লাইফস্টাইল ডেস্ক : জীবনে মানসিক প্রশান্তি কে না চায়! কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শান্তি খোঁজার পথে কিছু অভ্যাস আমাদের বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন বিজ্ঞ মানুষরা কখনোই অন্যকে প্রভাবিত করতে চাইলে নির্দিষ্ট কিছু কথা বলেন না, তেমনি তারা বোঝেন—কিছু অভ্যাস ত্যাগ করলেই মনের প্রশান্তি পাওয়া সম্ভব।
শান্তি পেতে হলে আমাদের কিছু স্বভাব বদলানো জরুরি। কারণ, কিছু আচরণ আমাদের মানসিক শান্তির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই সময় থাকতে এগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত করা জরুরি। জেনে নিন, এমন আটটি অভ্যাসের কথা, যেগুলোকে বিদায় জানালে আপনার জীবন হবে আরও প্রশান্ত, মন হবে হালকা—
১. অতীত আঁকড়ে ধরে থাকা
অতীত দিনের স্মৃতিচারণ করা ভালো, তবে কেবল ভালো স্মৃতিগুলোই মননে রাখা দরকার। অতীতের ভুলগুলো যদি বারবার মনে পড়ে, তাহলে তা আমাদের বর্তমানের শান্তি নষ্ট করে দিতে পারে। ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি, কিন্তু সেটাকে আঁকড়ে পড়ে থাকলে সামনে এগোনো সম্ভব নয়।
তাই অতীতের অপ্রিয় স্মৃতি ধরে না রেখে, বর্তমানকে গ্রহণ করুন। এই ছোট্ট পরিবর্তনই আপনাকে অভ্যন্তরীণ শান্তি ফিরিয়ে দিতে পারে।
২. নিজের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত কঠোরতা
নিজেকে নিয়ে অত্যধিক সমালোচনা করা শান্তির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেকেই নিজেদের ভুল বা দুর্বলতার কথা ভেবে অকারণে অশান্তিতে থাকেন, যা শুধু মানসিক চাপ বাড়ায়।
নিজেকে ভালোবাসতে শেখা দরকার। ভুল হওয়াটা দোষের কিছু নয়, বরং তা শেখার একটা সুযোগ। তাই নিজেকে দোষারোপ না করে বরং বুঝতে হবে, সবসময় নিজেকে দোষারোপ না করে নিজের প্রতি দয়ালু হওয়া প্রয়োজন। নিজেকে ক্ষমা করুন, প্রশংসা করুন, আত্মবিশ্বাস বাড়ান—শান্তি আপনার জীবনেও আসবে।
৩. সবকিছু জটিল করে তোলা
শান্তির জন্য সরল জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুটানের মতো সুখী দেশের মানুষ খুব সাধারণ জীবনযাপন করে। তাদের বিশাল অট্টালিকা বা অতিরিক্ত কাজের চাপ নেই। ফলে তাদের জীবনে প্রশান্তি বেশি।
আমরা অনেক সময় জীবনকে অযথা জটিল করে ফেলি—অতিরিক্ত দায়-দায়িত্ব, অহেতুক প্রতিযোগিতা আর অহেতুক ব্যস্ততায় ডুবে থাকি। অথচ, কম জিনিসপত্র, কম দায়িত্ব এবং কম জটিলতা মানেই হলো বেশি শান্তি। জীবনকে যতটা সম্ভব সরল ও গোছানো রাখার চেষ্টা করুন, দেখবেন মানসিক প্রশান্তিও অনেকটাই বেড়ে গেছে।
৪. আত্ম-সমালোচনায় ডুবে যাওয়া
নিজের ভুলত্রুটি নিয়ে অতিরিক্ত সমালোচনামুখর হলে মানসিক শান্তি ক্ষুণ্ন হয়। আমরা প্রায়ই নিজের ভুলগুলোর জন্য নিজেদেরকেই দায়ী করি, যা আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এর পরিবর্তে নিজেদের প্রতি সদয় হওয়া, নিজের ভুল থেকে শেখা এবং নিজেকে ক্ষমা করার মানসিকতা গড়ে তোলা জরুরি। ভুলগুলো আমাদের ব্যর্থতা নয়, বরং এগুলো আমাদের শেখার সুযোগ। তাই নিজের কঠোর সমালোচনা নয়, বরং নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াই শান্তির পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
৫. জটিল জীবনযাপন করা
বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়, তাদের জীবনযাত্রা বেশ সহজ-সরল। তারা প্রাচুর্যের পেছনে ছোটে না, অপ্রয়োজনীয় দায়িত্ব নেয় না, জীবনকে সহজ রাখার চেষ্টা করে।
বিপরীতে আমরা অহেতুক জটিলতা তৈরি করে ফেলি। বেশি সম্পদ, বেশি ব্যস্ততা—এসব জিনিস আমাদের প্রকৃত শান্তি নষ্ট করে দেয়। তাই বেশি জটিলতায় না গিয়ে যদি আমরা সহজ ও পরিমিত জীবন বেছে নিতে পারি, তাহলে শান্তিও ধরা দেবে সহজেই।
৫. পুরনো রাগ ও ক্ষোভ পুষে রাখা
রাগ, ক্ষোভ, অভিমান—এসব আমরা বছরের পর বছর ধরে রাখি, যা আমাদের মনকে ভারী করে তোলে। কিন্তু আমরা যদি এই নেতিবাচক আবেগগুলো ধরে রাখি, তবে শান্তি কীভাবে আসবে?
