দৃশ্যকল্প ১: ঢাকার গুলশানে বসবাসকারী রুমানা আক্তার (৩৪) রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে হতাশায় তাকিয়ে আছেন মিরর-এ। লকডাউনের পর থেকে ওজন বেড়েছে ১২ কেজি। জিমে যাওয়ার সময় নেই, ডায়েটিশিয়ানের ফি সামলানো কঠিন। এক বন্ধুর পরামর্শে তিনি ডাউনলোড করলেন মোবাইলে ক্যালরি ট্র্যাক করার অ্যাপ। তিন মাস পর, তাঁর ওজনের গ্রাফটা দেখে চোখ ছানাবড়া পুষ্টিবিদেরও। শুধু অ্যাপের সাহায্যে প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস ট্র্যাক করে তিনি ঝরিয়েছেন ৮ কেজি! রুমানার গল্প একা নয়। বাংলাদেশে ডিজিটাল স্বাস্থ্যবিপ্লবের নেপথ্যে কাজ করছে এই সহজ টুলটি—যা আপনার স্মার্টফোনকে পরিণত করছে ব্যক্তিগত পুষ্টিবিদে। একটু ক্লিকেই খুলে দিচ্ছে ফিটনেস সাফল্যের দরজা।
দৃশ্যকল্প ২: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আদনান। ক্রিকেটে পারফরম্যান্স বাড়াতে চান। পেশাদার ট্রেনার বললেন, “ক্যালরি কাউন্টিং ছাড়া মাসকেল বিল্ডিং অসম্ভব।” প্রোটিন-কার্বসের হিসাব রাখতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তারপর MyFitnessPal অ্যাপে বাংলাদেশি খাবার ডাটাবেজ পেলেন। এখন প্রতিটি ডাল-ভাত-ইলিশের পুষ্টিমান জানা তাঁর হাতের মুঠোয়। ছয় মাসে বডি মাস ইনডেক্স বেড়েছে ৭%—সবাই জিজ্ঞাস করে “রহস্যটা কী?” রহস্য কোনো জাদু নয়, মোবাইলে ক্যালরি ট্র্যাক করার অ্যাপ-এর নিয়মিত ব্যবহার। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে এই অ্যাপের ব্যবহার বেড়েছে ৩০০% (সূত্র: ডিজিটাল হেলথ বাংলাদেশ রিপোর্ট ২০২৩)। কিন্তু প্রশ্ন হলো—কীভাবে এই সিলিকন-ভিত্তিক সহকারী আপনার শরীরকে রূপান্তরিত করবে? কেন ঢাকার ব্যস্ত পথে হাঁটতে হাঁটতেও লাখো মানুষ ফোনে লগ করছে তাদের নাশতা?
মোবাইলে ক্যালরি ট্র্যাক করার অ্যাপ: স্বাস্থ্যবান বাংলাদেশ গড়ার ডিজিটাল সৈনিক
ওবেসিটি টাইম বোমা ফেটে যাচ্ছে বাংলাদেশে”—সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ রিপোর্ট। দেশের ৪০% প্রাপ্তবয়স্ক এখন ওভারওয়েট বা স্থূল। ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো অসংক্রামক রোগে প্রতি বছর মৃত্যু হচ্ছে ৩ লাখেরও বেশি। কিন্তু সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে আমাদের হাতের মুঠোয়। মোবাইলে ক্যালরি ট্র্যাক করার অ্যাপ শুধু খাদ্য লগবুক নয়, এটা এক সুক্ষ্ম আচরণগত মনস্তত্ত্বের হাতিয়ার। গবেষণা বলছে, শুধু খাবার ট্র্যাক করলেই দৈনিক ক্যালরি গ্রহণ কমে ২০-৩০% (Journal of Medical Internet Research)। বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে এর কার্যকারিতা আরও চোখে পড়ার মতো। কারণ:
- সচেতনতা তৈরি: আমরা জানি না এক প্লেট বিরিয়ানিতে থাকে ৮০০ ক্যালরি বা এক গ্লাস মাঠার লাচ্ছিতে ৪৫০ ক্যালরি! অ্যাপ ব্যবহারের প্রথম সপ্তাহেই ব্যবহারকারীরা বুঝতে পারেন—”আমার ‘হালকা নাশতা’ আসলে দিনের চাহিদার ৪০% ক্যালরি ঢুকিয়ে দিচ্ছে!”
