লাইফস্টাইল ডেস্ক : প্রতিটি মুসলিম নবজাতক শিশুর জন্য তার পিতা-মাতার ওপর বিশেষ কর্তব্য হলো- অন্তত জন্মের সপ্তম দিবসে তার জন্য একটি শ্রুতিমধুর, ঐতিহাসিক ও অর্থবোধক সুন্দর নাম রাখা। আল্লাহতায়ালা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সব জিনিসের নাম শিখিয়ে তাঁকে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করলেন। এতে বোঝা গেল প্রতিটি জিনিসের নাম রাখা জরুরি। কেননা নামের ভালো-মন্দের দ্বারা ব্যক্তির ওপর প্রভাব পড়ে।
সুতরাং প্রতিটি শিশুর সুন্দর নামের প্রভাবে যেন পরবর্তী জীবনে তার স্বভাব চরিত্রে শুচিশুভ্রতা ফুটে ওঠে। ঠিক তেমনিভাবে ভুল নামেরও বিরূপ প্রভাব রয়েছে। হজরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যবি (রা.) বর্ণনা করেন যে আমার দাদা হাযন প্রিয় নবী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে গেলে, তিনি জিজ্ঞেস করলেন তোমার নাম কী? তিনি বললেন, আমার নাম হাযন (শক্ত), প্রিয় নবী বললেন, না বরং তোমার নাম হওয়া উচিত সাহল (সহজ ও সরল)। তিনি উত্তরে বললেন, আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন তা আমি পরিবর্তন করব না। এরপর আমাদের পরিবারে পরবর্তীকালে কঠিন অবস্থা ও পেরেশানি লেগেই থাকত। (বুখারি)।
তাই অর্থ না জেনে নাম রাখাও ঠিক নয়। এতে অর্থ বিকৃতি ও হাস্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অধিকন্তু নাম রাখার ক্ষেত্রে অর্থ, প্রয়োগবিধি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট স্মরণ রাখা একান্তই জরুরি। বিদেশি ভাষার অর্থ জানা সচেতন শিক্ষিত ব্যক্তির সহায়তা নিয়ে, বিজ্ঞ আলেম-উলামায়ে কেরামের কাছে জিজ্ঞেস করে নাম রাখা বাঞ্ছনীয়। বিশিষ্ট ধর্মীয় ব্যক্তির নাম, সাহাবায়ে কেরাম ও আল্লাহর নবীদের নাম রাখা, যুগের অলি আবদাল গাউস কুতুবদের নামে নাম রাখা সবচেয়ে নিরাপদ, অনুকরণীয় ও প্রশংসনীয় পন্থা। এতে করে উপরিউক্ত ব্যক্তিদের নামের প্রভাবে শিশুর ব্যক্তিত্বের মধ্যেও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিকৃষ্ট, কলঙ্কিত, সন্ত্রাসী ও গাদ্দারজাতীয় ব্যক্তিদের নাম বর্জন করা উচিত। অমুসলিমদের জাতীয়তা বহন করে এমন কোনো নামও কোনো মুসলিম শিশুর রাখা উচিত নয়।
তাই তো ফেরাউন নমরুদ কারুণ, সাদ্দাত ও আবু জাহেলের নামে অমুসলিমরাও তাঁদের শিশুদের নাম রাখেন না। ঠিক তেমনিভাবে পশুপাখি, মাছ-গাছ, বৃক্ষলতা আকাশবাতাস পাহাড়পর্বত সাগর-নদী ইত্যাদি বস্তুর নামে নামকরণ করাও উচিত নয়। অনুরূপভাবে আল্লাহতায়ালার ৯৯টি নাম, যেগুলো তাঁর সঙ্গেই খাস, সেগুলো আবদ বা উবাইদ শব্দ যোগ করা ব্যতীত, শুধু সে নামেই কারও নামকরণ করাও নাজায়েজ। যেসব নাম অন্যান্য জাতির উপাস্য ও দেবতাদের সঙ্গে খাস, যেমন আবদুল উজ্জা, আবদুল কাবা, দুর্গা, কালী প্রভৃতি নামে নাম রাখাও নাজায়েজ ও হারাম। তাই নাম রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। প্রিয় নবী ইরশাদ করেন, নবজাতকের পিতামাতার ওপর দায়িত্ব হলো, জন্মের সপ্তম দিনে সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা, আকিকা করা ও তার মাথা মুণ্ডন করা। (তিরমিজি)। প্রিয় নবী ইরশাদ করেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হলো, আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান।
