জুমবাংলা ডেস্ক : আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছা শেষ হয়ে গেছে। জীবনে এতবড় দুঃসংবাদ শুনতে হবে কখনও ভাবিনি। এই দুই হাত দিয়ে নাতি তানাজ ও আনাছকে কবর দিতে গিয়ে আমার বুক ভেঙে গেছে। কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুর জেলা শহরের নওহাটা এলাকার মুক্তারবাড়ির বাসিন্দা মোহাম্মদ মজনু মিয়া।
গত ৩১ মার্চ রবিবার সকালে ময়মনসিংহের তারাকান্দায় মাইক্রোবাস ও একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই নাতিকে হারিয়ে এভাবেই তিনি বিলাপ করছিলেন।
মজনু মিয়া বলেন, দুই নাতি তানাজ ও আনাছসহ আমার মেয়ে ও জামাই মিলে মেজো ছেলে কুয়েতপ্রবাসী সোহাবুর রহমান বাপ্পীকে আনতে ঢাকায় যাচ্ছিল। তারা হাসিখুশি ভোরবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। আর বিকালে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল আমার দুই নাতি।
মজনু মিয়া আরও বলেন, তানাজ খুব মেধাবী ছিল। ও চিকিৎসক হতে চেয়েছিল। পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে মেয়ের জামাই ওকে চিকিৎসক বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু সব আশা ধুলিসাৎ হয়ে গেল। তানাজের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।
শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু তারেক জানান, তানাজ জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। সে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তার এমন অকাল মৃত্যুর খবরে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মজনু মিয়ার একমাত্র মেয়ে মনিরার বিয়ে হয় শ্রীবরদী উপজেলার চরশিমুলচুড়া গ্রামের বাসিন্দা কুয়েতপ্রবাসী মোকাদ্দেসুর রহমান তোরাবের সাথে। তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে শেরপুর শহরের নওহাটা এলাকায় থাকতেন তারা। বড় মেয়ে মাশুরা নোকাদ্দেস তানাজ (১৬) শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। রবিবার রাতে তানাজের মামা কুয়েতপ্রবাসী সোহাবুর রহমান বাপ্পীর দেশে ফেরার কথা ছিল। সেজন্য ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আনতে গত রবিবার ভোরে ঢাকা যাচ্ছিল মনিরা, তার স্বামী মোকাদ্দেসুর রহমান তোরাব, তাদের সন্তান তানাজ, আনাছসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।
পথিমধ্যে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার জামান ফিলিং স্টেশনের সামনে মিথুন সুপার নামে একটি বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় এসএসসি পরীক্ষার্থী তানাজ ও তার ছোটভাই আড়াই বছর বয়সী শিশু আনাছ। আহত হয় তাদের বাবা-মাসহ তিনজন।
এদিকে দুই সন্তানের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন বাবা তোরাব ও মা মনিরাসহ স্বজনরা। রবিবার বিকালে নিহতদের মরদেহ নওহাটা এলাকায় পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরে সন্ধ্যায় নিহত তানাজ ও আনাছের দাদার বাড়ি শ্রীবরদী উপজেলার চরশিমুলচুড়া এলাকায় তাদের নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।