- সাংস্কৃতিক অভিযোজন: Lose It! বা MyFitnessPal-এ এখন বাংলাদেশি খাবারের ডাটাবেজ। পাঁচটা সিঙ্গাড়া? লিখুন—অ্যাপই বলে দেবে ক্যালরি, প্রোটিন, ফ্যাট। চালকুমা, নারিকেলের সন্দেশ থেকে শুরু করে ইলিশ ভাজা—সবই আছে!
- অর্থনৈতিক সাশ্রয়: ঢাকায় ডায়েটিশিয়ানের সেশনের দাম গড়ে ৮০০-১২০০ টাকা। অথচ MyNetDiary প্রিমিয়াম ভার্সনের বার্ষিক খরচ মাত্র ২২০০ টাকা—যা দিচ্ছে ২৪/৭ কাস্টমাইজড গাইডেন্স।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: বাংলাদেশ ডিজিটাল হেলথ কেয়ার সলিউশনস লিমিটেডের সমীক্ষা বলছে, ৬৮% ব্যবহারকারী প্রথম তিন মাসে কমপক্ষে ৩-৫% ওজন কমিয়েছেন শুধু ক্যালরি ট্র্যাকিং অ্যাপের মাধ্যমে। আর যারা এক বছর ধরে ব্যবহার করছেন, তাদের ৮২%-ই ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে সফল।
ঢাকার বসুন্ধরায় ফিটনেস ট্রেনার শিমুল আহমেদের ক্লায়েন্টদের ৭০% এখন এই অ্যাপ ব্যবহার করেন। তাঁর কথায়, “পূর্বে ক্লায়েন্টরা বলতেন, ‘স্যার, ভুলে গেছি সকালে কী খেয়েছি!’ এখন অ্যাপের স্ক্রিনশট দেখালেই বুঝি কোথায় অতিরিক্ত ক্যালরি ঢুকছে। মোবাইলে ক্যালরি ট্র্যাক করার অ্যাপ ট্রেনার আর ক্লায়েন্টের মধ্যে তৈরি করেছে ট্রান্সপারেন্সির ব্রিজ।”
কেন এই মুহূর্তেই ডাউনলোড করা উচিত আপনার অ্যাপ?
আমার তো মেটাবলিজম স্লো!”—এই অজুহাত ভেঙে দিতে পারে একটি অ্যাপ। কারণ, ৯০% ওজন কন্ট্রোল নির্ভর করে ডায়েটে, ব্যায়াম শুধু ১০% (সূত্র: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন, ঢাকা)। কিন্তু সমস্যা হলো—মানুষ অনুমানে ভুল করে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণা দেখিয়েছে, মানুষ নিজের ক্যালরি ইনটেক ৪০-৫০% আন্ডারএস্টিমেট করে! মোবাইলে ক্যালরি ট্র্যাক করার অ্যাপ সেই গ্যাপ পূরণ করে ডাটা-ড্রিভেন ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে:
১. ব্যক্তিগত লক্ষ্য অনুযায়ী কাস্টমাইজেশন:
- ওজন কমানো, মাসল বিল্ডিং বা ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্ট—লক্ষ্য ভেদে অ্যাপ সাজায় আপনার নিউট্রিয়েন্ট টার্গেট।
- বাংলাদেশের আবহাওয়া ও শারীরিক গঠনভেদে ক্যালরি ক্যালকুলেশন। যেমন: একজন রিকশাচালকের দৈনিক চাহিদা (৩২০০ ক্যালরি) vs. অফিস কর্মীর (২০০০ ক্যালরি)।
২. রিয়েল-টাইম অ্যাকাউন্টেবিলিটি:
- প্রতিবার খাওয়ার আগে লগ করলে subconscious mind-এ কাজ করে—”আরেকটা রসগোল্লা খেলে টার্গেট ছাড়িয়ে যাবে!”
