লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিবাহ হলো একটি প্রচলিত সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো বৈধভাবে বিপরীত লিঙ্গে দুজন মানুষ একসঙ্গে বসবাস এবং মানব ইতিহাস ধরে রাখা। মাঝে মাঝে কিছু সম্পর্কে তিক্ততা বা বিভিন্ন কারণে বিচ্ছেদের ঘটনা দেখা যায়। তবে বর্তমানে আমাদের সমাজে এই বিচ্ছেদ প্রবণতা বেড়েছে কয়েক গুণ।
খুব সহজে এই ঘটনাটি ঘটে যাচ্ছে। দাম্পত্য জীবনে খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া হওয়া কিংবা মনোমালিন্য খুবই সাধারণ বিষয়। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার এই সামান্য কারণটাই যখন বিচ্ছেদে গড়ায় তখন ভেঙে যায় গোটা একটা পরিবার। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কয়েকটা জীবন।
তবে ঝগড়া বা মনোমালিন্যই যে বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ বিষয়টা এমন না। এই বিচ্ছেদের কারণে থাকে একাধিক কারণ। সম্প্রতি ডিভোর্স ডটকমে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিবাহবিচ্ছেদের নেপথ্যে ব্যক্তির পেশাও একটা বড় কারণ। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০ পেশাজীবীর মধ্যে বিচ্ছেদের হার সর্বোচ্চ। কিন্তু কেন এই পেশাগুলোর মানুষের বিচ্ছেদ বেশি হয়। চলুন, জেনে নিই এই সম্পর্কে।
বারটেন্ডার
বিচ্ছেদের তালিকায় সবার ওপরে আছেন বারটেন্ডাররা। তারা বারে পানীয় তৈরি ও পরিবেশন করেন। এই পেশাজীবীদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার সর্বোচ্চ।
এক্সোটিক ডান্সার ও অ্যাডাল্ট পারফরম্যান্স আর্টিস্ট
দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন এক্সোটিক ডান্সার ও অ্যাডাল্ট পারফরম্যান্স আর্টিস্টরা। পেশাগত কারণে তাদের দাম্পত্য সম্পর্কে মানসিক চাপ, অনিরাপত্তাবোধ, ঈর্ষা, প্রতারণার মতো বিষয়গুলো অতিমাত্রায় বেশি থাকে।
উচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা
এটি এমন এক পেশা, যেখানে সব সময় মানসিক চাপে থাকতে হয়। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে এই পেশাজীবীদের মানসিক দূরত্ব থাকে। তাদের জীবনসঙ্গীরা একাকিত্ব ও সম্পর্কে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এ কারণে স্বাভাবিক একটা দাম্পত্য জীবনের অভাবে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন তারা।
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী
এসব পেশাজীবীর কাছে সব সময় প্রথম প্রাধান্য থাকে রোগী, জীবনসঙ্গী নয়। এই পেশাজীবীরা খুব কমই সঙ্গী বা পরিবারকে সময় দিতে পারেন। তারা অনেক ক্ষেত্রেই সঙ্গীর মানসিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হন।
গেমিং সার্ভিসেস ওয়ার্কার
যারা ক্যাসিনোতে কাজ করেন বা জুয়ার সঙ্গে যুক্ত, তাদের জীবনযাপনের ধরনের কারণে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে।
ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টস
অনেকের কাছে খুবই আকর্ষণীয় চাকরি। এই পেশাজীবীরা বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পান। বেতনও তুলনামূলকভাবে ভালো। তবে আপনার কাছে যতই আকর্ষণীয় আর গ্ল্যামারাস লাগুক না কেন, পেশাটি কম চাপের নয়। ক্রমাগত ভ্রমণের কারণে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত থাকেন। লম্বা সময় পরিবার থেকে দূরে থাকা ও ‘লং ডিস্ট্যান্স রিলেশনশিপ’ চালিয়ে নেওয়া সহজ কথা নয়।
কাস্টমার কেয়ার, টেলিমার্কেটের ও সুইচবোর্ড অপারেটর
এসব পেশাজীবী সব সময় চেয়ারে বসে থাকেন। পুরো সময় ফোনে কথা বলেন। ফোনের অপর পাশের ব্যক্তির ঝাড়ি খান, গালি খান। ঠাণ্ডা মাথায় মানুষের সমস্যার সমাধানও দিতে হয়। এ কারণে তারা মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। মানসিক চাপ থাকে ভীষণ। ফলে জীবন থেকে সুখ বিষয়টা দূরে চলে যায়। আর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সম্পর্কে। তাদের নিয়মিত কাউন্সেলিং প্রয়োজন। তাই চেষ্টা করবেন যথাসম্ভব তাদের সঙ্গে নরম স্বরে কথা বলার। মনে রাখবেন, আপনার ভোগান্তি বা অসুবিধার জন্য তারা দায়ী নন। তারা কেবল জীবন চালানোর জন্য চাকরি করছেন।
ডান্সার ও কোরিওগ্রাফার
বিশেষ করে ব্যালে ড্যান্সারদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার সর্বোচ্চ। পেশাজীবনে সর্বোচ্চ সফলতার দেখা পাওয়ার জন্য তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। তাদের ফিটনেস বজায় রাখা খুবই জরুরি। শরীরে ব্যথা, ফ্র্যাকচার, লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া, হাড় ভাঙা—এ রকম নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন তারা। নিজেদের শরীর নিয়ে হীনম্মন্যতা ও অসন্তুষ্টিতে ভোগার হারও তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই পেশাজীবীরাই সবচেয়ে বেশি ‘ইটিং ডিজঅর্ডার’–এ ভোগেন। তাদের একটা বড় অংশ অসুখী। তাই তাদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে অপর ব্যক্তি যে সুখী হবেন না, এটাই তো স্বাভাবিক!
ম্যাসাজ থেরাপিস্ট
জীবনসঙ্গীরা এই পেশাজীবীদের পেশা নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় ভোগেন।
টেক্সটাইল নিটিং ও ওয়েভিং মেশিন অপারেটর
তারা চাকরিজীবন নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভীষণ ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফেরেন। এটা তাদের মানসিক চাপ বাড়ায়। এর প্রভাব পড়ে মেজাজ, মানসিক স্বাস্থ্য ও সম্পর্কে।
সূত্র : ডিভোর্স ডটকম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।