গোপাল হালদার, পটুয়াখালী : প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কুয়াকাটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধনের আগেই সমুদ্রগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। দৃষ্টিনন্দন পর্যটন শহর কুয়াকাটাকে আকর্ষণীয় রূপ দিতে নির্মাণাধীন এই সড়কটির একাধিক স্থানে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। সমুদ্রের তীব্র স্রোতের ধাক্কায় ধসে পড়েছে সড়কের ফুটপাতসহ বেশ কয়েকটি অংশ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী এবং অপরিকল্পিত নির্মাণের কারণেই সড়কটি উদ্বোধনের আগেই এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের উদ্যোগে ১.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেরিন ড্রাইভ সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্প বাস্তবায়নে যুক্ত ছিল। কিন্তু স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী এবং কাজের মান ছিল তদারকিহীন।
জানা গেছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে বর্তমানে সমুদ্র উত্তাল। তারই প্রভাবে পানি বেড়ে যাওয়ায় সৈকতের পাশে নির্মিত মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও সবুজায়ন প্রকল্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কের কিছু অংশে ধস নেমে তা মিশে গেছে সৈকতের বালুচরে। এলাকার জনগণ আশঙ্কা করছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সমগ্র সড়কটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
সরেজমিনে কুয়াকাটার ডিসি পার্ক সংলগ্ন মেরিন ড্রাইভ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের নিচের বালির স্তর সরে গিয়ে একাধিক স্থানে বড় ধস নেমেছে। হাঁটার জন্য নির্মিত ফুটপাথের বহু অংশ ভেঙে পড়েছে সাগরে। পানির তোড়ে রাস্তাটির ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ায় সড়কটিতে হাঁটাচলা করাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম বলেন, “এত টাকা ব্যয়ে কাজ হলো, অথচ উদ্বোধনের আগেই রাস্তা ভেঙে পড়ল। যদি মানসম্মত নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে কাজ হতো, তাহলে এত সহজে রাস্তাটি ধসে পড়ত না। দোষীদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।”
এদিকে এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তীব্র সমালোচনা। প্রকল্পের ব্যয়, গুণগত মান এবং তদারকি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ প্রকল্পের মাধ্যমে লুটপাটের পথ তৈরি করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম জানান, “লঘুচাপের কারণে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে, আর সেই কারণে মেরিন ড্রাইভ সড়কের কিছু অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এখনো সড়কটির শতভাগ বিল পরিশোধ হয়নি। নতুন পৌর প্রশাসক নিয়োগের পর বিভিন্ন দফায় বিল ছাড় করানোর জন্য তদবির হয়েছে। রাস্তাটির বাকি বিল ও জামানত সরকারি কোষাগারে জমা আছে। আমরা অবশ্যই ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করব।”
এমনকি পৌর সূত্র জানিয়েছে, কাজের মান ও প্রকৌশল তদারকির বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে ঠিকাদারদের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি দুর্নীতি ও অদক্ষতা যদি এর জন্য দায়ী হয়, তাহলে সেটি শুধুমাত্র একটি অবকাঠামোর ক্ষতিই নয়-একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন শহরের উন্নয়নের পথে বড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন সচেতন মহল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।