আবির হোসেন সজল : ভর্তি সুযোগ পেয়েও ঢাকা প্রকৌল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(ডুয়েটে) ভর্তি অনিশ্চিত মুদি দোকানের কর্মচারী অদম্য মেধাবী মিথুন রায়ের।
মিথুন রায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কুরুল গ্রামের দিনমজুর মিলন চন্দ্রের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, নিজের জায়গা জমি না থাকায় অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে দিনমজুরী আয়ে চলে মিলন চন্দ্রের ৫ সদস্যের সংসার। অভাব অনাটনের মাঝেও সন্তানদের লেখা পড়ায় বেশ আগ্রহী দিনমজুর মিলন চন্দ্র। এক ছেলে ও দুই মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বড় ছেলে মিথুন রায় অত্যান্ত মেধাবী। দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জারিত সংসার থেকে খেয়ে না খেয়ে ছেলের লেখা পড়ার খরচ যোগিয়েছেন মিলন চন্দ্র।
বড় ছেলে মিথুন রায় স্থানীয় ইটাপোতা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে ৪.৭২ জিপিএ নিয়ে এসএসসি পাশ করে রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়। টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হলে কলেজের ক্লাশের ফাঁকে ফাঁকে একটি মুদির দোকানের কর্মচারী ও প্রাইভেট পড়ায়ে নিজের খরচ চালান মিথুন। চার বছর খেয়ে না খেয়ে কঠোর পরিশ্রম করে ২০২৪ সালে ৩.৮৭ পেয়ে ডিপ্লোমা পাশ করে এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দেয়।
নিজেকে দক্ষ প্রকৌশলী করতে ঢাকা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ভর্তির আবেদন করে মিথুন রায়। মুদির দোকানে কর্মচারীর কাজের ফাঁকে পড়ালেখা করে ডুয়েটের ভর্তি যুদ্ধে অংশ নেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমে মিথুন রায় ডুয়েটে বিএসসি পড়তে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়। সুযোগ আসে জীবনের লক্ষ্যে পৌছার। কিন্তু সু খবরের মাঝে আর্থিক সংকটের দুঃচিন্তা এসে দাঁড়ায়। সুযোগ পেলেও ডুয়েটে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার। ডুয়েটে ভর্তি হতে আগামী ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা, বই খাতা থাকা খাওয়াসহ অনুষঙ্গিক মিলে গুনতে হবে প্রায় ৪০/৫০ হাজার টাকা। যা তার পরিবারের সাধ্যের বাহিরে।
ডুয়েটে ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদনও করেছেন মিথুন রায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সাড়া মেলেনি। অপর দিকে ভর্তির দিন ঘনিয়ে আসছে। ফলে দিন যত যাচ্ছে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন মাঝ পথে ভেঙে যাওয়ার শ্বঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত টাকার কোন ব্যবস্থা হয়নি।
ইটোপোতা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মকবুল হোসেন বলেন, মিথুন আমার প্রতিবেশি ও আমার ছাত্র। সে অত্যান্ত মেধাবী। তাকে সহায়তা করলে সে তার স্বপ্ন পুরন করতে পারবে।
মিথুন রায়ের মা প্রভাতি রানী বলেন, হামার মিথুন না কি ইঞ্জিনিয়ার হইবে। সেই জন্য মাইনসের (অন্যের) বাড়িতে ঝিয়ে কাজ করে টাকা দিয়েছি। এলা না কি ঢাকায় ভর্তি হতে ৪০/৫০ হাজার টাকা লাগে। হামরা গরিব মানুষ এত টাকা কোনটে পাই। কায়ো কি আছে মোর বেটাক টাকা দিয়ে পড়াইবে? । দিলে ভগবানের কাছে তার জন্য আর্শিবাদ করমো।
মিথুনের বাবা মিলন চন্দ্র বলেন, খেয়ে না খেয়ে টাকা দিয়েছি মিথুন পড়ালেখা করেছে। তার স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু গরিব মানুষ তাকে এত টাকা কেমনে দেই। কোথায় পাবো এত টাকা। কেউ সাহায্য করলে মিথুন বড় ইঞ্জিনিয়ার হইতো। তাই বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান তিনি।
মিথুন রায় বলেন, স্কুল জীবন থেকে স্বপ্ন দেখছি প্রকৌশলী হয়ে দেশের জন্য কাজ করব। সেই স্বপ্ন পুরন করতে বার বার প্রতিবন্ধকতা হয়েছে অভাব নামক দানব। তবে সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ডুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছি। এখন আর পারছি না। একই সঙ্গে এত টাকা দেয়া আমার পরিবারের পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। মাঝ পথে স্বপ্নের অপমৃত্যুও মেনে নিতে পারছি না। তাই সমাজের বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন করছি।
মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আসাদুল হক মন্টু বলেন, মিথুন গরিব হলেও অত্যান্ত মেধাবী। তাকে সহায়তা করলে সে তার স্বপ্ন পুরন করতে পারবে। তার স্বপ্ন পুরনে সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা কামনা করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।