জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান সংকট অন্তর্বর্তী সরকার তৈরি করেছে। মিথ্যা বলে জাতির সঙ্গে প্রতারণা না করতে সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।’
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম আয়োজিত ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে সারা দেশ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে সনদ আমরা পাস করেছি, পার্লামেন্টের সামনে বৃষ্টিতে ছাতা ধরে সই করেছি। ওইখানে বলা হয়েছিল, সব রাজনৈতিক দল, যেগুলোতে একমত সেগুলো সব সই হয়ে গেল।
এমনকি যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে না, তারা আপত্তি দেবে (নোট অব ডিসেন্ট) তা লিপিবদ্ধ করা হবে এবং সেটা সনদে লেখা হবে। আর এখন উনারা যেটা প্রস্তাব উত্থাপন করলেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে, সেখানে ওই নোটের কোনো কথাই নেই। আমাদের এই কথাগুলো বেমালুম ভুলে গেছেন। তাঁরা আবার নতুন করে কিছু বিষয় নিয়ে এসেছেন।
এটা অন্যায়, এটা জনগণের সঙ্গে নিঃসন্দেহ প্রতারণামূলক কাজ। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রেস কনফারেন্স করে বলেছি। কিন্তু আমরা রাস্তায় নামিনি, আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনো প্রতিবাদ করিনি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার বাড়ি ঘেরাও করিনি, নির্বাচন কমিশনও ঘেরাও করিনি। একটি রাজনৈতিক দল (জামায়াত) তারা একটা জোট বানিয়ে আবার সেটা করছে।
তারা বিভিন্নভাবে এই সরকারকে বাধ্য করতে চায় যে তাদের কথাটাই শুনতে হবে। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার। আমরা যেটা সই করেছি সেটার অবশ্যই আমরা দায়দায়িত্ব গ্রহণ করব। কিন্তু যেটা আমরা সই করিনি সেটার দায়দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করব না। আমরা চাই, এই বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হোক।’
তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন যেটা প্রস্তাব করেছেন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তখনই নির্বাচন হতে হবে। পিআর হবে কি হবে না সেটা আগামী সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে। গণভোটের কথা বলেছে, গণভোটের প্রয়োজন ছিল না, তার পরও রাজি হয়েছি। আমরা বলেছি, নির্বাচনের দিনই গণভোট করতে হবে।
কারণ আলাদাভাবে গণভোট করতে হলে আরো খরচ বেড়ে যাবে, প্রায় হাজার কোটি টাকার ওপরে সেই খরচ হবে। নির্বাচনে দুটি ব্যালট থাকবে—একটি ব্যালট গণভোটের, আরেকটি ব্যালট নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনের। এখন তাঁরা বলছেন, গণভোট আগে হবে, তারপর নির্বাচনের কথা। এই নির্বাচন পেছানোর কথা আপনারাই (জামায়াত) বলছেন।’
জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটা দল বলছে, বিএনপি নাকি নির্বাচন পেছাতে চায়। নির্বাচন পেছানোর কথা আপনারাই (জামায়াত) বলছেন। আমরা তো গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে নির্বাচনের কথা বলে আসছি।
পেছানোর কথা একবারও বলিনি। বারবার বলেছি, নির্বাচনটা অতি দ্রুত করতে হবে। আমি বলব, এসব মিথ্যা কথা বলে জনগণের সঙ্গে আপনারা প্রতারণা করবেন না, মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।’
মির্জা ফখরুল জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরের বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, ‘আজকের কাগজে দেখলাম আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় বন্ধু মানুষ তাহের সাহেব নিজের এলাকায় গিয়ে আমাদের দোষারোপ করেছেন।
বলেছেন আমরা নাকি নির্বাচনকে বাধা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে যতটা বাধা সৃষ্টি করেছেন সেটা আপনারা (জামায়াত) করেছেন। আপনারা পিআরের দাবি নিয়ে এসেছেন যেটা আলোচনায় ছিল না। জোট পাকিয়ে রাস্তার মধ্যে আন্দোলন করছেন, ধমক দিচ্ছেন আজকেই হতে হবে, না তাহলে নির্বাচন হতে দেবেন না। মানুষকে বোকা ভাববেন না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি কথাটা পরিষ্কার করে বলতে চাই, তাতে আপনারা (জামায়াত) নাখোশ হলে আমার কিছু করার নেই। সেদিন আপনারা মুক্তিযুদ্ধকে গোলমাল বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
কিছু দুষ্কৃতকারীর একটা অভ্যুত্থানের কথা বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছিলেন। এবং যারা আমাদের দেশের মানুষদের হত্যা করছিল, তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আপনারা এই দেশের মানুষকে হত্যা করেছিলেন। আমাদের বহু গুণী-জ্ঞানী ব্যক্তিকে সেদিন হত্যা করে বদ্ধভূমিতে নিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন, আমরা একটুও ভুলিনি।’
অনুষ্ঠানে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



