লাইফস্টাইল ডেস্ক : টেস্টোস্টেরন হলো পুরুষদের সে ক্স হরমোন। সুখী যৌ নজীবনের জন্য শরীরে যথেষ্ট টেস্টোস্টেরন থাকা জরুরি। পুরুষদের টেস্টিকলে হরমোনটি উৎপাদন হয়। বার্ধক্যে এর উৎপাদন কমে যায়। তবে অন্যান্য কারণে যৌবনেও সে ক্স হরমোনের উৎপাদন কমে যেতে পারে।
পর্যাপ্ত টেস্টোস্টেরনের অভাবে পুরুষদের যৌ নকামনা হ্রাস পায়, শুক্রাণুর উৎপাদন কমে যায়, যৌ নমিলনের সময় পেনিস দৃঢ়ভাবে খাড়াতে ব্যর্থ হয় ও টেস্টিকল ছোট হয়ে যায়। হরমোনটির ঘাটতিতে যৌ নতার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন সমস্যাও হতে পারে, যেমন- মেজাজ খিটখিটে হতে পারে ও দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
সুখবর হলো, খাদ্যতালিকায় কিছু খাবারকে প্রাধান্য দিলে শরীরে যথেষ্ট সে ক্স হরমোন উৎপন্ন হতে পারে। এখানে শারীরিক উর্বরতা অর্থাৎ টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন বাড়াতে পারে এমনকিছু খাবার সম্পর্কে বলা হলো।
* তৈলাক্ত মাছ
সমুদ্রের তৈলাক্ত মাছে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে, যেমন- ভিটামিন ডি, জিংক, প্রোটিন ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এসব পুষ্টি হরমোনাল স্বাস্ব্য ও পর্যাপ্ত টেস্টোস্টেরন উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে- যেসব পুরুষের শরীরে ভিটামিন ডি কম ছিল, তাদের টেস্টোস্টেরনও কম ছিল। ফ্রাইড ফুডসের মতো অস্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবার যেমন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমায়, তেমনি স্বাস্থ্যকর চর্বির অভাবেও হরমোনটির মাত্রা হ্রাস পায়। তাই সামুদ্রিক মাছের মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়ার গুরুত্ব আছে। কেবল সমুদ্রের তৈলাক্ত মাছ নয়, চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবারও সে ক্স হরমোন বাড়াতে পারে। ছয়টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ থেকে এটা জানা গেছে। তৈলাক্ত মাছের মতো চর্বির স্বাস্থ্যকর উৎস শুধু হরমোনাল স্বাস্থ্য নয়, সমগ্র স্বাস্থ্যের জন্যও প্রয়োজনীয়।
* গাঢ় সবুজ শাকসবজি
গাঢ় সবুজ শাকসবজি হলো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের সমৃদ্ধ উৎস। হরমোনাল স্বাস্থ্যের জন্য একটি প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট হলো ম্যাগনেসিয়াম। এই মিনারেল পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের কাঙ্ক্ষিত মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। গবেষকদের ধারণা, ম্যাগনেসিয়াম শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে টেস্টোস্টেরন বায়োঅ্যাক্টিভিটি বৃদ্ধি করে। শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডিফেন্স ও ফ্রি রেডিক্যালসের মধ্যকার ভারসাম্যহীনতাই হলো অক্সিডেটিভ স্ট্রেস।অক্সিডেটিভ স্ট্রেস পুরুষদের সে ক্স হরমোন কমিয়ে ফেলে। তাই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে পারে এমন খাবার খেলে টেস্টোস্টেরন বাড়বে। ৩৯৯ জন পুরুষের ওপর পরিচালিত গবেষণায় জানা গেছে- যাদের রক্তে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কম ছিল, তাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রাও কম ছিল। তাইওয়ানের একটি গবেষণা মতে, পুরুষেরা সবুজ শাকসবজি কম খেলে সে ক্স হরমোন কমে যায়। ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ সবুজ শাকসবজির দুটি উৎস হলো- পালংশাক ও বাঁধাকপি।
