জুমবাংলা ডেস্ক : দ্বীপ জেলা ভোলার মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীতে গত কয়েকদিন যাবত জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। এখানকার নদী ও সাগর মোহনায় আশানুরূপ ইলিশ পাওয়ায় জেলে পল্লীতে বিরাজ করছে উৎসব আমেজ। জেলা সদরসহ জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন মাছের ঘাট, আড়ৎ, পাইকারী ও খুচরা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক-ডাক ও দর কষাকষিতে প্রতিদিন মুখরিত হচ্ছে ইলিশের বাজার। আর দীর্ঘদিন পর জালে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ ধরা পড়ায় হাসি ফুঁটেছে জেলেদের মুখে।
সদর উপজেলার ভোলার খাল মাছের ঘাট, নাছির মাঝি মাছঘাট, কোরার হাট মাছের মোকাম, তুলাতুলি মাছ ঘাট, বিশ্বরোড মাছের ঘাট, জংশন এলাকার মাছঘাট, ইলিশার মাছ ঘাট, দৌলতখান উপজেলার পাতার খাল, চরফ্যশনের চেয়ারম্যানের খাল মাছ ঘাটসহ বিভিন্ন ইলিশের মোকামে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মোকামগুলোতে জেলেদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো।
সারারাত নদীতে মাছ ধরে সকাল বেলা ঘাটগুলোতে চকচকে ইলিশ নিয়ে আসে জেলেরা। ঘাটে নৌকা অথবা ট্রলার ভিড়ানোর সাথে সাথেই হাকা-ডাক দিতে থাকে ব্যাপারীরা। জেলেরা ঝুঁড়িতে করে বিভিন্ন সাইজের ইলিশ নির্দিষ্ট গোলায় রাখে। মুহূর্তের মধ্যেই সেই ইলিশ কিনতে নিলামে ডাক উঠে যায়।
স্থানীয় ব্যাপারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যদাতাই সেই মাছ কিনে নিচ্ছেন। মূলত এমনি করেই এখান থেকে ইলিশ যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তসহ জেলার বিভিন্ন বাজারে। আবার অনেক ব্যবসায়ী সরাসরি লঞ্চে বা ট্রাকে করে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় মাছ সরবরাহ করে থাকেন। মৎস্য ব্যবসায়ীরা পাইকারিভাবে এখান থেকে মাছ কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন। প্রতিদিন জেলার প্রায় শতাধিক ঘাটে কয়েক কোটি টাকার ইলিশ মাছ বেচা কেনা হয়। গত বছর জেলায় যে পরিমাণ ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল তা দেশের মোট ইলিশ উৎপাদনের ৩২ ভাগ। এখানকার ইলিশ ঢাকা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়।
জেলে আলী হোসেন নজরুল মিয়া জানান, গত কয়েকদিন ধরে ইলিশ মাছের সরবরাহ বেড়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে সাগর থেকে ইলিশের বিচরণের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তাই ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে নদীতে জাল ফেলছেন জেলেরা। দাম ভালো থাকাতে লাভবান হচ্ছেন তারা।
ভোলার খাল মাছ ঘাটরে মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রামের ইলিশ মাছের হালি এক হাজার থেকে ১২’শ টাকা, ৬’শ থেকে ৮’শ গ্রাম হালি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা, এক কেজি ইলিশ মাছের হালি সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা ও ১৩’শ গ্রাম থেকে ১৬’শ গ্রাম হালি নয় থেকে দশ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এ. এফ. এম. নাজমুস সালেহীন বলেন, আমরা বিভিন্ন মাছের ঘাটগুলো ঘুরে দেখেছি। প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে নদীতে। একই সাথে রুই, কাতলসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছও আটকা পড়ছে জেলেদের জালে। মনে করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বণ্যা হওয়ার ফলে ভেসে যাওয়া পুকুর-ঘেরের মাছ এসব। তবে আহরণকৃত ইলিশের মধ্যে ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বেশি। এছাড়া এক কেজি বা তার চেয়ে বড় ইলিশটা বেশি পাওয়া যাচ্ছে জেলেদের জালে।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, জেলায় সারা বছরই কম বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। তবে জুলাই মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ইলিশের মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। গত প্রায় ১৫ দিন ধরে নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নদীতে পানির গভীরতা বেড়েছে। ফলে সাগর থেকে উঠে আসা ইলিশ মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে জেলার বিভিন্ন ঘাটে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হচ্ছে।
এছাড়া চলতি অর্থবছর জেলায় এক লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে সামনের দিকে আরো ইলিশ পাওয়া যাবে। এতে করে ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।