লাইফস্টাইল ডেস্ক : মাথাব্যথায় ভোগেননি এমন লোক পৃথিবীতে পাওয়া সত্যি অসম্ভব। তবে মাথাব্যথা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। কারো ক্ষেত্রে এই সমস্যা স্থায়ী হতে পারে। যদিও সামান্য মাথাব্যথা কিছুটা বিশ্রাম, তরল খাওয়া বা ওষুধের মাধ্যমে উপশম করা যায়।
মাথা ব্যথা সাধারণত সব মানুষেরই হয়, তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি গুরুতর কোনো রোগ বলে গণ্য করা হয় না।
মাথা ব্যথার কারণ
ঘরে-বাইরে কাজের চাপে বিশ্রাম নেওয়ার সময় পাওয়া না গেলে চাপ পড়ে চোখ আর মাথার উপর। তখন অনেকেই মাথা ব্যথায় ভোগেন।
মাইগ্রেন মাথা ব্যথার কমন একটি কারণ। মাইগ্রেনের কারণে অনেকেই মাথা ব্যথায় ভুগে থাকেন। অতিরিক্ত টেনশনেও অনেকে মাথা ব্যথায় ভুগে থাকেন। গবেষণায় দেখা গেছে মাথা ব্যথার প্রায় ৭০ শতাংশই টেনশন টাইপ হেডেক।
এ ছাড়া ধূমপান, মদ্যপান, মাদকাসক্তি, অনিয়মিত ও অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন, রোদ বা অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া, অতিরিক্ত শারীরিক-মানসিক পরিশ্রম, ক্ষুধার্ত থাকা, মানসিক চাপ ইত্যাদি মাথাব্যথার কারণ।
মাথা ব্যথার ধরন
বিশ্ব হেডেক সোসাইটি মাথা ব্যথাকে দুই ভাগে ভাগ করে।
প্রাইমারি হেডেক: প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে মাথা ব্যথাগুলো প্রাইমারি হেডেক। এগুলো সিরিয়াস কোনো রোগ নির্দেশ করে না।
সেকেন্ডারি হেডেক: এটি মাথা, ঘাড় বা শরীরের অন্য কোনো অংশের সিরিয়াস কোনো রোগ নির্দেশ করে।
এ ছাড়া আরও রয়েছে যেমন,
১. সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথার নাম হলো টেনশন টাইপ হেডেক। এই মাথা ব্যথা সারা মাথাজুড়ে হয় এবং খুব একটা তীব্র না হলেও সারাক্ষণ থাকে।
২. দ্বিতীয় যে মাথাব্যথা হলো মাইগ্রেন। ছেলেদের থেকে মেয়েরা এতে বেশি ভুগে। সাধারণত মাথা একপাশে এ ব্যথা অনুভুত হয়। এটি টি.টি. এইচ এর মতো সারাক্ষণ চিনচিন করে নয় বরং থেমে থেমে হয় এবং সেটা তীব্র থেকে তীব্রতর।
৩. সাধারণত চোখ বরাবর যে ব্যথা হয় তাকে ক্লাস্টার হেডেক বলে। ক্লাস্টার হেডেক এ চোখ লাল হয়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখের দৃষ্টিতেও সামান্য ব্যঘাত হয়। দিনে রাতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর হয়, নির্দিষ্ট সময় নিয়ে থাকে তাই একে ক্লাস্টার হেডেক বলে।
৪. নাকের দু’পাশের হাড়ে ও কপালের হাড়ের ভেতর ছোট ছোট কিছু ফাঁকা জায়গা থাকে। এগুলোকে সাইনাস বলে। হাড়ের ভেতর এসব সাইনাসের আবরণে প্রদাহ হলে বাতাস ও সর্দি জমে থাকে। এর ফলে সাইনাসগুলো বরাবর তীব্র ব্যথা হয়। এটাই সাইনুসাইটিস ব্যথা নামে সাইনাস হেডেক নামে পরিচিত।
৫. মাসের প্রতিদিনই চিন চিন করে মাথাব্যথা হওয়াকে ক্রনিক ডেইলি হেডেক বলে।
৬. এ ছাড়া মেয়েদের শরীরের হরমোনের তারতম্যের জন্যে প্রায়ই মাথাব্যথা হয়। একে হরমোনাল হেডেক বলে। সাধারণত মাসিকের সময় বা আগে পরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায় বলে এই ব্যথা হয়। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় ও হরমোনের তারতম্যের জন্যে মাথাব্যথা হয়।
মাথা ব্যথার খারাপ লক্ষণ
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা গুরুতর কোনো রোগ নয়। তবে কিছু মাথা ব্যথা আছে যেগুলোকে কিছু গুরুতর রোগের উপসর্গ বা নির্দেশক বলা হয়ে থাকে।
১. যেকোনো মাথা ব্যথা ৫০ বছর বয়সে বা তার বেশি বয়সে প্রথম দেখা দেয়।
২. মাথা ব্যথাটা শুরু হওয়ার পর থেকে দিনে দিনে ব্যথার সংখ্যা ও মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে থাকা। যেমন ব্রেন টিউমারে এ রকম দেখা যায়। ব্রেন টিউমার ছাড়াও টিবি মেনিনজাইটিস, সারকোইডোসিস, লিম্ফোমা বা অন্যান্য কর্কট রোগ বা মেটাস্টেসিসের মতো দেখা যায়।
৩. হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা, ডায়াবেটিস বা রক্তনালির সমস্যা আছে—এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে হঠাৎ তীব্র মাথা ব্যথা হলে স্ট্রোক, সাব-অ্যারাকনয়েড হেমারেজ ইত্যাদি নির্দেশ করে।
৪. মাথা ব্যথার সঙ্গে আচার-আচরণ, চলাফেরা বা কথাবার্তায় অসংলগ্নতা হতে শুরু করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
৫. মাথাব্যথার সঙ্গে যেসব উপসর্গ দেখা দিলে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন তা হলো ডাবল ভিশন বা কোনো বস্তু দুবার দেখা, বমি হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, জ্বর বা অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, কথায় জড়তা আসা, ক্লান্তিবোধ হওয়া, ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার পরও ব্যথা না কমা, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আবার মাথাব্যথা শুরু হওয়া ইত্যাদি।
মাথা ব্যথা কমাতে করণীয়
মাথাব্যথা থেকে তাৎক্ষণিক পরিত্রাণ পেতে বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধ, যেমন প্যারাসিটামল ইত্যাদি সেবন করা যেতে পারে। ব্যথানাশক ওষুধের সঙ্গে অবশ্যই পেপটিক আলসাররোধী ওষুধ খেতে হবে। তবে খুব প্রয়োজন না হলে ঘন ঘন ব্যথানাশক ওষুধ না খাওয়াই ভালো।
১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন, কখনো খালি পেটে থাকবেন না। মোবাইল বা কম্পিউটারের পর্দা থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিন। হালকা শরীরচর্চা করুন।
২. রগের দুটো পাশ ও ঘাড়ের কাছে যদি খানিক ক্ষণের জন্য আঙুলের ডগা দিয়ে ম্যাসাজ করেন, তবে আরাম পাবেন ও ক্লান্তি দূর হবে। ক্লান্তির কারণে মাথা ধরলে এই ম্যাসাজ খুব উপকারী।
৩. অতিরিক্ত আলোর কারণে অনেক সময় মাথাব্যথা হয়ে থাকে। তাই মাথা যন্ত্রণা করলে ঘরের আলো কমিয়ে দিন।
৪. বেশি বেশি মাথা ব্যথা এবং অসহনীয় ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।