আহমাদুল কবির : মালয়েশিয়া: মাই সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পে বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে শর্ত সহজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালয়েশিয়ার সরকার।বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ডা. আহমদ জাহিদ হামিদি এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেন।
তবে শর্তের সংশোধন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করবে না বলেও জানান তিনি। বিবৃতির দুদিন আগে, উপ-প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রকল্পটিতে বিদেশি নাগরিকদের আবেদনের প্রধান শর্তগুলির মধ্যে যা সংশোধন করা হবে তা হল ফিক্সড ডিপোজিটের পরিমাণ। এটি আবেদনকারীদের অবশ্যই থাকতে হবে। যা মূল্যবান ধাতু রূপা, সোনা ও প্ল্যাটিনামের তিনটি স্তর অনুসারে পরিবর্তিত হবে।
তিনি আরও জানান, আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য অভিবাসন বিভাগের সাথে কাজ করবে দেশটির সংশ্লিষ্ট বিভাগ। ফরম পূরণ করার পরে, তারা নিরাপত্তা অনুসারে যোগ্য কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য আবেদনটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে যাচাই করা হবে।
তবে সংশোধিত শর্তের অধীনে, আবেদনকারীরা ১০ বছরের আগে তাদের সম্পত্তি পুনরায় বিক্রি করতে পারবেন না এবং তাদের ভিসা প্রতি পাঁচ বছর পর নবায়ন করতে হবে। এছাড়া মালয়েশিয়ান সরকার আবেদনকারীদের জন্য তাদের সন্তানদের পছন্দের স্কুল বেছে নেয়ার সুবিধা দেবে। সরকার যা করছে তা হল, জাতীয় নিরাপত্তার সাথে আপস না করে বিদ্যমান ব্যবস্থার উন্নতি করা।
এছাড়া যারা ফরেস্ট সিটির জন্য (সম্পত্তি) আবেদন করছেন তাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়মে শর্তগুলো সহজ করা হবে। দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ আশা প্রকাশ করেন, পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবিলম্বে আরও মাই সেকেন্ড হোমে আবেদনকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
গত ১২ মার্চ পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি মন্ত্রী দাতুক সেরি টিয়ং কিং সিং দেশটির সংসদে বলেছিলেন, আরও বিদেশি নাগরিক মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রামে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ সরকার কিছু প্রয়োজনীয়তা শিথিল করার দিকে নজর দিয়েছে।
গত বছরের বাজেট ঘোষণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যেখানে পুত্রজায়া (সরকার) প্রোগ্রামটিকে আরও আকর্ষণীয় এবং প্রতিযোগিতামূলক করতে চায়। জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য, আবেদনকারীদের নিজেদের এবং তাদের নির্ভরশীলদের, তাদের জন্মস্থান বা বর্তমান বসবাসের দেশের কর্তৃপক্ষ দ্বারা জারি করা এবং যাচাই করা ভাল আচরণের একটি প্রশংসাপত্র জমা দিতে হবে বলেও যোগ ।
টিওং বলেন, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৬৬ সক্রিয় মাই সেকেন্ড হোম পাস হোল্ডার রয়েছে। যার মধ্যে পার্টিসিপেন্ট পাস হোল্ডার ২৭ হাজার ৭৫৯ ও নির্ভরশীল রয়েছে ২৮ হাজার ৩০৭।
এর মধ্যে চীন মোট ২৪ হাজার ৭৬৫ ধারক নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে, তারপরে দক্ষিণ কোরিয়া ৪ হাজার ৯৪০, জাপান ৪ হাজার ৭৩৩, বাংলাদেশ ৩ হাজার ৬০৪, যুক্তরাজ্য ২ হাজার ২৩৪, তাইওয়ান ১ হাজার ৬১১, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১ হাজার ৩৪০, সিঙ্গাপুর ১ হাজার ২৮২, ভারত ১ হাজার ২২৩ এবং অস্ট্রেলিয়ার রয়েছে ১ হাজার ৬৯।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রামটি ২০০২ সালে চালু করেছিল মালয়েশিয়া সরকার। যার মাধ্যমে বিদেশীদের সম্পত্তি কিনতে এবং মালয়েশিয়ায় একটি বর্ধিত সময়ের জন্য বসবাস করার অনুমতি দেয়।
প্রোগ্রামটিতে ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৬১০টি এবং ২০১৯ সালে ৩ হাজার ৯২৯টি আবেদন অনুমোদিত হয়। যদিও এই প্রোগ্রামটি ২০২০ সালের আগস্টে সাময়িক বন্ধ করা হয়েছিল। এরপর ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় ১ হাজার ৪৬৮টি আবেদন অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।
এদিকে সেকেন্ড হোম ক্যাটাগরির নানা আলোচনা ও সমালোচনার পর ২০২২ সালের অক্টোবরে মালয়েশিয়া সরকার নতুন করে পিভিআইপি নামক প্রিমিয়াম ভিসা চালু করে। যেটি প্রায় সেকেন্ড হোম ক্যাটাগরির। কিন্তু এ প্রোগ্রামে লক্ষ্যপূরণ করতে না পারলেও প্রোগ্রামটি বাতিল না করে পিভিআইপি’র লক্ষ্য পূরণে আরও অধিকতর পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটি চালুর পর প্রিমিয়াম ভিসা প্রোগ্রামের আওতায় ৯ মাসে মাত্র ২টি আবেদন অনুমোদন দিয়েছিল মালয়েশিয়ান সরকার। ভিসা আবেদনকারীদের অবশ্যই মালয়েশিয়ায় ১০ লাখ রিঙ্গিতের (বাংলাদেশি মুদ্রা প্রায় ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা) একটি স্থায়ী আমানত অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং প্রধান আবেদনকারীর জন্য এককালীন ২ লাখ রিঙ্গিত এবং ডিপেডেন্টের জন্য এককালীন ১ লাখ রিঙ্গিত ফি দিতে হবে। এছাড়া আবেদনকারীদের সংখ্যা মালয়েশিয়ার জনসংখ্যার ১ শতাংশে সীমিত রাখা হবে বলেও জানানো হয়। সূত্র : যমুনা টিভি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।