকে ২০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সোনালী মুরগি ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৯৫ থেকে ৩১০ টাকা।
সেইসঙ্গে ফার্মের ডিম ডজনে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি করার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজার, শাহজাহানপুর, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, রামপুরা, মধ্য বাড্ডা কাঁচাবাজারসহ অন্যান্য বাজারে এ চিত্র পাওয়া যায়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তাছাড়া চাল, আটা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চিনিসহ বেশ কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যও বেড়েছে।
গত ৫ অগাস্ট রাতে সরকার তেলের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫ শতাংশ, পেট্রোলের দাম ৫১.১৬ শতাংশ এবং অকটেনের দাম ৫১.৬৮ শতাংশ বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়েছে, তাতে প্রায় সব ধরনের নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মুরগি ও ডিমের দাম। শান্তিনগর বাজারের ভাই ভাই ব্রয়লার হাউজের দোকানি ইমরান হোসেন জানালেন, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়, এখন দাম বেড়ে ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে।
গত সপ্তাহে সোনালী মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ কেজি বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়ে শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩১০ টাকায়।
এই ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা কাপ্তান বাজার থেকে পাইকারি দরে মুরগি আনি, সেখানেই দাম বেশ চড়া। মালের আমদানি (সরবরাহ) কম। তারা বলছেন- জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন জেলার খামার থেকে ঢাকায় গাড়ি আসতে ব্যয় বেড়েছে। হাঁস-মুরগির খাদ্যের দামও বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এসব কারণে দাম বেড়েছে, সামনের দিনে আরও বাড়তে পারে।”
এক সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম এত বেশি বেড়ে যাওয়ার জন্য জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিকেই মূল কারণ হিসেবে দেখালেন কাপ্তান বাজারের মুরগির পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স ওমর ফারুক ট্রেডার্সের মালিক ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, “আমাদের ব্যবসায় এখন আর কিছু থাকছে না। সব ধরনের মুরগি-ডিমের দাম বেড়েছে। খামারি পর্যায়ে উৎপাদনও কমেছে, আমাদের বিক্রিও অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। এর জন্য দায়ী মুরগির খাদ্যের দাম অত্যন্ত বেশি, ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বহু খামারি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।”
এই পাইকারি মুরগি বিক্রেতা বলেন, “এখন নতুন করে খরচ যুক্ত হয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। যেখানে একটি গাড়িতে খরচ ছিল পাঁচ হাজার টাকা, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেখানে আরও দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বাড়তি চাওয়া হচ্ছে। এতে করে আমাদের পক্ষে পোষানো সম্ভব হচ্ছে না।”
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চিনিসহ বেশ কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম আরেক দফা বেড়েছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির বৃহস্পতিবারের মূল্য তালিকাতেও সেই চিত্র এসেছে।
সরকারি হিসেবে গত সপ্তাহে সরু নাজির শাইল বিক্রি হয় ৬২ থেকে ৭৫ টাকা কেজি, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে হয়েছে ৬৫ থেকে ৭৮ টাকা।
মাঝারি আকারের যে চাল ছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা, তা এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে ৫৩ থেকে ৫৮ টাকা হয়েছে। এছাড়া মোটা চাল স্বর্ণা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৫৪ টাকা।
তবে এই তালিকার চেয়ে বাজারে চালের ‘প্রকৃত মূল্য’ কেজিতে আরও ১ থেকে ৩ টাকা বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
টিসিবির মূল্য তালিকায় আগের সপ্তাহে খোলা আটা ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার বাজারে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা বিক্রি হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর খোলা ময়দা ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা; আগের সপ্তাহে প্যাকেট ময়দার কেজি ৬২ থেকে ৭০ টাকা থাকলেও বেড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে।
পেঁয়াজ আগের সপ্তাহে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা থাকলেও তা বেড়ে হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। দেশি রসুন ৬০-৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০-৮০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন ১০০-১৩০ টাকা থেকে বেড়ে ১১০-১৩০ টাকা হয়েছে; চিনি গত সপ্তাহে ৮০ থেকে ৮২ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন ৮২ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে এই তালিকায় উল্লেখ করা হয়।
রামপুরা বাজারের মুদি দোকানি মাইদুল ইসলাম মাহিন বলেন, “সব কিছুর দামই বেড়েছে। পেঁয়াজ আমরা গত কয়েক দিন ধরে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি, আজকের পাইকারি বাজারে খবর নিয়ে দেখলাম কাল-পরশু কেজিতে আরও ৫ টাকা করে বাড়ছে। দাম যে বাড়েনি তা আটা-ময়দা, চিনি কোনোটিতেই বাদ নেই।”
মগবাজারের বাসিন্দা ও ধানমণ্ডির একটি বিপণিবিতানের বিক্রেতা জহিরুল ইসলামের চারজনের সংসার। তার দুই বাচ্চা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়ে।
প্রতিদিনই কিছু না কিছু কেনাকাটা করতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “ভাই, এক-দেড় বছর আগে ৫০০ টাকা দিয়ে যা কিনতে পেরেছি, এখন সেই সব জিনিস কিনতে ব্যয় হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। বাজারে গেলে এখন আর হিসাব মিলাতে পারি না, প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।”
তিনি বলেন, “কোনটা রেখে কোনটা কিনব- বাজারে গিয়ে সেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হয়! খাবার তো কম খেয়ে থাকা যায় না। আগে বাচ্চাদের জন্য সপ্তাহে কিছু ফল কিনে নিতাম, ফলের দাম এত বেড়েছে যে সেগুলো কেনা বন্ধ করে দিয়েছি। চাল-ডাল মাছ-ভাতই কেনা কষ্ট হয়ে পড়েছে। এভাবে যদি আরও কিছু যদি চলে, তাহলে তো বউ-বাচ্চা গ্রামে পাঠিয়ে দিতে হবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।