লাইফস্টাইল ডেস্ক : কানের ভেতর কোনোরকম শব্দ হওয়াকে মেডিক্যালের পরিভাষায় টিনিটাস বলা হয়। নিউফাউন্ডল্যান্ডের ক্লিনিক্যাল অডিওলজিস্ট সিয়ান কিনডেন বলেন, ‘টিনিটাসের মাধ্যমে কান কিছু জানাতে চায়। কান জানাতে চায় যে কিছু একটা সঠিকভাবে কাজ করছে না অথবা অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে।’
তরুণ বা বৃদ্ধ, যেকারো কানে টিনিটাস তথা অদ্ভুত শব্দ হতে পারে। এটা প্রতিনিয়ত অথবা বিরতি নিয়ে হতে পারে। এটা খুবই বিরক্তিকর অথবা হালকা/সহনীয় প্রকৃতির হতে পারে। টিনিটাসের অনেক কারণ রয়েছে, যেমন- মানসিক চাপ, হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, মাথায় আঘাত ও অন্যান্য। টিনিটাসের স্থায়িত্ব দুই সপ্তাহের বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে ও প্রকৃত কারণ শনাক্তকরণে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে হবে। এখানে কানের ভেতর অস্বাভাবিক শব্দ বা টিনিটাসের ৮টি কারণ উল্লেখ করা হলো।
উচ্চ শব্দ: কানের ভেতর অস্বাভাবিক শব্দের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত কারণ হলো উচ্চ শব্দের সংস্পর্শে আসা। করাত মিলের মতো উচ্চ শব্দের পরিবেশে কাজ করলে অথবা অতিরিক্ত লাউড মিউজিক শুনলে টিনিটাসের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু আপনি চাইলে উচ্চ শব্দ এড়াতে পদক্ষেপ নিতে পারেন, যেমন- গান শোনার সময় ভলিউমকে ৫০ শতাংশের বেশি না বাড়ানো ও উচ্চ শব্দের কাজ করার সময় হিয়ারিং প্রোটেক্টর ব্যবহার করা।
কান পরিষ্কার না করা: অনেক চিকিৎসক বলেন যে, কানের খইল পরিষ্কারের প্রয়োজন নেই, এমনকি হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের প্রতিবেদনেও কানের খইল পরিষ্কারে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু কারো কারো কানে অতিরিক্ত খইল উৎপন্ন হয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। এই প্রতিবন্ধকতার কারণে কানের ভেতর অস্বাভাবিক শব্দ হতে পারে। কোনো ফিজিশিয়ানের শরণাপন্ন হয়ে কানের ময়লা দূর করে ফেললে টিনিটাস চলে যাবে।
মাথায় আঘাত: সম্প্রতি মাথায় আঘাত পেয়েছেন? মাথায় আঘাত তথা কনকাশনের অন্যতম উপসর্গ হলো কানের ভেতর অদ্ভুত শব্দ হওয়া, বিশেষ করে মাথার একপাশে কনকাশন হলে। কনকাশনের আরো কিছু উপসর্গ হলো- মাথাব্যথা, মাথাঘোরানো ও বমিভাব। মাথাকে সুরক্ষিত রাখতে হকি খেলা, কনস্ট্রাকশনের কাজ ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সময় হেড প্রোটেক্টর ব্যবহার করা উচিত।
টেম্পোরাম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট ডিসঅর্ডার: টেম্পোরাম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট হলো সেই জয়েন্ট যা চোয়ালকে খুলির সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এই জয়েন্ট আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে টেম্পোরাম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট সিন্ড্রোম বা টেম্পোরাম্যান্ডিবুলার ডিসঅর্ডার (টিএমডি) হতে পারে। টিএমডি কেবল চোয়াল ব্যথা নয়, কানকেও প্রভাবিত করতে পারে। টিএমডি’র কারণেও কানের ভেতর অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পারেন। ডা. কিন্ডেন বলেন, ‘টিনিটাস নিয়ে কেউ আমার কাছে আসলে আমি কিছু প্রশ্ন করি, যেমন- সম্প্রতি দাঁতে কাজ করা হয়েছে কিনা অথবা চোয়ালে ব্যথা করছে কিনা। যদি মনে হয় যে দাঁত বা চোয়াল সম্পৃক্ত সমস্যার কারণে টিনিটাস হচ্ছে, তাহলে আগে ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বলি।’
কিছু ওষুধের ব্যবহার: কিছু ওষুধ সেবনের পর কানের ভেতর অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পারেন, বিশেষ করে উচ্চ ডোজে ব্যবহার করলে। তাই কোনো ওষুধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসক থেকে জেনে নিতে পারেন যে টিনিটাস হবে কিনা। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ও অ্যাসপিরিনের উচ্চ ডোজ টিনিটাস সৃষ্টি করতে পারে।
হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি: অটোস্ক্লেরোসিস নামক বংশগত ব্যাধির কারণে মধ্যকানে হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে পারে।মধ্যকানে হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে ও কানের ভেতর অস্বাভাবিক শব্দ হতে পারে, যা সাধারণত ৩০ বছরের পর থেকে শুরু হয়। ভালো খবর হলো, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা যায়। তাই কানে অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেলে অটোস্ক্লেরোসিসের পারিবারিক ইতিহাস খোঁজ করুন।
কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা: কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় কানের ভেতর টিনিটাস হতে পারে, যেমন- কানের ভেতর অস্বাভাবিক তরলীয় চাপ বা মেনিয়ার’স ডিজিজ, ক্যানসারবিহীন টিউমার বা একাউস্টিক নিউরোমা, হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও অ্যালার্জি। আপনার এসব সমস্যা থাকলে ও টিনিটাস হলে চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করুন। তিনি প্রকৃত কারণ শনাক্ত করে সঠিক চিকিৎসা দেবেন।
মানসিক চাপ: মানসিক চাপেও কানের ভেতর অস্বাভাবিক শব্দ সৃষ্টি হতে পারে। ডা. কিন্ডেন বলেন, ‘মানসিক চাপে কানে অদ্ভুত শব্দ শুনতে পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু আবেগীয় চাপে টিনিটাসের তেমন সম্ভাবনা নেই। মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা বাড়লে টিনিটাস আরো লাউড হতে পারে।’ কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ক্যাফেইন খেলেও টিনিটাস শোনা যেতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।