ধর্ম ডেস্ক : প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় মানুষের জীবনে একটি অনিবার্য বাস্তবতা। ইতিহাসে বহুবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের জীবন ও সম্পদ ধ্বংস করেছে। ইসলাম এ ধরনের দুর্যোগকে মহান আল্লাহর পরীক্ষা ও শাস্তি হিসেবে দেখে।
আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা তার সৃষ্টিকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন, কখনও সম্পদের ক্ষতি দিয়ে, কখনও জীবনের ক্ষতি দিয়ে। ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, মহামারি, খরা ইত্যাদি সবকিছুই আল্লাহর নির্দেশেই সংঘটিত হয় এবং এর পেছনে মানুষের কর্মকাণ্ডের প্রভাব রয়েছে বলে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন হয় এবং ইসলাম কীভাবে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগকে দেখছে, তা পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ ধরনের বিপর্যয় যখন সংঘটিত হয়, তখন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, তওবা ইস্তেগফার করা কর্তব্য। নিজের জীবন সংশোধনের প্রতি গুরুত্ব দেয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আসুন, ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ঘূর্ণিঝড় কেন হয় এবং এর পেছনে কী বার্তা রয়েছে তা আলোচনা করা যাক।
ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ
ইসলামের দৃষ্টিতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, মহামারি, ঝড়, ভূমিকম্প, এগুলো কেবল প্রাকৃতিক ঘটনা নয়; এগুলোর পেছনে আল্লাহর পরীক্ষা ও মানুষকে সতর্ক করার বার্তা রয়েছে। কোরআনে আল্লাহ বারবার উল্লেখ করেছেন যে, মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে স্থলে ও জলে বিপর্যয় দেখা দেয়। যেমন, সূরা রুমের ৪১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন,
স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সুরা রুম ৪১)
এ থেকে বোঝা যায়, মানুষের অন্যায়, পাপ এবং অসৎ কাজের ফলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে এবং এসবের মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে তাদের ভুল বুঝিয়ে দেন, যেন তারা তওবা করে ফিরে আসে এবং আল্লাহর পথে ফিরে যায়।
ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য দুর্যোগের কারণ
হাদিসে রসুল (স.) ব্যাখ্যা করেছেন কেন এবং কখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন মহামারি আকারে (নতুন-নতুন) রোগের প্রাদুর্ভাব হয় যা পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মধ্যে দেখা যায়নি। যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে, তখন দুর্ভিক্ষ ও কষ্ট নেমে আসে। যদি কোনো জাতি জাকাত আদায় করতে ব্যর্থ হয়, আল্লাহ তাদের বৃষ্টি থেকে বঞ্চিত করেন।’
এ থেকেই স্পষ্ট যে, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু প্রাকৃতিক ঘটনাই নয়, বরং মানুষের পাপাচার এবং নৈতিক অবক্ষয়ের ফল। এ ধরনের দুর্যোগের মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করেন, তাদের কৃতকর্মের ফল আস্বাদন করান এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
দুর্যোগের সময় নবীজির আমল
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় রসুল (স.) খুব বিচলিত হতেন। হাদিস থেকে জানা যায় যে, যখন আকাশে মেঘ জমতো বা বাতাসের গতি বেড়ে যেতো, তখন তিনি আল্লাহর শাস্তির ভয় করতেন এবং তওবা ইস্তেগফার করতেন। সাহাবিদেরও এসময় বেশি বেশি তওবা, ইস্তেগফার এবং নামাজে মশগুল হতে নির্দেশ দিতেন।
রসুলুল্লাহ (স.) মানুষকে সবসময় আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার পরামর্শ দিতেন এবং যেকোনো বিপদ আপদে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে বলতেন। তিনি আরও বলেন, যখন কোনো জাতি আল্লাহ ও তার রসুলের আদেশ লঙ্ঘন করে, তখন আল্লাহ তাদের ওপর বিজাতীয় শত্রুকে ক্ষমতাসীন করেন, যারা তাদের উপর নির্যাতন চালায়।
ইসলামের দৃষ্টিতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা এবং শাস্তি। এর মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে তাদের ভুল থেকে সতর্ক করেন এবং তওবা করার আহ্বান জানান। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এই দুর্যোগগুলোর কারণ ও প্রতিকারের উপায় স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাই যখনই কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসে, মুসলমানদের উচিত তা আল্লাহর ইচ্ছার অংশ হিসেবে মেনে নিয়ে বেশি বেশি তওবা করা এবং নিজেদের সংশোধন করা।
মানুষের শরীরের প্রতিদিন নতুন রক্ত তৈরি হয় তাহলে পুরনো রক্তগুলো কোথায় যায়
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর স্মরণ করা ও তার আদেশ মান্য করা অপরিহার্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের জন্য একটি অনুস্মারক যে, আমরা সৃষ্টিকর্তার সামনে ক্ষুদ্র এবং তার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।