আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সারাবিশ্বে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাঝেও উল্টোপথে হাঁটছে কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে এশিয়ার তিনটি দেশ উল্লেখযোগ্য। জন্মহার বাড়াতে যারা দশকের পর দশক নানামুখী উদ্যোগসহ খরচ করছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে উঠে আসে এ চিত্র।
এতে বলা হয়, গত প্রায় তিন দশক ধরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য উঠে পড়ে লেগেছে জাপান সরকার। ১৯৯০ দশক থেকেই দম্পতিদের বেশি সন্তান নেওয়ায় উৎসাহিত করার নীতি গ্রহণ করে দেশটি। গত বছর সেদেশে আট লাখেরও কম শিশু জন্ম নিয়েছে। এক বছরে এত কম শিশুর জন্ম সেদেশে আগে কখনও হয়নি।
জন্মহার বাড়াতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা শিশু-কল্যাণের বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়নে বর্তমানের ১০ ট্রিলিয়ন ইয়েন (৭৪৭০ কোটি ডলার) বাৎসরিক বরাদ্দ দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই অর্থ জাপানের জিডিপির দুই শতাংশেরও বেশি।
দক্ষিণ কোরিয়াও এগুচ্ছে সেই পথে। ২০০০ সালের পর দেশটি একই নীতি নেয়। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইয়ল সম্প্রতি বলেছেন জনসংখ্যা বাড়াতে তার দেশ গত ১৬ বছরে ২০০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ খরচ করেছে। কিন্তু তারপরও গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রজনন হার ছিল বিশ্বে সবচেয়ে কম। নারী প্রতি শিশু জন্মের হার ছিল মাত্র ০.৭৮।
এদিকে, চীনে গত ৬০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত জনসংখ্যা কমতে শুরু করেছে। অথচ জনসংখ্যার দিক দিয়ে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ভারত। দেশটির জনসংখ্যার ২৫ শতাংশেরও বয়স দশ থেকে বিশের কোঠায়। ফলে অনেক দেশের তুলনায় ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি অর্জনে এই জনসংখ্যা ভারতের জন্য ইতিবাচক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতিসংঘের সর্বশেষ এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে জন্মহার হৃাস পাওয়া দেশের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। কেন জনসংখ্যা বৃদ্ধির দিকে ঝুঁকছে দেশগুলো? আসলে জনসংখ্যা বাড়লে কাজের জন্য বেশি লোক পাওয়া যাবে, এবং তার ফলে পণ্য এবং সেবার উৎপাদন বাড়বে এবং সেইসাথে বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। জনসংখ্যা বাড়লে সরকারের খরচ বাড়ে ঠিকই, কিন্তু কর থেকে সরকারের আয়ও সেইসাথে বাড়ে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম আরেক কারণ এশিয়ার অনেক দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। যেমন, জাপানের জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের বয়স এখন ৬৫ বা তারও বেশি। দেশে যখন কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা কমতে থাকে, তাদের দেখাশোনার জন্য রাষ্ট্রের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশে
জন্মহার বাড়ানোর জন্য নেওয়া প্রণোদনামুলক নীতিমালা কম-বেশি সবদেশেই একইরকম। নতুন বাবা-মায়ের জন্য সরকার থেকে বাড়তি অর্থ, বিনামূল্যে বা খুব কম মূল্যে শিক্ষার সুযোগ, নার্সারি সুবিধার প্রসার যাতে কাজের সময় মায়েরা নিরাপদে বাচ্চা রাখতে পারে, নতুন বাবা-মাদের জন্য কর ছাড় এবং বাচ্চা হওয়ার পর লম্বা ছুটির সুবিধা।
তবে পরিসংখ্যান বলছে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরে জন্মহার বাড়াতে নেওয়া বিভিন্ন নীতি খুবই কম কাজে দিয়েছে। সম্প্রতি জাপানের অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের এক গবেষণা রিপোর্টে বলেছে ‘নীতিগুলো ব্যর্থ হয়েছে’। অন্যদিকে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণও প্রায় একইরকম।
জাতিসংঘের পপুলেশন ফান্ডের কর্মকর্তা অ্যালানা আর্মিটেজ বিবিসিকে বলেন, ‘ইতিহাস থেকে আমরা জানি নীতিমালা দিয়ে জনসংখ্যা বাড়ানো-কমানোর কৌশল, প্রণোদনার লোভ দিয়ে নারীদের বেশি সন্তান নিতে উৎসাহিত করার কৌশল কাজ করে না। কেন নারীরা বেশি সন্তান নিতে চাইছে না তার অন্তর্নিহিত কারণগুলো আমাদের বুঝতে হবে। মূল সমস্যা হচ্ছে অধিকাংশ সময়ই নারীরা তাদের কর্মজীবনের সাথে পারিবারিক জীবনের তাল রাখতে পারে না। ‘
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।