জুমবাংলা ডেস্ক : ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের ছাত্র তাহের মাহমুদ তারিফ দেশীয় প্রযুক্তিতে স্মার্ট স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন উদ্ভাবন করেছেন। স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীরা পিরিয়ড চলাকালীন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে এই ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে স্যানিটারি ন্যাপকিন সংগ্রহ করতে পারবে। তারিফের উদ্ভাবিত দুটি স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিন এরই মধ্যে ঈশ্বরদী শহরের সরকারি এস এম স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্থাপন করা হয়েছে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নিজস্ব উদ্ভাবনের মাধ্যমে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন তৈরিতে সময় লেগেছে পাঁচ মাস। ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার টাকা।
স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন উদ্ভাবনের বিষয়ে তারিফ বলেন, ‘আমাদের দেশে স্কুল-কলেজগুলোতে বিশেষত স্কুলগুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের যখন শারীরিক পরিবর্তন হয় তখন শুরুর দিকে দোকান থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে অস্বস্তি বোধ করেন। ভেন্ডিং মেশিন থেকে খুব সহজেই কয়েন ব্যবহার করে স্বল্পমূল্যে প্যাড সংগ্রহ করতে পারবেন। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী স্যানিটারি ন্যাপকিন সেবা প্রদানের লক্ষ্যেই আমার এই উদ্যোগ।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভেন্ডিং মেশিনে স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড রাখা থাকবে। প্রয়োজনের সময় মেশিনে ৫ টাকার কয়েন দিয়ে সহজেই ন্যাপকিন বা প্যাড পাওয়া যাবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে স্টক শেষ হওয়ার আগেই রিফিল করার জন্য বার্তা দেওয়া হবে। প্রচলিত ভেন্ডিং মেশিনের তুলনায় এর খরচ কম হওয়ায় প্রযুক্তিটি সর্বোত্তম ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। মেশিনটি ব্যবহারের ফলে পিরিয়ডকালীন নারী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। দেশে বহু প্রতিষ্ঠানে ভেন্ডিং মেশিন ভেন্ডিং মেশিন রয়েছে। আমার উদ্ভাবিত ভেন্ডিং মেশিনের চেয়ে আমদানি করা মেশিনের দাম দ্বিগুণেরও বেশি।’
তারিফের এই উদ্ভাবনের বিষয়ে সরকারি এস এম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল হক শাহীন বলেন, ‘২০২১ সালে তাহের মাহমুদ তারিফ এখান থেকে এসএসসি পাস করেছেন। তার উদ্ভাবিত দুটি স্মার্ট স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের জন্য স্থাপন করেছি। ভেন্ডিং মেশিন খুবই যুগোপযোগী। তারিফ স্কুল শাখায় পড়াশোনার সময় অক্সিজেন কনসেনট্রেটর উদ্ভাবন করেন। এটি উদ্ভাবনের প্রাথমিক ব্যয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহন করে। পরে ঈশ্বরদীর ইউএনও, পাবনা জেলা প্রশাসক ও সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয় তাকে সার্বিকভাবে আর্থিক সহযোগিতা করে।’
ছেলের উদ্ভাবন প্রসঙ্গে অনুভূতি প্রকাশ করে তারিফের মা তসলিমা খাতুন বলেন, ‘৩ সন্তানের মধ্যে তারিফ ছোট। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে উদ্ভাবনী ভাবনা ছিল। করোনাকালীন তারিফের বাবা মারা যান। দেশজুড়ে চরম অক্সিজেন সংকটের সময় তারিফ অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আবিষ্কার করেন।’
জানা গেছে, তারিফ অক্সিজেন কনসেনট্রেটর যন্ত্র ও স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন আবিষ্কারের পাশাপাশি সুপার ফাস্ট ব্যাটারি চার্জিং টেকনোলজি উদ্ভাবন করেছেন। যার সাহায্যে অটোরিকশা দ্রুত তিনগুণ চার্জ হবে। ফায়ার রেসকিউ রোবটও উদ্ভাবন করেছেন। যার মাধ্যমে মানুষের সহযোগিতা ছাড়াই আগুন নেভানো সম্ভব। এছাড়া বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার কন্ট্রোলিং সিস্টেম, সেভ এসি কনর্ভাটার, স্মার্ট রোড ম্যানেজমেন্ট লাইটিং সিস্টেম, স্মার্ট রেলক্রসিং সিস্টেম, কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি নামানোর আর্টিফিশিয়াল রেইন রকেটসহ আরও কিছু আবিষ্কার আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, করোনাকালীন দেশে অক্সিজেনের সংকট মূহূর্তে তারিফ স্বল্প খরচে কৃত্রিম অক্সিজেন উৎপাদন যন্ত্র ‘অক্সিজেন কনসেনট্রেটর’ আবিষ্কার করে দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছিলেন। এই উদ্ভাবনের স্বীকৃতিস্বরূপ ক্ষুদে উদ্ভাবক হিসেবে ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে শেখ রাসেল স্বর্ণ পদক অর্জন করেন। এছাড়া, ২০২০-২০২৩ সাল পর্যন্ত চারবার জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় জেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ খুদে বিজ্ঞানী হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তারিফ ২০২১ সালে দশম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মেশিন আবিষ্কার করেন। তারিফের উদ্ভাবিত অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মেশিন আইসিটি মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মন্ত্রণালয়ের ‘এ টু জেড’ গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে যন্ত্র তৈরির জন্য তাকে ১০ লাখ টাকা অর্থায়ন করা হয়। তারিফ এই টাকা দিয়ে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর যন্ত্রটি আরও আধুনিকীকরণে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। একটি কনসেনট্রেটর যন্ত্রের মাধ্যমে একজন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া যেত এখন দুই বা ততোধিক রোগীকে এই সেবা দেওয়া যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।