আল্লাহতায়ালার বহু গুণবাচক নাম রয়েছে, ওই সব নামের সঙ্গে আবদ শব্দ যোগ করে নাম রেখে মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রভুত্ব স্বীকার করার ইঙ্গিত দেয় এমন নাম রাখা সর্বোত্তম। অনুরূপভাবে নবী-রসুল, সাহাবি ও অলি বুজুর্গগণের নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখাও উত্তম।
অজ্ঞাতসারে বা অবহেলাবশত অর্থহীন বা বিদঘুটে কোনো নাম রেখে ফেললে তা পরিবর্তন করে একটি সুন্দর, শ্রুতিমধুর, অর্থবোধক ও ঐতিহাসিক নাম রাখা অবশ্য কর্তব্য। প্রিয় নবী (সা.) সাহাবিগণের ইসলাম-পূর্ববর্তী যুগের রাখা এ ধরনের কোনো নাম শুনতে পেলে, মুসলিম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা পরিবর্তন করে একটি সুন্দর নাম রেখে দিতেন। হজরত জুয়াইরিয়া (রা.) এর ইসলাম পূর্ব নাম ছিল ‘বাররাহ’ প্রিয় নবী তাঁর নাম পরিবর্তন করে জুয়াইরিয়া রাখলেন। (মুসলিম শরিফ)। হজরত ইবনে ওমর বলেন, প্রিয় নবী আসিয়ার নাম পরিবর্তন করে জামিলা রেখেছিলেন, কেননা আসিয়া অর্থ পাপী, আর জামিলা অর্থ রূপসী। (মুসলিম শরিফ)।
আমাদের প্রিয় নবীর নামে নামকরণ করে ‘মুহাম্মদ’ নাম ধারণ করাও কল্যাণ ও বরকত অর্জনের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আবু রাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা কারও নাম ‘মুহাম্মদ’ রাখলে তাকে মারধর করবে না, আর তার অসম্মানও করবে না। প্রিয় নবী ইরশাদ করেন, যার তিন তিনটি সন্তান জন্মগ্রহণ করল অথচ সে কারও নাম মুহাম্মদ রাখল না, সে জাহিলের আচরণ করল। প্রিয় নবী আরও বলেন, তোমাদের কারও ঘরে এক, দুই বা তিনজন মুহাম্মদ থাকলে, তাঁর কোনো অনিষ্ট হবে না। তিনি আরও ইরশাদ করেন যে ‘মুহাম্মদ’ নামে রহমত ও বরকত নিহিত আছে। যে ঘরে মুহাম্মদ নামের লোক থাকবে সেই ঘরে বরকত হবে। যে সমাবেশে মুহাম্মদ নামের লোক থাকবে, সে সমাবেশে বরকত হবে। হজরত কারি তৈয়ব (রহ.) বলেন, মানুষকে তার পোশাক দিয়ে চেনা যায় না বরং তাকে নাম ও আচরণ দিয়ে তার জাতীয়তা বোঝা যায়।
কারও নাম বিকৃত করে সংক্ষিপ্ত আকারে ডাকাও উচিত নয়, কেননা এতে অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। প্রিয় নবী ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কাউকে তার নাম পরিবর্তন করে বিকৃত করে ডাকবে, আল্লাহতায়ালার ফেরেশতারা তার ওপর লানত করেন। এ ক্ষেত্রে যাকে ডাকা হলো, খুশি না হয়ে বরং সম্মানের সঙ্গে তারও প্রতিবাদ করা উচিত।
মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।