* কোকোয়া
কোকোয়া পাউডার বা কোকোয়া সমৃদ্ধ খাবারে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম ও ফ্লেভানয়েড থাকে। উভয়েই শরীরে পর্যাপ্ত টেস্টোস্টেরন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়। ফ্লেভানয়েড হলো একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শারীরিক প্রদাহ কমাতে পারে। গবেষকরা জানান, শারীরের প্রদাহ সে ক্স হরমোন কমিয়ে ফেলে। পুরুষত্ব ধরে রেখে দাম্পত্যজীবনকে সুখময় করতে নিয়মিত কোকোয়া পাউডার বা ডার্ক চকলেট খেতে পারেন।
* কিসমিস
একমুঠো কিসমিস (১.৫ আউন্স) থেকে ০.৯৫ মিলিগ্রাম বোরন পাওয়া যায়। এছাড়া নাশপাতি, আঙুর, আপেল ও চিনাবাদামেও কিছুটা বোরন রয়েছে। গবেষণা ইঙ্গিত করছে, বোরন পুরুষদের সে ক্স হরমোন বাড়াতে পারে। এই ট্রেস মিনারেল শরীরে টেস্টোস্টেরন মেটাবলিজমে সাহায্য করে এবং সে ক্স হরমোনটির কাঙ্ক্ষিত মাত্রা বজায় রাখতে পারে। কিছু গবেষণায় বোরন সাপ্লিমেন্ট সেবনেও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়েছে। তবে বোরন সাপ্লিমেন্ট ও টেস্টোস্টেরনের মধ্যকার সম্পর্ক নিশ্চিত হতে আরো গবেষণার অপেক্ষা করতে হবে। সাপ্লিমেন্টের পরিবর্তে খাবার থেকে বোরন গ্রহণ করা উচিত। সাপ্লিমেন্ট সেবন করতে চাইলে আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
* ডিম
ডিমের কুসুমে স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন ও সেলেনিয়াম রয়েছে। সেলেনিয়াম হলো একটি মিনারেল, যা শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। কিছু প্রাণীজ গবেষণায় মিনারেলটি টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন বাড়িয়েছে। মানুষ ও পশুর ওপর পরিচালিত কিছু গবেষণায় যাদের রক্তে সেলেনিয়ামের উচ্চ মাত্রা ছিল, তাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রাও বেশি ছিল। তবে সেলেনিয়াম ও টেস্টোস্টেরন সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে আরো গবেষণার অপেক্ষা করা উচিত। সেলেনিয়ামের আরো কিছু উৎস হলো- কাজু বাদাম, সামুদ্রিক খাবার, গরুর মাংস, টার্কির মাংস, মুরগির মাংস, বাদামী চাল, সূর্যমুখী বীজ, মাশরুম, ওটমিল, পালংশাক, দুধ, দই, মসুর ডাল ও কলা।
* বেরি, চেরি ও ডালিম
বেরি, চেরি ও ডালিমে প্রচুর ফ্লেভানয়েড রয়েছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পুরুষদের সে ক্স হরমোন উৎপাদনকারী কোষসমূহকে সুরক্ষা দিতে পারে এবং টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন বাড়াতে পারে। ইঁদুরের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় ডালিমের রস অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে সুরক্ষা দিয়েছে, টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং সে ক্স হরমোন উৎপাদনকারী কোষসমূহকে নিরাপত্তা দিয়েছে। তবে ডালিমের রস মানুষের সে ক্স হরমোন বাড়ায় কিনা নিশ্চিত হতে পুরুষদের ওপর গবেষণা চালাতে হবে। ডালিম, বেরি ও চেরি স্থূলতা জনিত প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে পারে। শরীরের প্রদাহ টেস্টোস্টেরন কমিয়ে ফেলে। এসব ফল খেলে কেবল হরমোনাল স্বাস্থ্য নয়, সমগ্র স্বাস্থ্যই উপকৃত হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।