- সাপ্তাহিক রিপোর্ট দেখে বোঝা যায় কোন দিনগুলোতে আপনি “চিট” করেছেন। ফলে পরিকল্পনা নেওয়া যায়।
৩. বাংলাদেশি লাইফস্টাইলের সঙ্গে সামঞ্জস্য:
- Ramadan Mode: রোজায় সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি অনুযায়ী ট্র্যাকিং।
- Street Food Database: ফুচকা, চটপটি, জিলাপির মতো স্ট্রিট ফুডের পুষ্টিমান।
- Regional Settings: ক্যালরি শো করবে কিলোক্যালরিতে, ওজন কেজিতে, উচ্চতা সেন্টিমিটারে।
৪. বিজ্ঞানভিত্তিক ফিডব্যাক:
- Carb Manager, Cronometer-এর মতো অ্যাপগুলো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট (ভিটামিন ডি, আয়রন) ট্র্যাক করে—যার ঘাটতিতে ভোগে ৬৫% বাংলাদেশি নারী।
- পানিশূন্যতা এড়াতে জলপানের রিমাইন্ডার।
বাস্তব উদাহরণ: চট্টগ্রামের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রাফিদ। অফিসের ডেস্ক জব, ফাস্টফুডে আসক্তি। MyFitnessPal অ্যাপে দেখলেন—প্রতিদিন ৩৫০০ ক্যালরি নিচ্ছেন! টার্গেট সেট করলেন ২২০০। তিন মাসে কমালেন ১১ কেজি। তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি? “অ্যাপে দেখতাম দুপুরে যে বার্গারটা খাচ্ছি, তাতেই লাঞ্চ+ডিনারের ক্যালরি শেষ! তখনই বদলালাম অভ্যাস।”
কিভাবে বেছে নেবেন সেরা অ্যাপ? বাংলাদেশের জন্য গাইডলাইন
Play Store-এ “calorie tracker” সার্চ দিলে হাজির হয় শতাধিক অ্যাপ! কোনটা বাংলাদেশি ব্যবহারকারীর জন্য কার্যকর? পাঁচটি মাপকাঠিতে বিচার করুন:
১. বাংলাদেশি ফুড ডাটাবেজের ব্যাপ্তি:
- MyFitnessPal: ২০,০০০+ লোকাল ফুড এন্ট্রি (পাওয়া যায় হালিম, খিচুড়ি, নেহারি)
- FatSecret: কমিউনিটি-ড্রিভেন ডাটাবেজ। বাংলায় ইন্টারফেস।
- Avoid: যেসব অ্যাপে শুধু পশ্চিমা খাবার (Quinoa, Kale) ডোমিনেট করে।
২. অফলাইন এক্সেস:
- নেট সংযোগ না থাকলেও যেন লগ করা যায় (Cronometer-এ সুবিধা আছে)।
৩. গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা:
- GDPR বা HIPAA কমপ্লায়েন্ট অ্যাপ বেছে নিন (MyNetDiary, Yazio)।
- বাংলাদেশের ডাটা প্রোটেকশন আইন মেনে চলা জরুরি।
৪. প্রিমিয়াম vs. ফ্রি ভার্সন:
- ফ্রিতে মৌলিক ট্র্যাকিং (MyFitnessPal, Lose It!)।
- প্রিমিয়ামে বিএমআর ক্যালকুলেটর, ম্যাক্রো স্প্লিটিং, নো এডস (বার্ষিক ১০০০-২৫০০ টাকা)।
৫. হেলথ ডিভাইস ইন্টিগ্রেশন:
- ফিটবিট, মি ব্যান্ডের সাথে সিঙ্ক করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যালরি বার্ন ট্র্যাক হয়।
