ধর্ম ডেস্ক : পৃথিবীতে সবকিছুর যেমন শুরু আছে, তেমনি তার শেষও আছে। আর শেষ শব্দটার সঙ্গেও মৃত্যু শব্দটার অনেক মিল। এই মৃত্যুর পরও রীতির অভাব নেই। কবরে নিয়ে দাফন সম্পন্ন করার আগে শেষ গোসলের রীতি অবশ্যই পালন করতে হয়। আর এই মৃতব্যক্তিকে গোসল দেয়া ফরজে কেফায়া। অনেকে গোসল দেয়াকে ওয়াজিব বলেছেন। তবে মানুষ মারা গেলে তাকে সঠিকভাবে গোসল দেয়া উত্তম।
এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো কুল বা বরই পাতা মেশানো হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল দেয়া। তবে মৃতব্যক্তিকে বরই পাতা মেশানো পানিতে গোসল দেয়ার কারণ কী? কেন বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল করানো হয়, এ বিষয়টি অনেকেই জানে না। মৃতব্যক্তিকে বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল দেয়ার কথা বলেছেন বিশ্বনবী। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণনা করেন, ‘এক ব্যক্তি আরাফাতে অবস্থানের সময় তার উটনী থেকে পড়ে যায়। এতে তার ঘাড় মটকে যায় (এতে সে মারা যায়)। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা কিয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে ওঠবে।’ (বুখারি)
শুধু হজে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির ব্যাপারেই প্রিয়নবী (সা.) এ ঘোষণা দেননি বরং তিনি তাঁর মেয়ে হজরত জায়নাব (রা.) মৃত্যুর পর তাকেও বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উম্মে আতিয়্যা আনসারী (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মেয়ে জায়নাব (রা.) ইন্তেকাল হলে তিনি আমাদের কাছে আসেন এবং বলেন, ‘তোমরা তাকে তিন, পাঁচ অথবা প্রয়োজন মনে করলে তারচেয়ে বেশি বার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবার কর্পূর বা কিছু কর্পূর ব্যবহার করবে। তোমরা গোসল শেষ করে আমাকে জানাও। আমরা গোসল শেষ করে তাকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাদরখানা আমাদের দিয়ে বললেন, এটি তাঁর গায়ে জড়িয়ে দাও।’ (বুখারি)
হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী মৃতব্যক্তির গোসলের পানিতে বড়ই বা কুলপাতা দেয়া ইসলামি শরিয়ত সম্মত একটা রীতি। কেননা বরই পাতা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য খুব কার্যকরী। যদি বরই পাতা না পাওয়া যায় তবে সাবান বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করাই যথেষ্ট। আর বরই পাতা মেশানো পানিতে গোসল করানো হলে প্রিয়নবী (সা.) এর সুন্নাত আদায় হয়।
অনেকে আবার এ রীতিকে ওয়াজিব বা আবশ্যক বলে থাকেন। তবে গোসলের পানিতে বরই পাতা দেয়া ওয়াজিব নয় বরং আলেমগণ হাদিসের এ নির্দেশনাকে মুস্তাহাব বলেছেন। বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় দেখেছে, বরই পাতায় রয়েছে বেশ কিছু এন্টিসেপটিক গুণাগুণ। বরই পাতা পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে একধরনের আঁঠালো প্রাকৃতিক নির্যাস পানির সঙ্গে মিশে যায়, যা মানব শরীরকে জীবানুমুক্ত করার একটি এন্টিসেপটিক হিসেবে দুর্দান্ত কাজ করে। যা প্রায় ১৪০০ বছর আগে আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) বলে গিয়েছিলেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মৃত মানুষকে বরই পাতা মেশানো হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল দেয়া। এতে মৃতের লাশ যেমন থাকবে জীবানুমুক্ত পরিচ্ছন্ন। আবার হাদিসের নির্দেশনার ওপরও হবে যথাযথ আমল। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। মানুষের মৃত্যুর পর বরই পাতা মেশানো হালকা গরম পানি দিয়ে উত্তম পদ্ধতিতে গোসল দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।