জুমবাংলা ডেস্ক : দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এ বছরের ২৫ জুন দুপুর ১২টায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হয়। প্রথমে টোল দিয়ে পদ্মা সেতুতে উঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার গাড়িবহর। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টায় সেতুতে ওঠার পর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। খবর ডয়চে ভেলের।
এই সেতুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি বিশ্বের নানান দেশের মানুষেরই আগ্রহের কোনো কমতি নেই।
এর প্রেক্ষিতে অনলাইনে পদ্মা সেতু নিয়ে কখন, কী খুঁজেছেন মানুষ? কোন দেশ বা বাংলাদেশের কোন জায়গা থেকে সবচেয়ে বেশি তথ্য সন্ধান করেছেন তারা? কত কনটেন্ট তৈরি হয়েছে এই সেতুকে ঘিরে? গুগল ট্রেন্ডস থেকে বের করা এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে।
পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছিল আট বছর আগে। এই সময়ে ইন্টারনেটে মানুষের আগ্রহের চিত্র দেখা যাচ্ছে ‘গুগল ট্রেন্ডসের’ গ্রাফে। সেতুটি নিয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন চলতি বছরের জুনে উদ্বোধনকে ঘিরে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। সেই সময় সেতুটিতে সর্বশেষ স্প্যান বসে। দিনের হিসাবে ২৫ জুন উদ্বোধনের দিনই এই সেতুকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ছিল। পরের দিনই তা অর্ধেকে নেমে আসে।
স্বাভাবিকভাবেই পদ্মা সেতু নিয়ে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশেই। আট বছরের চিত্রে ইন্টারনেট সার্চে এরপরের অবস্থানে আছে মালদ্বীপ, কাতার, ওমান, বাহরাইন। তবে গত এক মাসে বাংলাদেশের পরে কাতার, পাকিস্তান, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পদ্মা সেতু নিয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়েব সার্চ করা হয়েছে।
গত আট বছরে গুগলে ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি জানতে চেয়েছেন পদ্মা সেতুর স্প্যান নিয়ে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ‘পদ্মা ব্রিজ প্যারাগ্রাফ’, শিক্ষার্থীদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ‘পদ্মা ব্রিজ পিলার’, ‘টোলের হার’ নিয়েও জানতে চেয়েছেন ব্যবহারকারীরা। অন্যদিকে উদ্বোধন, সরাসরি সম্প্রচারের ভিডিও নিয়ে বেশি তথ্য খুঁজেছেন তারা গত একমাসে। বাংলায় পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য, পিলার, খরচ, স্ট্যাটাস ও উক্তি খুঁজেছেন মানুষ।
দেশ ভিত্তিতে আট বছরে পদ্মা সেতু নিয়ে গুগলে সবচেয়ে বেশি খবর খোঁজ করা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। এরপর বেশি সন্ধান করা হয়েছে নেপাল থেকে। তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কর্মী অবস্থান করা দেশ সৌদি আরব। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য ও কানাডা। গত একমাসে বাংলাদেশের বাইরে পদ্মা সেতু-সংক্রান্ত সবচেয়ে বেশি খবর খুঁজেছেনে মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ভারত থেকে।
গত একমাসে ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাজ্যগুলো থেকে এই সেতু নিয়ে সবচেয়ে বেশি গুগল সার্চ হয়েছে। র্শীষে আছে বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত ত্রিপুরা। এরপর রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম ও অরুণাচল প্রদেশ। আগ্রহের শীর্ষে ছিল পদ্মা সেতুর টোল হার।
গুগল ট্রেন্ডস অনুযায়ী পদ্মা সেতু নিয়ে গত আট বছরে ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি ভিডিও খোঁজা হয়েছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে, যে স্থানটি পদ্মা সেতুকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে যুক্ত করেছে। এরপর সবচেয়ে বেশি ভিডিও অনুসন্ধান হয়েছে বরিশালের আটিপাড়া থেকে। তারপরে রয়েছে বাগেরহাট, মাগুরা ও রাজশাহী। গত একমাসের চিত্রে শীর্ষে ছিল ঝালকাঠি।
গুগলের ওয়েব সার্চে বাংলায় ‘পদ্মা সেতু’ লিখে অনুসন্ধান করলে মোট ৯১ লাখ কনটেন্ট পাওয়া যায়। সংবাদ ফলাফল পাওয়া যায় প্রায় ৩০ লাখ৷ এ ছাড়া ইংরেজিতে ‘Padma Bridge’ লিখে ওয়েব সার্চেও প্রায় ৮৬ লাখের ওপরে কনটেন্ট পাওয়া যায়। সংবাদ পাওয়া যায় প্রায় ২ লাখ ৭৭ হাজার।
বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু চীনের ডানিয়াং-কুনসান গ্র্যান্ড ব্রিজ। গুগলের ওয়েবে ইংরেজিতে এই সেতুটির নাম দিয়ে সার্চে মোট ২ কোটি কনটেন্ট পাওয়া যায়। তবে এই সেতু নিয়ে সংবাদ কনটেন্ট পাওয়া যায় মাত্র ১২শ’। ভারতের দীর্ঘতম সেতু ঢোলা সাদিয়া সেতু বা ভূপেন হাজারিকা সেতুর ওয়েব সার্চে প্রায় ৯০ হাজার কনটেন্ট পাওয়া যায়, সংবাদ দেখা যায় প্রায় ২ হাজার। সেই হিসাবে পদ্মা সেতু নিয়ে সংবাদ হয়েছে কয়েকগুণ বেশি।
তথ্যমতে, বাংলাদেশের বুকে সবচেয়ে বড় অবকাঠামোর নাম পদ্মা সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের সেতুটি ঢাকা বিভাগের দুই জেলা মুন্সীগঞ্জ আর শরীয়তপুরকে সংযুক্ত করেছে। সেতুর ডাঙার অংশ যোগ করলে মোট দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার। স্টিল আর কংক্রিটের তৈরি দ্বিতল সেতুর ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক আর নিচে একক রেলপথ।
বিশ্বের খরস্রোতা নদীর তালিকায় আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান। এমন খরস্রোতা নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। তাই সেতুকে টেকসই করতে নির্মাণের সময় বিশেষ প্রযুক্তির পাশাপাশি উচ্চমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা ৪২ আর স্প্যান ৪১টি। খুটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়। অর্থাৎ প্রায় ৪০তলা ভবনের উচ্চতার গভীরে পাইল নিয়ে যেতে হয়। বিশ্বে এখন পর্যন্ত কোনো সেতুর জন্য এত গভীর পাইলিং হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।