আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনের সঙ্গে সীমান্ত অঞ্চলের সহিংসতা সরকার কার্যকরভাবে দমন করতে না পারলে মিয়ানমার টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জান্তা সরকারের প্রেসিডেন্ট সুয়ে।
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। খবর রয়টার্স, আলজাজিরার।
রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার জানিয়েছে, জান্তা-শাসিত মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট ইউ মিয়ন্ত সুয়ে বলেন, সম্প্রতি চীনের সঙ্গে সীমান্ত অঞ্চলে সহিংসতা দমনে অকার্যকর ব্যবস্থাপনার কারণে দেশ ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সীমান্ত অঞ্চলে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে তা সরকার কার্যকরভাবে দমন করতে না পারলে দেশ টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়বে।’
‘এ বিষয়টি খুব সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন রাষ্ট্রের জন্য এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন পুরো জাতিরই তাতমাদোকে (সেনাবাহিনী) সমর্থন করা দরকার।’
গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার জানিয়েছে, দেশের সামরিক অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল মিং অং হ্লাইং বৈঠকের শুরুতেই বলেন, এমএনডিএএ (মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি) পক্ষ থেকে ভয়াবহ হামলা মোকাবিলার পর সামরিক বাহিনী সফলতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পালটা জবাবে এমএনডিএএ’র মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বিভিন্ন গ্রুপের এমএনডিএএ-এর সঙ্গে তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরকান আর্মিও (এএ) যুক্ত রয়েছে। এমএনডিএএ জোটের সদস্যরা জানিয়েছেন, নিপীড়ক সামরিক স্বৈরতন্ত্রকে নির্মূল করতেই তারা হামলা চালিয়েছিল।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই জান্তা সরকার কঠিন সময় পার করছে। জান্তাবিরোধী বিভিন্ন বিদ্রোহী ও সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠী মিয়ানমারের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে শত শত জান্তা ঘাঁটিতে অহরহ হামলা চালাচ্ছে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে হটিয়ে এরই মধ্যে মধ্যাঞ্চলীয় একটি জেলা শহরের দখল নিয়েছে সরকারবিরোধী জোটের সেনারা। তারা সমন্বিত হামলা করে উত্তরাঞ্চলের শান রাজ্যের ডজনখানেক সামরিক স্থাপনা দখল করে নিয়েছে।
এছাড়া চীনের সীমান্তবর্তী দেশের পূর্বাঞ্চল এবং চিন শোয়ে হাও লক্ষ্য করে হামলা পরিচালনা করেছে।
৭ নভেম্বর এক বিবৃতিতে জোট বলেছে, তাদের স্থল অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং তারা আরও কয়েকটি সামরিক স্থাপনা দখলের সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার সামরিক অস্ত্রশস্ত্রও দখলে নিয়েছেন। মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণতান্ত্রিক সরকার হটিয়ে ক্ষমতা দখলের পর এ হামলাকে সামরিক বাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তারা বেসামরিক নাগরিকেদের সমন্বয়ে গঠিত পিপলস ডিফেন্স ফোর্সকে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা করছে বলেও জানা গেছে।
সশস্ত্র আন্দোলনের সঙ্গে আড়াই বছর ধরে লড়তে লড়তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এখন দুর্বল এবং মার খাওয়ার মতো অবস্থায় চলে এসেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। শান রাজ্যে ছড়িয়ে পড়া লড়াই সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রেসিডেন্ট দেশ কয়েক টুকরো হয়ে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।