বরিশালের রাজনীতিতে এই দম্পতির নাম নতুন নয়। বহু বছর ধরে ক্ষমতা, দল ও জোটের অলিগলিতে তাঁদের যাতায়াত চেনা। সময় বদলেছে, দল বদলেছে, জোটের রংও বদলেছে। কিন্তু ব্যালটের পাতায় তাঁদের নাম বারবার ফিরে এসেছে।

কথা হচ্ছে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও তাঁর স্ত্রী নাসরিন জাহান রতনাকে নিয়ে।
ছয়বারের সংসদ সদস্য রুহুল আমিন। বিএনপিতে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত থিতু হন জাতীয় পার্টিতে। এরশাদের শাসনামলে এক বছরের বেশি সময় উপমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
দলীয় রাজনীতির তৃণমূল থেকে উঠে এসে একসময় তিনি মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে পৌঁছান। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন রুহুল আমিন। একই পথ ধরে রাজনীতিতে জায়গা করে নেন তাঁর স্ত্রী নাসরিন জাহান রতনাও। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্যের মতো প্রভাবশালী অবস্থানেও উঠে আসেন।
কিন্তু এখানেই তাঁদের রাজনৈতিক যাত্রা থেমে থাকেনি। তিনবারের সংসদ সদস্য হয়েও ২০২৪ সালের নির্বাচনে এসে নাসরিনকে পেতে হয় ভিন্ন অভিজ্ঞতা। ভোটে হেরে যায় জামানতও। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এটি ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় ধাক্কা।
২০২৬ সালের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে পুরনো এই দম্পতির নাম আবার ফিরছে ব্যালটের পাতায়।
জাতীয় পার্টি ও জেপির নেতৃত্বে নির্বাচনী জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) গঠিত হয়েছে। সেই জোট থেকে বরিশাল-৬ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন নাসরিন জাহান রতনা। আর তাঁর স্বামী রুহুল আমিন মনোনয়ন পেয়েছেন পটুয়াখালী-১ আসনে। দুজনই ইতোমধ্যে এনডিএফর হয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
হাওলাদরের উত্থান-পতন
বরিশাল-৬ আসনের রাজনীতিতে হাওলাদার পরিবারের প্রভাব বহু পুরনো। সামরিক শাসনামল থেকে জোট রাজনীতির উত্থান-পতনের সঙ্গে এই আসনের রাজনৈতিক ইতিহাস অনেকটাই এই পরিবারকে ঘিরে আবর্তিত হয়ে আসছে।
১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-১১ আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রুহুল আমিন। পরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে ওই আসন থেকে টানা দুইবার সংসদে যান।
তবে নব্বইয়ের দশকে এসে রুহুল আমিনের রাজনৈতিক ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তিনি তৃতীয় হন। সেবার বিএনপির মো. ইউনুস খান ৪২ হাজার ৩৬১ ভোট পেয়ে জয়ী হন, আর হাওলাদার পান ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও তাঁর অবস্থান ছিল তৃতীয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবেও তিনি তৃতীয় স্থানেই থেমে যান।
দীর্ঘ বিরতির পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবার দৃশ্যপট বদলায়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেয়। বরিশাল-৬ আসনে জোটের প্রার্থী হয়ে রুহুল আমিন হাওলাদার ৮৯ হাজার ২৩৭ ভোট পেয়ে সংসদে ফেরেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক কেন্দ্র বদলান তিনি। বরিশাল আসন স্ত্রী নাসরিন জাহান রতনার হাতে ছেড়ে দিয়ে পটুয়াখালীতে সক্রিয় হন রুহুল আমিন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে পটুয়াখালী-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যদিও দুটি নির্বাচনেই ভোটের মাঠে তাঁর সরাসরি উপস্থিতি ছিল সীমিত।
রতনার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ
এই সময়ের মধ্যেই জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে স্বামীর পাশাপাশি নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেন রতনা। ২০০৪ সালে বাকেরগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁর জনপ্রতিনিধির যাত্রা শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হন তিনি।
তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ না থাকায় বরিশাল-৬ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রতনা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সরাসরি ভোটে ওই আসন থেকে তিনি জয় পান। সেবার তিনি পেয়েছিলেন এক লাখ ৫৯ হাজারের বেশি ভোট। তবে ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই চিত্র আর থাকেনি। বরিশাল-৬ আসনে দ্বাদশ নির্বাচনে তিনি তৃতীয় হন। প্রাপ্ত ভোট ছিল মাত্র ৯ হাজার ১৮৮। নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী মোট প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশ ভোট না পাওয়ায় তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
জোটের প্রার্থী হয়ে আবার ভোটে নেমেছেন এই দম্পতি। একই সংসারে রাজনীতি, একই জোটে প্রার্থী, ক্ষমতার দীর্ঘ ছায়া কি আবারও ভোটের মাঠে ফিরবে, নাকি এবার ইতিহাস নেবে নতুন মোড়- বরিশাল ও পটুয়াখালীর রাজনীতিতে সেই প্রশ্নই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে। কারণ জোটনির্ভর রাজনীতির ওপর ভর করেই অতীতে এই দম্পতি নির্বাচনী রাজনীতিতে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন। তবে এবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থাকায় ভোটের সমীকরণ কতটা বদলাবে, তা নিয়েই নির্বাচনী এলাকায় জোর আলোচনা চলছে।
সূত্র ও ছবি : কালেরকণ্ঠ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



