ইসালামে ওমর (রা.)-এর বিশেষ মর্যাদা

islamic (3)

ধর্ম ডেস্ক : রসুল (সা.)-এর একটি হাদিসে বলা হয়েছে, তাঁর পর যদি কাউকে নবী করা হতো তিনি হজরত ওমর (রা.)। এটি সাহাবিদের মধ্যে ওমর (রা.)-এর বিশেষ মর্যাদা নির্ণয় করে। মহানবী (সা.)-এর কাছে প্রথম দিকে যাঁরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তাঁদের ওপর নির্যাতন চালায় মক্কার কুরাইশরা। তবু ইমানের ওপর তাঁরা অটল থাকেন। রসুল (সা.) একপর্যায়ে দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ! ওমর ও আবু জাহেলের মধ্যে তোমার কাছে যে বেশি পছন্দনীয় তাঁকে ইসলাম গ্রহণের সুযোগ দাও এবং তাঁর দ্বারা ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি কর।’ এ দোয়া কবুল হয় অচিরেই। ওমর (রা.)-এর অন্তর আল্লাহ পরিবর্তন করে দেন।

islamic (3)

হজরত ওমর (রা.) ছিলেন তৎকালীন আরবের গুটি কয় শিক্ষিত লোকের অন্যতম। তিনি একদিকে ছিলেন সাহসী যোদ্ধা, অন্যদিকে বক্তা হিসেবে ছিলেন অসাধারণ। রসুল (সা.)-কে হত্যার উদ্দেশ্যে তলোয়ার নিয়ে রওনা দেন ওমর। পথে সাহাবি নাইম বিন আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ। নাইম ওমরের উদ্দেশ্য আঁচ করতে পেরে বলেন, ‘আগে নিজের বোন, ভগ্নিপতির খোঁজ নাও, তারপর যেখানে যেতে চাও যাও।’ ওমর ছুটলেন বোনের বাড়ির দিকে। গিয়ে দেখেন বোন ফাতিমা কোরআন পড়ছেন।

যে কোরআন নাজিল হয়েছে রসুল (সা.)-এর ওপর। পায়ের শব্দ কানে আসামাত্রই চুপ হয়ে গেলেন ফাতিমা। লুকিয়ে ফেললেন কোরআনের পাতা। হজরত ওমর (রা.) ঘরে ঢুকেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি পড়ছিলে?’ ক্ষুব্ধ ভাইয়ের কথায় বোন নিশ্চুপ। ওমর বললেন, ‘আমি জেনেছি তোমরা স্বামী-স্ত্রী ধর্মত্যাগী হয়েছ।’ এই বলে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন ভগ্নিপতির ওপর। বোন স্বামীকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে তাঁকেও পেটালেন। রক্তাক্ত হলেন বোন ও ভগ্নিপতি। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ইমানের বলে বলীয়ান হয়ে দৃপ্তকণ্ঠে ফাতিমা বললেন, ‘ভাই, তুমি যা ইচ্ছা করতে পার। আমরা সহ্য করব। শুধু জেনে রাখ, আমরা ইসলাম ত্যাগ করব না।’ বোনের তেজোদীপ্ত কথা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণের জন্য ভাবলেন ওমর। হার মানল তাঁর দম্ভ। কঠিন হৃদয় মোমের মতো গলে গেল। তিনি বললেন, ‘আচ্ছা! তোমরা যা পাঠ করছিলে আমাকে একটু পড়তে দাও দেখি তাতে এমন কী আকর্ষণ আছে, যা তোমাদের দৃঢ়চেতা করে তুলেছে।’ বোন বললেন, ‘তুমি নাপাক।

এই কিতাব শুধু পাকপবিত্র লোকই স্পর্শ করতে পারে।’ গোসল করে এলেন ওমর। তারপর পড়লেন কোরআন। মুহূর্তেই তিনি পাল্টে গেলেন। সেই তলোয়ার হাতেই ওমর (রা.) ছুটলেন নবী (সা.)-এর দরবারে। পায়ের শব্দ শুনে একজন সাহাবি দরজায় উঁকি দিয়ে দেখলেন, তলোয়ার হাতে ওমর। সাহাবিদের কেউ কেউ ভাবছিলেন না জানি আজ কী হয়!

মহানবী (সা.)-এর চাচা হামজা (রা.) ছিলেন আরবের অন্যতম সেরা বীর। তিনি বললেন, ‘ওমর এসেছে তো কী হয়েছে, দরজা খুলে দাও। যদি খারাপ উদ্দেশ্যে এসে থাকে তবে তার তলোয়ার দিয়েই আমরা তাকে শেষ করে দেব।’ এ ঘটনার সময় রসুল (সা.) ছিলেন দরবারের ভিতর দিকে। সে সময় তাঁর ওপর ওহি নাজিল হচ্ছিল। ওহি নাজিল হওয়ার পর রসুল (সা.) হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে এলেন এবং তাঁর পরিধানের পোশাক ও তলোয়ারের একাংশ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহ! ওমর ইবনে খাত্তাবের দ্বারা দীনের শক্তি ও সম্মান দান কর।’ এ কথা শুনে হজরত ওমর (রা.) রসুল (সা.)-এর হাত ধরে বললেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আপনি আল্লাহর রসুল।’ হজরত ওমর (রা.)-এর কালেমা পাঠ শোনামাত্র ভিতরে উপস্থিত সাহাবিরা ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে উঠলেন। ওমর (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণ অতুলনীয় গুরুত্বের অধিকারী। এর আগে সবাই ইসলাম গ্রহণ করেন গোপনে। আর ওমরের ইসলাম গ্রহণ ও মুসলমান হিসেবে তৎপরতা ছিল প্রকাশ্যে। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের আগে তিনি প্রথমে কাবা তাওয়াফ করেন। তারপর কুরাইশদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, তিনি মদিনায় হিজরত করবেন। যদি কেউ তাঁর মাকে পুত্রশোক দিতে চায় সে যেন মুখোমুখি হয়। কিন্তু কেউ এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সাহস দেখায়নি।

আ.লীগকে যারা পুনর্বাসন করেছে, ক্ষমতায় এসে তাদেরই হত্যা করেছে : হাসনাত আবদুল্লাহ

হজরত ওমর (রা.)-এর উৎসাহেই রসুল (সা.) কাবার চত্বরে মুসলমানদের নিয়ে জামাতে নামাজ আদায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মুসলমানরা প্রথমবারের মতো মক্কায় প্রকাশ্যে ইবাদত করা ও ইসলামের দাওয়াত প্রচারের সুযোগ পায়। নামাজের জন্য আজান দেওয়ার ব্যবস্থা আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.) এবং ওমর (রা.)-এর স্বপ্নের ভিত্তিতেই গ্রহণ করা হয়। মহানবী (সা.) হজরত আবু বকর (রা.) এবং ওমর (রা.)-এর পরামর্শেই প্রথম কোরআন সংকলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং এই লক্ষ্যে হজরত যায়েদ ইবনে সাবিতের (রা.) নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। মুসলিম খিলাফতের সচিবালয়, বাইতুল মাল, সেনানিবাস, প্রাদেশিক শাসন ও বিচারব্যবস্থা ওমর (রা.) প্রথম প্রবর্তন করেন। এ ছাড়া মুসলিম মুদ্রাব্যবস্থা এবং হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন তাঁর হাত ধরেই সম্পন্ন হয়। তাবুক অভিযানের সময় হজরত ওমর (রা) তাঁর মোট সম্পদের অর্ধেক রসুল (সা.)-এর হাতে তুলে দেন।

লেখক : এম এ মান্নান