বাংলাদেশের শীর্ষ ৩ অ্যাপ (২০২৪):
- MyFitnessPal (ফ্রি/প্রিমিয়াম): সবচেয়ে বিস্তৃত বাংলাদেশি ফুড ডাটাবেজ।
- Lose It! (ফ্রি/প্রিমিয়াম): ওজন কমানোর জন্য ইনটুইটিভ ইন্টারফেস।
- HealthifyMe (প্রিমিয়াম): ভারতীয় অ্যাপ, তবে দক্ষিণ এশিয়ান খাবারে কভারেজ ভালো। লাইভ কোচিং সুবিধা আছে।
বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটির ওয়েবসাইট থেকে পাবেন স্থানীয় খাবারের পুষ্টিমানের রেফারেন্স ডাটা—অ্যাপে ম্যানুয়ালি এন্ট্রি দেওয়ার সময় কাজে লাগবে।
সাইড ইফেক্টস: সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন
যেকোনো টেকনোলজির মতো মোবাইলে ক্যালরি ট্র্যাক করার অ্যাপ-এরও কিছু ঝুঁকি আছে। পুষ্টিবিদ ড. ফারহানা রশীদের সতর্কবার্তা:
- অর্থোরেক্সিয়ার ফাঁদ: ক্যালরি মাপতে গিয়ে খাবারে ভয়! প্রতিটি গ্রাম নিয়ে obsession বাড়লে তা মানসিক ব্যাধিতে রূপ নিতে পারে।
- ডাটার ভুল: ইউজার-জেনারেটেড কনটেন্টে ভুল পুষ্টিমান থাকতে পারে। ক্রেতা সচেতনতা জরুরি।
- শারীরিক বৈচিত্র্যের উপেক্ষা: অ্যাপের অ্যালগরিদম একজন কৃষক ও ব্যাংকারের বিপাকীয় হার এক মনে করতে পারে!
নিরাপদ ব্যবহারের টিপস:
- প্রাথমিক লক্ষ্য সেট করুন একজন পুষ্টিবিদের সাথে।
- সপ্তাহে একদিন “ট্র্যাকিং-ফ্রি ডে” রাখুন।
- ক্যালরির পাশাপাশি খাবারের গুণগত মান (প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ানো) নজর দিন।
- শিশু, গর্ভবতী বা ইটিং ডিসঅর্ডারে আক্রান্তরা এড়িয়ে চলুন।
সফলতার গল্প: যখন ডিজিটাল টুল বদলে দেয় জীবন
কেস স্টাডি ১: নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টস কর্মী শেফালী (২৮)। রক্তশূন্যতা ও ওবেসিটিতে ভুগছিলেন। HealthifyMe অ্যাপে ডায়েট প্ল্যান কাস্টমাইজ করে ৬ মাসে ওজন কমালেন ১৫ কেজি। Hb লেভেল বেড়েছে ৩ ইউনিট! তাঁর মন্তব্য: “একজন ডায়েটিশিয়ান মাসে ৩০০০ টাকায় শুধু ডায়েট চার্ট দিত। অ্যাপে পেলাম রিয়েল-টাইম মনিটরিং, ২৪/৭ সাপোর্ট—মাসে ২০০ টাকায়!”
কেস স্টাডি ২: খুলনার ধানচাষি জাহাঙ্গীর (৫২)। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডাক্তারের পরামর্শে FatSecret অ্যাপে ভাত-মাছ-ডালের অনুপাত মেপে খেতে শুরু করলেন। তিন মাসে HbA1c লেভেল ৯.২ থেকে ৬.৮-এ! তাঁর কথায়, “অ্যাপ দেখিয়ে বললাম—আজ ৩০০ গ্রাম ভাত খেলাম, রক্তে শর্করা বাড়বে না তো?”
