তৌফিক হাসান : মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তির আওতায় দেশটিতে বর্তমানে পর্যায়ক্রমে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে। তারই আওতায় গত ৩০ জানুয়ারি ১৭ জন শ্রমিককে কলিং ভিসায় দেশটিতে পাঠানো হয়। সেখানে একটি কম্পানিতে ভবন নির্মাণকাজে এই শ্রমিকদের পাঠায় বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১৩২৭)। কিন্তু ভিসার মেয়াদ না থাকায় এক দিন পরই ১ ফেব্রুয়ারি তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
একইভাবে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গ্রিনল্যান্ড ওভারসিজ (আরএল-৪০) নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ার আরেকটি কম্পানিতে ২৯ জন কর্মী পাঠায়। এর মধ্যে ১০ জন শ্রমিককে গ্রহণ করে বাকি ১৯ জনের ইমিগ্রেশন সার্ভারে ডাটা না পাওয়ায় তাঁদেরও ফেরত পাঠানো হয়।
প্রথম দফায় ফেরত আসা ১৭ জন শ্রমিকের একজন জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানার বালিজুড়ি ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম। ধানি জমি বিক্রি, আর বাড়ি বন্ধক রেখে মালয়েশিয়ায় যেতে চার লাখ ১০ হাজার টাকা জোগাড় করেন তিনি। সেই টাকা দেন রিক্রুটিং এজেন্সি ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনালকে। ওই এজেন্সি গত ৩০ জানুয়ারি কলিং ভিসায় তাঁকে মালয়েশিয়া পাঠায়। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আরো ১৬ জন শ্রমিকের সঙ্গে তাঁকেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। ফেরত আসার পর থেকে তারা রিক্রুটিং এজেন্সির কাছ থেকে আবারও পাঠানোর বারবার আশ্বাস পাচ্ছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কিছুই হয়নি।
হতাশ কণ্ঠে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখনো ভিসা-টিকিট কিছু পাইনি। শুনেছি কেউ কেউ ভিসা পেয়েছেন। আমাকে শুধু তারিখ দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই তারিখের আর শেষ হচ্ছে না। ১০-১২ দিন আগে বলেছিল ৫ এপ্রিল ভিসা পাব আর ১০ এপ্রিল টিকিট, ১৫ এপ্রিল ফ্লাইট। এর মধ্যে আমি ৮ থেকে ১০ বার রিক্রুটিং এজেন্সিকে ফোন করেছি। কিন্তু তারা ফোন না ধরে কেটে দিচ্ছে।’
রফিকুল বলেন, ‘মা-স্ত্রী দুটি ছোট বোন নিয়ে আমার সংসার। পুরো পরিবার আমার ওপর নির্ভরশীল। উপায় না পেয়ে এখন আমি রিকশা চালাই। কিভাবে যে আমার দিন যাচ্ছে, বলে বুঝাতে পারব না।’ দ্বিতীয় দফায় ফেরত পাঠানো ১৯ শ্রমিকের একজন বগুড়ার শাহিন আহমেদ।
শাহিন বগুড়ায় ব্যাটারিচালিত গাড়ি চালাতেন। মা-স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে তাঁর সংসার। সংসারের উন্নতির জন্য মালয়েশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাই নিজের গাড়িটি বিক্রি করে, বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে এবং কিস্তিতে ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়া যেতে জোগাড় করেন চার লাখ ৩০ হাজার টাকা। এই টাকা দেওয়া হয় গ্রিনল্যান্ড ওভারসিজ এজেন্সিকে।
স্বপ্নের মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এজেন্সির ভুলে দুই দিন পরই তাঁকে দেশে ফেরত আসতে হয়।
শাহিন আহমেদ বলেন, ‘অফিসে ফোন দিলে শুধু বলে কাগজপাতি ঠিক করেই আপনাদের জানাব। মেডিক্যাল হলেও ট্রেনিং করাবে বলে এখনো করায়নি। আমরা যখন ফেরত আসি তখন বলেছিল তিন সপ্তাহের মধ্যে আপনাদের আবার পাঠানো হবে। কিন্তু এর মধ্যে পার হয়ে গেছে দুই মাস। আমার প্রশ্ন, তাদের প্রতিশ্রুত তিন সপ্তাহ কবে শেষ হবে? বাধ্য হয়ে এখন ভাড়া গাড়ি চালিয়ে কোনোভাবে চলছি। সামনে কিভাবে কী করব, বুঝতে পারছি না।’
শ্রমিকদের অভিযোগ অস্বীকার করে রিক্রুটিং এজেন্সি ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনালের অপারেশন ম্যানেজার সোহেল বলেন, ‘আমরা সবার টিকিটের ব্যবস্থা করে ফেলছি। দ্রুতই তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ১২ এপ্রিল রাতেই আশা করছি তাদের পাঠানো যাবে।’ কলিং ভিসার মেয়াদ এবং কার ভুলে এই শ্রমিকরা এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দেননি তিনি।
গ্রিনল্যান্ড ওভারসিজের জেনারেল ম্যানেজার নজরুল ইসলাম স্বপন। বলেন, ‘এই শ্রমিকদের জন্য ফের ডাক পাঠানো হয়েছে। আমরা আবারও মেডিকেল টেস্ট করিয়েছি। সমস্যাটি নিয়োগ কর্তা কম্পানির ছিল। আমরা আমাদের প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী সব কিছু করছি। ভিসা হয়ে গেলে টিকিট করে এই শ্রমিকদের ফের পাঠানো হবে। আশা করছি, এ মাসের মধ্যেই ভিসা হয়ে যাবে।’
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক শহীদুল আলম বলেন, ‘এটা কোনো বড় খবর নয়। বাংলাদেশ থেকে গত ছয় মাসে এক লাখ ৩৭ হাজার লোক মালয়েশিয়া গেছে। এর মধ্যে অল্প কিছু মানুষের সমস্যা হয়েছে। এটাকে বড় খবর হিসেবে প্রচার করা উচিত হবে না। আমরা রিক্রুটিং এজেন্টগুলোকে চিঠি দিয়েছি। তারা যেন নিজস্ব খরচে লোকগুলোকে দ্রুত পাঠায়।’ সূত্র : কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।