বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : রোগ নিরাময়ে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির খোঁজ দিলেন ভারতের চিকিৎসকরা। তারা জানান, আলো বিভিন্ন রোগের দাওয়াই হিসেবে কাজ করছে। যদিও Light Therapy থেলা বহুকাল আগে থেকেই ব্যবহৃত হচ্ছে।
ভারতের পুণের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ন্যাচারোপ্যাথি’র ন্যাচারোপ্যাথি ও যোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহ আলম এই চিকিৎসা পদ্ধতির খোঁজ নিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন রোগে কোন কোন আলো ব্যবহার করা হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
শিশু শরীরে প্রভাব বেশি : আলোর প্রভাব শিশুদের উপর খুব বেশি বোঝা যায়। একটি শিশুকে অনেকক্ষণ লাল আলোর মধ্যে রেখে দিলে তার মধ্যে প্রবল উত্তেজনা তৈরি হবে। সে রেগে যাবে। নীল আলোয় রাখলে শিশু শান্ত থাকবে। পশুদের ক্ষেত্রেও আলোর প্রভাব উল্লেখযোগ্য। আলোর রকমফেরে জীব-জন্তুর মেজাজও বদলে যায়। আজকাল অনেকে আবার রোদে রাখা ‘সোলারাইজড’ জল খাচ্ছেন। কেউ ক্রোমোথেরাপির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছেন অ্যারোমাথেরাপি, ক্রিস্টালস, ম্যাসাজ, যোগাথেরাপি। এই কম্বাইন্ড থেরাপি খুবই কার্যকর।
রোগ সারে নানা রংয়ে : লাল, হলুদ, নীল। এই তিনটি মৌলিক রং। এদের বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়েই যাবতীয় রং তৈরি করা হয়। এক-একটি আলোর এক এক রকম রোগ সারানোর ক্ষমতা। যেমন অ্যানিমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে লাল রং খুব উপযোগী। এই রং স্পাইনাল কর্ডের নিচে থাকা মূলাধার চক্রকে প্রভাবিত করে। বাড়িয়ে দেয় হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন। কিন্তু কখনওই ক্যানসার রোগীর উপর লাল রঙের ক্রোমোথেরাপি প্রয়োগ করা উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত হবে।
কমলা রং পরিপাকতন্ত্রকে পরিপুষ্ট করে হজম ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। থাইরয়েড গ্রন্থির কর্মক্ষমতা বাড়ায়। ‘মাসল ক্র্যাম্প’ সারিয়ে দেয়। সৃষ্টিশীল কাজে মনসংযোগের জন্য এই রং খুবই উপযোগী।
স্নায়ুতন্ত্রকে শক্তিশালী করে হলুদ রং। মনের জোর বাড়াতেও কার্যকরী। ডায়াবেটিস রোগীদের পাকস্থলী ও লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে হলুদ রং। সবুজ রং চোখের জন্য ভাল এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু গবেষণায় প্রমাণিত, এই রং জ্বর সারাতে পারে, হার্ট ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার ক্ষমতা রাখে। উচ্চ রক্তচাপ, মাথাধরা, হাপানিতে নীল রং কার্যকর। অনিদ্রা দূর করতে পারে বেগুনি রং।
গবেষণার সূত্র : আলোর এই ক্ষমতা নিয়েই আড়াই হাজার বছর আগে গবেষণা করেছিলেন পিথাগোরাস। খুঁজে বের করেন আলোর রোগ নিরাময়ের আশ্চর্য ক্ষমতা। পরবর্তীকালে যোগবিজ্ঞানীরা আলোর সঙ্গে শরীরের নানা চক্রের মেলবন্ধন ঘটান। ‘ক্রোমোথেরাপি’ নামে নতুন শব্দবন্ধের জন্ম হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানে। কোন রঙের
আলো, কোন রোগ সারায়, তার তালিকা তৈরি করেন। ভারত তো বটেই মিশর, চীনেও ‘ক্রোমোথেরাপি’ ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই তিন দেশে বিভিন্ন রঙের হলঘর তৈরি হয়। সেখানেই সমবেত চিকিৎসা হত। সেই সব এখন ইতিহাস।
বাক্সে লুকিয়ে থেরাপি : আসলে প্রতিটি রঙের এনার্জি লেভেল, তরঙ্গদৈর্ঘ্য আলাদা। আলোর ব্যবহার শরীরের চক্রগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যে আলোর কম্পন বেশি, সেই আলো তত বেশি গরম। কম্পন কম হলে আলোর প্রভাব ঠান্ডা হয়। এই বিজ্ঞানকে মাথায় রেখেই জানালার কাচের রং ঠিক করা যেতে পারে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, খাবারের রং, পোশাকের রং-ও শরীর-মনের উপর প্রভাব ফেলে। তবে ন্যাচারোপ্যাথি বিশেষজ্ঞরা ক্রোমোথেরাপির জন্য ক্রোমোথার্মোলিয়াম নামে একটি বিশেষ বাক্স ব্যবহার করেন।
সূর্যের আলো সেই বাক্সের মধ্যে পড়ে সাতভাগে ভাগ হয়ে শরীরের নানা অংশের উপর পড়ে। কোথাও আবার বেডের উপর নানা রঙের আলো লাগানো হয়। সেই বিছানায় রোগীকে শোয়ানো হলে শরীরের নানা অংশে নানা রঙের আলো পড়বে।
জেনে নিন কোন রং কোন রোগ সারাতে সাহায্য করে : লাল: অ্যানিমিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্যারালাইসিস। সবুজ: হাঁপানি, অনিদ্রা, হজমের সমস্যা, হৃদরোগ। নীল: অনিদ্রা, চিকেন পক্স, কলেরা, মৃগী। কমলা: থাইরয়েডের সমস্যা, পিরিয়ডের সমস্যা, গাউট, ডায়াবেটিস মেলিটাস। হলুদ: কোষ্ঠকাঠিন্য, অজীর্ণ, কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস, অর্শ। ইন্ডিগো: হাঁপানি, নিউমোনিয়া। বেগুনি: মূত্রথলি ও কিডনির সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, মৃগী, রিউম্যাটয়েড আর্থারাইটিস।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।