পরিসংখ্যান: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিক্সের জরিপ বলছে, ৫৪% ব্যবহারকারী মনে করেন অ্যাপ ব্যবহারের পর শারীরিক সক্রিয়তা বেড়েছে। কারণ, ক্যালরি বার্ন দেখলে “আরও ১০ মিনিট হাঁটব” বলে অনুপ্রেরণা জাগে!
প্রযুক্তি ও মানবিকতার সমন্বয়: ভবিষ্যতের রোডম্যাপ
মোবাইলে ক্যালরি ট্র্যাক করার অ্যাপ-এর ইভোলিউশন থামবে না। AI ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে আসছে আরও বিপ্লব:
- ফটো-বেসড ক্যালরি এস্টিমেশন: খাবারের ছত তুললেই অ্যাপ বলবে পুষ্টিমান (Google Lens-এর কল্যাণে)।
- বাংলাদেশি রেসিপি স্ক্যানার: মা’র হাতের খাবার ডায়াগ্রাম থেকে অটোমেটিক ক্যালরি ক্যালকুলেশন।
- লোকাল হেলথকর্মীর সাথে কানেক্টিভিটি: গ্রামাঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা অ্যাপ ডাটা দেখে পরামর্শ দেবেন।
- সরকারি ইন্টিগ্রেশন: জাতীয় ডিজিটাল হেলথ রেকর্ডের সাথে সিঙ্ক করলে ডাক্তার পাবেন রিয়েল-টাইম ডায়েট ডাটা।
বাংলাদেশে এই টেকের সম্প্রসারণে বাধা হলো—ডিজিটাল সাক্ষরতা ও ইন্টারনেট অ্যাক্সেস। সমাধান? অফলাইন মোড, ভয়েস কমান্ড (বাংলায়), লো-এন্ড ডিভাইসে অপ্টিমাইজেশন। ইতিমধ্যে ডাক বিভাগের “ডিজি হেলথ” অ্যাপে ক্যালরি ট্র্যাকিং ফিচার যুক্ত হয়েছে—যা পৌঁছে যাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
জেনে রাখুন
১. প্রশ্ন: মোবাইলে ক্যালরি ট্র্যাক করার অ্যাপ কি সত্যি ওজন কমাতে সাহায্য করে?
উত্তর: হ্যাঁ, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। নিয়মিত ট্র্যাকিং ক্যালরি সচেতনতা বাড়ায়, যা ডায়েট ম্যানেজমেন্টের মূল ভিত্তি। ২০২৩-এ আমেরিকান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণায় ৮৯% অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য ওজন হ্রাসের কথা জানিয়েছেন। তবে শারীরিক পরিশ্রম ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের সাথে একে যুক্ত করতে হবে।
২. প্রশ্ন: কোন ক্যালরি কাউন্টিং অ্যাপে বাংলাদেশি খাবার ভালো কভার করে?
উত্তর: MyFitnessPal ও FatSecret-এ বাংলাদেশি খাবারের সবচেয়ে বিস্তৃত ডাটাবেজ আছে। আপনি হাতে তৈরি পরোটা, কাচ্চি বিরিয়ানি, নারিকেলের সন্দেশ—সবই পাবেন। কমিউনিটি কন্ট্রিবিউটররা প্রতিনিয়ত নতুন আইটেম যুক্ত করছেন। প্রিমিয়াম ভার্সনে কাস্টম ফুড এন্ট্রি সুবিধাও থাকে।
৩. প্রশ্ন: ডায়াবেটিস রোগীরা কি এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন?