ক্ষমা করা মানেই অপরাধীকে ছাড় দেওয়া নয়, বরং নিজের জন্য এক বড় উপহার। এটা একপ্রকার মুক্তি, যা আমাদের মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। অতীতের ক্ষোভকে বিদায় জানানো মানে জীবনের ভার হালকা করা। তাই প্রকৃত শান্তি চাইলে পুরোনো রাগ-ক্ষোভ আঁকড়ে না ধরে এগিয়ে যাওয়াই ভালো।
৬. সবসময় অন্যের প্রশংসার আশায় থাকা
নিজেকে বারবার অন্যের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা আমাদের ক্লান্ত করে তোলে। যদি আমরা নিজেদের মূল্য শুধুই অন্যের প্রশংসার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করি, তবে কখনও প্রকৃত আত্মতুষ্টি খুঁজে পাব না।
নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের মূল্য নিজেই নির্ধারণ করুন। অন্যের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য নয়, বরং নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য কাজ করুন। এতে আপনার মানসিক শান্তি বহুগুণে বেড়ে যাবে।
৭) অন্তঃশক্তিকে উপেক্ষা করা
আমাদের প্রত্যেকেরই একটি অন্তর্নিহিত কণ্ঠস্বর বা অন্তঃশক্তি থাকে, যা আমাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। তবে জীবনের ব্যস্ততা এবং বিশৃঙ্খলার মধ্যে এই কণ্ঠস্বর অনেক সময় চাপা পড়ে যায়। আমরা আমাদের অন্তঃশক্তিকে উপেক্ষা করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করি, যা আমাদের স্বার্থের পক্ষে সঠিক নাও হতে পারে।
আপনার অন্তঃশক্তি শোনা মানে হল একটি অভ্যন্তরীণ কম্পাসের মতো যা আপনাকে নির্দেশিত করে। এটি আপনাকে এমন সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যেতে পারে যা আপনার আসল স্বত্তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং জীবনযাত্রার চ্যালেঞ্জগুলি শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে।
আপনার অন্তঃশক্তিকে উপেক্ষা করা আপনাকে হতাশ, বিভ্রান্ত এবং শান্তি থেকে দূরে রেখে যেতে পারে। যদি আপনি আপনার বয়সের সাথে শান্তি খুঁজে পেতে চান, তবে এই অন্তঃশক্তির সাথে আরও বেশি সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। এটি আপনাকে তার অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে অবাক করে দিতে পারে এবং একটি শান্তিপূর্ণ পথের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
সফল ব্যক্তিরা দৈনিক এই ৭টি অভ্যাস মেনে চলেন, যা তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি
৮) পরিবর্তনের বিরোধিতা করা
পরিবর্তন হল জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ। এটি অনিবার্য, যেমন ঋতুর পরিবর্তন। কিন্তু অনেকেই এই পরিবর্তনকে বিরোধিতা করে, পরিচিতির স্বস্তি আঁকড়ে ধরে এবং পরিবর্তনের সঙ্গে আসা অজানা বিষয়ের ভয় পায়।
কিন্তু এখানে একটি কথা রয়েছে – পরিবর্তনের বিরোধিতা শুধুমাত্র চাপ এবং অশান্তি সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করলে এটি আমাদের নতুন সম্ভাবনা, বৃদ্ধি এবং শেষপর্যন্ত আরও শান্তির দিকে নিয়ে যায়।
পরিবর্তন ভীতিকর হতে হবে না। এটি একটি সুন্দর পরিবর্তন এবং বৃদ্ধির যাত্রা হতে পারে, যদি আমরা এটিকে অনুমতি দিই। তাই যদি আপনি আপনার বয়সে শান্তি খুঁজছেন, পরিবর্তনের বিরোধিতা বন্ধ করার কথা ভাবুন। পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করুন। এটি আপনার মানসিক শান্তির জন্য এক অন্যতম শক্তিশালী সিদ্ধান্ত হতে পারে।
জীবনে শান্তি খুঁজে পাওয়া, বিশেষ করে বয়স বাড়ানোর সাথে সাথে, একটি যাত্রা, গন্তব্য নয়। এটি একটি ধারাবাহিক বৃদ্ধির, আত্ম-আবিষ্কারের এবং সেই সমস্ত অভ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রক্রিয়া যা আর আমাদের কাজে আসে না।
এটি বুঝতে পারা যে আমাদের আচরণ, আমাদের কাজ এবং পরিস্থিতির প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া আমাদের জীবনে যে শান্তি অনুভব করি তা বড়ভাবে প্রভাবিত করে।
বিশ্বখ্যাত আধ্যাত্মিক শিক্ষক একহার্ট টোলlএকবার বলেছিলেন, “শান্তি আসে বর্তমান মুহূর্তের সাথে সঙ্গতি রেখে। আপনি যেখানে আছেন, আপনার পরিবেশ, আপনার কাজ, আপনার অভিজ্ঞতাগুলিকে সম্পূর্ণভাবে আলিঙ্গন করুন… তখন আপনি শান্তি পাবেন।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।