আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিলুপ্ত হতে যাওয়া বিরল পাখিদের বাঁচানোর শেষ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে হাওয়াইতে হেলিকপ্টার থেকে লাখ লাখ মশা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে একটি হেলিকপ্টার ২ লাখ ৫০ হাজার পুরুষ মশা দ্বীপে ছেড়ে দিচ্ছে। এভাবে ১০ কোটি পুরুষ মশা ছাড়া হয়েছে হাওয়াইতে।
দ্বীপপুঞ্জের পাখি হানিক্রিপার ম্যালেরিয়ায় মারা যাচ্ছে। উজ্জ্বল প্রাণবন্ত রঙ ও বৈচিত্র্যময় আকৃতির চঞ্চুর জন্য পরিচিত এই পাখি। একটি মাত্র মশার কামড়েই মৃত্যু হতে পারে এই পাখিদের। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশারা এখন মাটি ছেড়ে ক্রমে উঁচু জায়গায় উঠতে শুরু করেছে। হুমকির মুখে পড়ছে গাছে বাসা বাধা পাখিরা।
১৮০০ শতকের শুরুতে মশাবাহিত এভিয়ান ম্যালেরিয়ার কারণে একের পর এক হানিক্রিপার পাখির বিলুপ্তি শুরু হয়েছিল। এখনো ম্যালেরিয়া থেকে এই পাখিদের কোনো প্রাকৃতিক অনাক্রম্যতা নেই।
হানিক্রিপারের তেত্রিশটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ১৭টির মধ্যে অনেকগুলোই অত্যন্ত বিপন্ন। কয়েকটি প্রজাতি এক বছরের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে যদি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।
পাখি সংরক্ষণকারীরা জরুরিভিত্তিতে একটি অস্বাভাবিক কৌশল নিয়ে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, সেটি হল দ্বীপে আরও মশা ছেড়ে দেওয়া। এর জন্য ‘ইনকমপ্যাটিবল ইনসেক্ট টেকনিক’ নামে এক পদ্ধতি নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রতি সপ্তাহে একটি হেলিকপ্টার ২ লাখ ৫০ হাজার পুরুষ মশাকে একটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া আলবাচিয়ার সঙ্গে দ্বীপে ছেড়ে দিচ্ছে। এই ব্যাকটেরিয়া প্রাকৃতিক জন্ম নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। এই পরিবর্তিত পুরুষ মশাগুলোর সঙ্গে স্ত্রী মশাদের সঙ্গম হলে, স্ত্রী মশাদের ডিম থেকে বাচ্চা হওয়া রোধ হয়। ফলে, সামগ্রিকভাবে মশার সংখ্যা কমে। আর এভাবেই হানিক্রিপার পাখিদের মশার কামড়ের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে হাওয়াই কর্তৃপক্ষ।
চীন ও মেক্সিকোতে মশার সংখ্যা কমাতে এই কৌশলটি সফলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রোগ্রামের কার্যকারিতা গ্রীষ্মে আরও স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত সেই সময়ে মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। প্রকল্পটি ইউএস ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস, হাওয়াই প্রশাসন এবং মাউই ফরেস্ট বার্ড রিকভারি প্রজেক্ট সহ গ্রুপগুলির একটি জোট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
মাউই দ্বীপের হালেকালা জাতীয় উদ্যানের ফরেস্ট বার্ড প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী ক্রিস ওয়ারেন বলেছেন, একমাত্র জিনিস যা আরও দুঃখজনক তা হলো যদি পাখিগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং আমরা তাদের বাঁচানোর চেষ্টা না করি।
জাতীয় উদ্যান পরিষেবা অনুসারে কাউয়াই লতা বা আকিকিকি নামের একটি হানিক্রিপারের সংখ্যা ২০১৮ সালে ছিল ৪৫০। ২০২৩ সালে সংখ্যাটি পাঁচে নেমে এসেছে, এখন শুধুমাত্র একটি একক পাখি কাউয়াই দ্বীপে জঙ্গলে পড়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।