লাইফস্টাইল ডেস্ক : ঋতুস্রাব নারীর জীবনে একটি ক্রিয়া যা নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয়ে আবার নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়ে যায়। সাধারণত প্রতি মাসে ৭ দিন নারীদের ঋতুস্রাব চলে যেখানে শরীরে জমে থাকা দূষিত রক্ত বের হয়ে যায়। আগে নারীদের ঋতুস্রাব শুরু হতো ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সে। কিন্তু এখন সেই সময়কাল কমে ৭ থেকে ৮ বছরে এসেছে।
কোনও দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের মতো মেয়েদের শারীরিক গঠন এবং শারীরের কার্যকলাপে যে পরিবর্তন ঘটছে তার উল্লেখ রয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণায়। ১৮৪০ সালে উন্নত দেশগুলোতে মেয়েদের ঋতুচক্র শুরু হওয়ার বয়স ছিল গড়ে ১৭ বছর।
কিন্তু ২০০০ সালে সেই পরিসংখ্যানটি বদলে পাঁচ বছর এগিয়ে ১৩ থেকে ১৪ বছরে এসেছিল ঋতুস্রাব শুরুর গড় বয়স। তার জন্য অবশ্যই জিন এবং পরিবেশের ভূমিকা রয়েছে। খাদ্যাভাসের পরিবর্তনও এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়তি ওজনের সমস্যা সৃষ্টি করছে। অতিরিক্ত ফ্যাটজাত খাবার মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে তুলছে।
নির্দিষ্ট বয়সের আগে ঋতুচক্র শুরু হওয়ার সঙ্গে কিন্তু শারীরিক এবং মানসিক নানা রকম সমস্যার যোগ রয়েছে। মস্তিষ্কের কোথাও টিউমার হলেও হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তন আসতে পারে। আবার, এমন অনেক ওষুধ রয়েছে, যা প্রয়োগ করলেও হরমোনের হেরফের ঘটে। ফলে মেয়েদের শারীরিক বাড়বৃদ্ধি হয় দ্রুত গতিতে।
এছাড়া করোনা মহামারীর সময় বিভিন্নি পরিবর্তন শরীরে উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। পাশাপাশি অল্পবয়সিদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিসের মতো সমস্যা বেড়েছে।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং রোগমুক্তি পাওয়া নারীদের দেহে হরমোনের মাত্রায় হেরফের বিষয়ে ভারতের স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, পুরো বিষয়টিই কিন্তু ঘটছে হরমোনের কারসাজিতে। তা শুধু কোভিড কেন, আমরা যে প্লাস্টিকের বোতলে জল খাই, সেখান থেকে এক ধরনের রাসায়নিক বেরোয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওই রাসায়নিকটি মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করে। যে কোনও কারণে মেয়েদের শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে গেলেই পিউবার্টি বা বয়ঃসন্ধি এগিয়ে আসতে পারে। তাই কোভিড পরবর্তী সময়ে মেনার্কি এগিয়ে আসার ঘটনা এখন খুবই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।
শিশুকন্যাদের ঋতুস্রাবের সময় এগিয়ে আসার পাশাপাশি নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, যাদের সময়ের আগে ঋতুচক্র শুরু হয়, তাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ২৩ শতাংশ বেশি।
এছাড়া হার্টের শিরা-ধমনী সংক্রান্ত রোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। মেনস্ট্রুয়াল সাইকল শুরু হলে অনেক শিশুই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অনেকের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতাও বেড়ে যায়। তাই যে সময়েই বয়ঃসন্ধি আসুক না কেন, দেখে নেওয়া জরুরি, তার সঙ্গে শারীরিক কোনও জটিলতা রয়েছে কি না। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখাও জরুরি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।