আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গোয়েন্দা কাহিনিতে নানামুখী চরিত্র পাওয়া যায়। এসব কল্পকাহিনিতে নিজেকে লুকিয়ে রেখে অসাধ্য সাধন করে থাকে। রোমাঞ্চকর এসব চরিত্র পাঠকের হৃদয়ে ছাপ ফেলে। যদিও বাস্তবে এমন চরিত্র খুব একটা দেখা যায় না। যদিও একজনের বদলে অন্যজনের জেল খাটার মতো অনেক ঘটনাই পাওয়া যায়!
আসলেই কি বাস্তবে নিজেকে লুকিয়ে রেখে কেউ বেঁচে থাকতে পারেন? এ প্রশ্নকে অবান্তর করে নিজেকে মৃত ঘোষণা করে বেঁচে ছিলেন জুয়ান পুল গার্সিয়া। তিনি একজন ডাবল স্পাই অর্থাৎ দুই দেশের স্পাই (গুপ্তচর) হয়ে কাজ করতেন। যার জন্য নিজেই নিজেকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেছিলেন।
১৯১২ সালে বার্সেলোনায় জন্মগ্রহণ করেন জুয়ান। পড়াশোনা শেষ করে কাজ করতে শুরু করেন হার্ডওয়্যারের দোকানে। পারিবারিক খামার থাকায় সেখানেও কাজ করতেন জুয়ান। ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকায় চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে খুব সুখেই দিন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু ১৯৩৬ সালে তৈরি হয় বিপত্তি। স্পেন জুড়ে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে শুরু হয় যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অংশ নেন জুয়ান। এজন্য বাজেয়াপ্ত হয় তার জমি এবং তাকে জেল খাটতে হয়। সাজা শেষে জেল থেকে বের হয়ে একনায়কতন্ত্র ও হিটলার বাহিনীকে ঘৃণা শুরু করেন তিনি। ইউরোপ জুড়ে সে সময় বাজছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। নাৎসি জার্মানি একের পর এক দেশ দখল করছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময়ে দেশ ছাড়েন জুয়ান। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্নে পরিবার ছেড়ে পাড়ি জমান ব্রিটেনে। কিন্তু সেই স্বপ্ন যেন তার পূরণ হবার নয়। কারণ যুদ্ধ করার মতো শারীরিক শক্তি নেই বলে তাকে প্রত্যাখ্যাত করে উচ্চপদস্থ অফিসাররা। গোয়োন্দা বা গুপ্তচর হিসেবে কাজ করবে এমন স্বপ্ন থাকলেও নেই অভিজ্ঞতা। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরও থেমে থাকেননি জুয়ান, যোগ দেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে৷ হিটলার বাহিনীর সমর্থক সেজে পাড়ি জমান মাদ্রিদের নাৎসি দলে৷ অফিসারদের জানান, তিনি গুপ্তচর হয়ে জার্মানির জন্য কাজ করবেন। এরপর প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করেন জার্মানির গোয়েন্দা সদস্য হিসেবে।
প্রাথমিকভাবে জুয়ানকে লন্ডনে গুপ্তচর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু জুয়ান শুরু করেন বিশ্বাসঘাতকতা। স্পেনে বসেই দিতে থাকেন সব ভুয়া তথ্য। কখনো এর কাছে শুনে বা পত্রিকা পড়ে সঠিক তথ্যও দেন জুয়ান। ভুল তথ্য দিয়ে নাৎসি বাহিনীর পরিকল্পনা ধ্বংস করে দেয়। তার এই কার্যকলাপের খবর জানতে পারেন ব্রিটিশ গুপ্তচররা। এমআই ৫ থেকে তাকে গুপ্তচর হিসেবে কাজ করার আমন্ত্রণ জানানো হয়। ব্রিটেনে এসে ব্রিটিশ গুপ্তচরদের হয়ে কাজ শুরু করেন জুয়ান। জার্মানরা জুয়ানকে অগাধ বিশ্বাস করলেও সেসবের কোনো তোয়াক্কা করেননি তিনি। জার্মান বাহিনীর সব তথ্য ব্রিটিশ গুপ্তচরদের কাছে ফাঁস করে দিতেন। এই যুদ্ধে নরমান্ডিতে ব্যাপক আক্রমণের সম্মুখীন হয় জার্মান বাহিনী। ফ্রান্সের এই যুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর উপর হামলা করে মিত্রপক্ষের সেনারা৷ অথচ এ ব্যাপারে জানতেন না জার্মান সেনাবাহিনীর কেউ। কারণ এই ধরনের কোনো তথ্যই জার্মান বাহিনীকে দেয়নি জুয়ান। এর বছরখানেক পর থামে যুদ্ধ। জার্মান বাহিনী পরাস্ত হয়ে আত্মসমর্পণ করে।
সে সময় মিত্রবাহিনী জুয়ানের জন্য জয় পেলেও বিপদের শঙ্কায় ভুগছিলেন তিনি নিজেই। যে কোনো সময় তাকে হত্যা করতে পারে মিত্রপক্ষ। কারণ মিত্ররা ভাবতে পারে জুয়ান জার্মানের হয়ে কাজ করছে। এরপর জুয়ান পাড়ি জমান ভেনিজুয়েলায়। সেখানেও বেশ সমস্যা ও বিপদের আশঙ্কা করেন তিনি। জুয়ানের সঙ্গে সে সময় জার্মান নাৎসি দলের অনেকেই পাড়ি জমান লাতিন আমেরিকায়।
এরপর মারাত্মক এক চতুরতা অবলম্বন করেন জুয়ান। ভেনিজুয়েলা থেকে নিজেই এমআই ৫ সদর দপ্তরে খবর পাঠান, জুয়ান ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন; আর এ কথা যেন প্রচার করা হয়। পাশাপাশি জুয়ান প্রতিশ্রুতি দেন, ব্রিটিশ বাহিনীর কোনো কথাই কাউকে জানাবেন না তিনি। কাগজে-কলমে ১৯৪৮ সালে মারা যান জুয়ান। কিন্তু এরপরও প্রায় ৪০ বছর বেঁচেছিলেন তিনি। ব্রিটিশ সংসদের উদ্যোগে ১৯৮৪ সালে লন্ডনে ফেরেন; ১৯৮৮ সালে সেখানেই মারা যান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।