উত্তর: অবশ্যই! বরং ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্টে কার্বোহাইড্রেট ট্র্যাকিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। Cronometer বা Carb Manager অ্যাপে ব্লাড সুগার লেভেলের সাথে খাদ্যাভ্যাসের করেলেশন দেখানো হয়। তবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ওষুধের উপর নির্ভরশীল—তাই ডাক্তারের পরামর্শের বিকল্প নয়।
৪. প্রশ্ন: ফ্রি অ্যাপ vs. প্রিমিয়াম—কোনটা নেব?
উত্তর: ওজন কমানোর প্রাথমিক পর্যায়ে MyFitnessPal বা Lose It!-এর ফ্রি ভার্সনই যথেষ্ট। প্রিমিয়াম নেবেন যদি ডিটেইল্ড নিউট্রিয়েন্ট রিপোর্ট, মিল প্ল্যানিং বা এড-ফ্রি এক্সপেরিয়েন্স চান। HealthifyMe-এর প্রিমিয়ামে লাইভ নিউট্রিশনিস্ট কনসাল্টেশন সুবিধা আছে—মাসে ৫০০-৮০০ টাকা খরচ।
৫. প্রশ্ন: ক্যালরি ট্র্যাকিং কি খাবারের আনন্দ নষ্ট করে?
উত্তর: মোটেই না, বরং তা দায়িত্ববোধ শেখায়। সপ্তাহে ৮০% সময় ট্র্যাক করলে ২০% সময় চিট ডে নিতে উৎসাহিত করেন বিশেষজ্ঞরা। অ্যাপের রিপোর্ট দেখে আপনি বুঝবেন—”আজ দুপুরে অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে রাতে হালকা ডিনার করলেই ব্যালেন্স হবে!” এতে গিল্ট কমে, নিয়ন্ত্রণ বাড়ে।
৬. প্রশ্ন: মোবাইল অ্যাপের ডাটা কতটা নির্ভরযোগ্য?
উত্তর: বড় কোম্পানির অ্যাপ (MyFitnessPal, Yazio) USDA বা জাতীয় পুষ্টি ডাটাবেজ ব্যবহার করে—তাই নির্ভরতা বেশি। তবে ইউজার-জেনারেটেড কনটেন্টে ভুল থাকতে পারে। তাই রেস্টুরেন্ট ফুডের ক্ষেত্রে আনুমানিক মান নেবেন না। ঘরে তৈরি খাবার মেপে লগ করাই ভালো।
সতর্কতা: গর্ভবতী মহিলা, বর্ধিতশীল শিশু বা খাদ্যজনিত মানসিক সমস্যায় (Anorexia, Bulimia) আক্রান্ত ব্যক্তিরা পুষ্টিবিদের তত্ত্বাবধান ছাড়া ক্যালরি ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যবহার করবেন না। অ্যাপের সুপারিশ চিকিৎসা পরামর্শের বিকল্প নয়।
বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রাম—প্রতিটি স্মার্টফোন এখন হতে পারে আপনার স্বাস্থ্যরক্ষার হাতিয়ার। মোবাইলে ক্যালরি ট্র্যাক করার অ্যাপ শুধু সংখ্যা দেখায় না, এটি তৈরি করে এক ধরনের আত্ম-সচেতনতা, যা প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি বাইটকে করে তোলে অর্থপূর্ণ। রুমানা, আদনান, শেফালী, জাহাঙ্গীরের সাফল্য প্রমাণ করে—এই ডিজিটাল সহকারী শুধু ওজন কমায় না, বদলে দেয় জীবনযাপনের দর্শন। আপনার ফিটনেস যাত্রা শুরু হোক আজই। ডাউনলোড করুন একটি অ্যাপ, সেট করুন রিয়েলিস্টিক গোল, হয়ে উঠুন আপনার নিজের নিউট্রিশন এক্সপার্ট। কারণ, সুস্থ শরীরই তো জীবনের প্রথম সৌভাগ্য!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।