স্পোর্টস ডেস্ক : ক্যারাবীয় কিংবদন্তি ইয়ান বিশপ লিটন দাসের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হয়ে ধারাভাষ্যে বলেছিলেন ‘হি ইজ ড্রয়িং মোনালিসা’।
সময়ের সাথে সাথে ইয়ান বিশপকে সত্য প্রমাণে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছেন লিটন। ব্যাটিংটা মোনালিসা তো বটেই। তিনি স্বয়ং হয়ে উঠছেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি!
ভুল বলিনি একটুখানিও। রান তো সবাই করেন, ক’জন পারেন এমন জাদুকরী ব্যাটিংয়ে সবাইকে সম্মোহিত করে তুলতে। ক’জন পারেন মুগ্ধ হতে বাধ্য করতে? লিটন পেরেছেন। কেননা অনেক সাধারণের মাঝে তিনি অসাধারণ একজন!
সবুজের ক্যানভাসে উইলো নামক রঙতুলি হাতে কত নিখুঁত ছবি আকঁতে পারেন, তা ক্ষণে ক্ষণে জানান দিয়েছেন লিটন। জানান দিলেন আরো একবার। ‘ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস’ বাক্যটাই প্রমাণ তার।
লিটন রেকর্ড গড়েছেন, নতুন সব অর্জন ছুঁয়েছেন, তবে দিনশেষে চোখের প্রশান্তি তার ব্যাটিংটাই। যাতে মুগ্ধ হয়েছেন প্রতিপক্ষও।
যেই লিটনের গড়ে দেয়া ভিত্তিতেই বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হার, তাকে নিয়ে আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিংয়ের কোনো আক্ষেপ নেই, ক্ষোভ নেই। নেই তার ওপর কোনো রাগ-অভিমান। বরং লিটনে মুগ্ধতা ঝরে পড়ল স্টার্লিংয়ের মুখে।
ম্যাচ শেষে শুধু বললেন, ‘তাকে দেখতে ভালো লাগে, তার ব্যাটিং দেখে মনে হয়, ব্যাট করা কত সহজ!’ এটা অবশ্য নতুন নয়, প্রতিপক্ষের প্রশংসা এখন লিটনের অহরহই জুটে।
সবকিছু দূরে থাক, এবার কথা বলি ম্যাচ নিয়ে। রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায় আজো নাম লিখিয়েছেন নানান কীর্তিতে।
বুধবারে তার সবচেয়ে বড় কীর্তিটা হতো, প্রায় দেড় যুগের অক্ষত রেকর্ড ভেঙে দেশের হয়ে দ্রুততম অর্ধশতকের মালিক বনে যাওয়া। আশরাফুলের ২০ বলে পঞ্চাশের গল্প দ্বিতীয়তে ঠেলে ১৮ বলে পঞ্চাশ নিয়ে এখন এক নম্বরে লিটন দাস।
তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, ১৮ বল বা তার থেকেও কম বলে অর্ধশতক আরো আছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য কোনো ডট বল না খেলে মাত্র ১৮ বলের মাঝে পঞ্চাশ পূরণ করতে পেরেছেন শুধুই লিটন দাস।
এর আগে অবশ্য পঞ্চাশ করার পথে ডট ছাড়া ইনিংস আছে শোয়েব মালিক ও জেপি ডুমিনির। তবে তারা পঞ্চাশ ছুঁয়েছিলেন আরো বেশি বল খেলে।
আরো প্রাপ্তি আছে লিটনের। আইরিশদের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছেন তিনি, করেছেন ৮৩ রান। যা তিনি সাজিয়েছেন ১১ চার আর তিন ছক্কার মারে। এই সময় স্বীকৃত টি-টুয়েন্টিতে চার হাজার রানের মাইলফলকও পেরিয়েছেন লিটন।
আরো একটা রেকর্ড গড়েছেন লিটন, তবে এটা রনি তালুকদারের সাথে জুটি বেঁধে। আগের ম্যাচের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে উদ্বোধনী জুটিতে জ্বলে উঠেন লিটন-রনিরা। তাদের কাছে যেন কিং কর্তব্যবিমুঢ় ছিল আইরিশ বোলাররা।
সেই জুটি ভাঙে ১২৪ রানে। ততক্ষণে অবশ্য দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হয়ে গেছে উদ্বোধনী জুটিতে।
এদিকে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লেতে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৮১ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। হয়তো ছাপিয়ে যেতে পারতো তাকেও।
তবে বৃষ্টির কারণে ম্যাচের ওভার কমে আসায় তা আর সম্ভব হয়নি। পাঁচ ওভারের পাওয়ার প্লেতে ৭৩ রান তুলেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
তবে এমন দারুণ সব রেকর্ড গড়েও ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা তার হাতে উঠেনি। আক্ষেপ আছে শতক হাতছাড়া হওয়াতেও। নির্লিপ্তভাবে শতক স্পর্শ করা এই সুযোগ আর সম্ভাবনা দু’টিই ছিল তার হাতে। তবে তা আর হলো কই!
তবে শতক না পেলেও আরো একটা অর্জন আছে লিটনের নামের পাশে, আন্তজার্তিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পাওয়ার প্লেতে মিনিমাম সাত শ’ বল খেলা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের মাঝে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট লিটন দাসেরই, ১৪২.৫৭।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকান ওপেনার কুইন্টন ডি ককের স্ট্রাইক রেট ১৪১.৫১।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।