ঠাণ্ডা লেগেছে, গলা খুসখুস করছে এমন হলেই অনেকের হাত চলে যায় অ্যান্টিবায়োটিকের দিকে। বিশেষ করে আজিথ্রোমাইসিন যেন হয়ে উঠেছে এক ধরনের ‘নিরাপত্তা বীমা’। কিন্তু এই অভ্যাসই কি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনছে? কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. অর্জুন সাবহারওয়ালের মতে, ভাইরাল সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক কোনও কাজই করে না।

ডা. সাবহারওয়াল বলেন, গলা ব্যথা বা সর্দি-কাশিতে অযথা আজিথ্রোমাইসিন খাওয়া বন্ধ করুন। বিজ্ঞান পরিষ্কারভাবে বলছে ভাইরাল ইনফেকশনে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। সাধারণত ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই শরীর নিজে থেকেই সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু আমরা শরীরকে লড়াই করার সুযোগ দিচ্ছি না। তার এই বক্তব্য নতুন করে আলোচনায় এনেছে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার নিয়ে পুরোনো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
বেশিরভাগ গলা ব্যথাই ভাইরাল
মুম্বাইয়ের জুপিটার হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের পরিচালক ডা. অমিত সারাফ জানান, আউটডোর রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায় ৮০–৯০ শতাংশ আপার রেসপিরেটরি ইনফেকশনই ভাইরাল। এর মধ্যে রয়েছে রাইনোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, আরএসভি ও মৌসুমি ফ্লু।
এই ধরনের অসুখে অ্যান্টিবায়োটিক দিলে
রোগের সময় কমে না
উপসর্গ দ্রুত সারে না
জটিলতার ঝুঁকিও কমে না
কারণ, অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে শুধু ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে নয়।
তাহলে এত সহজে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় কেন
ডা. সারাফ বলছেন, এর পেছনে রয়েছে এক ধরনের মানসিক স্বস্তি। অনেক রোগী মনে করেন, ওষুধ খেলেই নিরাপদ। আবার কখনো কখনো চিকিৎসকরাও চাপ অনুভব করেন। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এখন লক্ষ্য হচ্ছে যা দরকার, সেটুকুই দেয়া। অপ্রয়োজনীয় কিছু নয়।
অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কি হয়
অ্যান্টিবায়োটিক কখনোই পুরোপুরি নিরাপদ নয়। অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। এগুলো হলো:
* ডায়রিয়া
* অ্যালার্জি
* অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হওয়া
* কিডনি বা লিভারের ওপর চাপ
* সবচেয়ে বড় বিপদ হলো অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।
এর ফলে ভবিষ্যতে সত্যিকারের ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হলে সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ নাও করতে পারে যা জীবননাশের কারণও হতে পারে।
ভাইরাল সংক্রমণে যা করবেন
ভাইরাল সংক্রমণে সাধারণত ৩–৫ দিনের মধ্যেই নিজে থেকেই সেরে যায়। এই সময় প্রয়োজন—
* পর্যাপ্ত বিশ্রাম
* প্রচুর পানি পান
* জ্বর বা ব্যথা কমানোর ওষুধ
* উপসর্গ অনুযায়ী সাপোর্টিভ চিকিৎসা
* শরীরকে সময় দিলে ইমিউন সিস্টেম নিজেই কাজ করে।
অ্যান্টিবায়োটিক কোনও বিকল্প নয়, কোনও ‘ফলব্যাক অপশন’ও নয়।সঠিক রোগ নির্ণয়ের ওপর ভরসা রাখা, উপসর্গ সামলানো এবং প্রয়োজন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক না নেয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। আজ সচেতন না হলে, কাল সত্যিকারের সংক্রমণের সময় ওষুধ কাজ নাও করতে পারে এই বাস্তবতাটা এখনই বুঝে নেয়া জরুরি।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



