আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত পাঁচ বছর জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিতি থাকলেও কানাডায় আসন্ন জি-৭ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য এখনো আমন্ত্রণ পাননি নরেন্দ্র মোদি।
জি-৭ হলো শিল্পোন্নত পশ্চিমা দেশ এবং জাপানের একটি অনানুষ্ঠানিক জোট। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা এই গ্রুপের সদস্য। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্ব ব্যাংক এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিও এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকেন।
ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, এরই মধ্যে কানাডার আমন্ত্রণ দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউক্রেন এবং অস্ট্রেলিয়া গ্রহণ করেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদির সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
ছয় বছরের মধ্যে এই প্রথমবার এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ভারত ও কানাডার মধ্যে চলমান শীতল সম্পর্কের ইঙ্গিত এটি।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নেতৃত্বে এ বছরের জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন আগামী ১৫-১৭ জুন আলবার্টার কানানাসকিস রিসোর্টে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, শুধু আমন্ত্রণ না জানানো নয়, দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশও তৈরি হয়নি। এ কারণে মোদির উপস্থিতি অনিশ্চিত।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী হারদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় ভারত সরকারের এজেন্টদের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলার পর থেকেই ভারত-কানাডা সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে।
ভারত এই অভিযোগকে ‘অমূলক’ আখ্যা দিয়েছে। এরপর উভয় দেশ একে অপরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে এবং সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়।
যদিও কানাডার নির্বাচনে কার্নির জয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উষ্ণতা ফেরার আশা জেগেছিল। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভিত্তি এখনো তৈরি হয়নি। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য হিন্দুকে বলেন, ‘শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে একটি বৈঠক একটি বড় অগ্রগতির প্রত্যাশা বাড়াত, কিন্তু সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য আরও কাজ বাকি।’
দিল্লি ও অটোয়ার মধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইতিবাচক বার্তা বিনিময় হলেও, তা মোদির জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে সফরের রূপ নাও নিতে পারে বলে জানা গেছে।
২০১৯ সাল থেকে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান এবং ইতালি ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক গুরুত্ব এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের আউটরিচ সেশনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে।
সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, উভয় দেশের রাজধানীতে হাইকমিশনার নিয়োগের মাধ্যমে ভারত ও কানাডা সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে প্রথম পদক্ষেপ নিতে পারে। নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ভারতের রাষ্ট্রদূত এবং আরও পাঁচজন কূটনীতিককে ‘সন্দেহভাজন ব্যক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করার পর ভারত গত বছর দূতকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকে এই পদ শূন্য।
কানাডায় খালিস্তানপন্থীদের তৎপরতা, বিশেষ করে ভারতের পক্ষ থেকে যেকোনো উচ্চ পর্যায়ের সফরের সময় বিক্ষোভের সম্ভাবনা নিয়েও ভারতীয় পক্ষ উদ্বিগ্ন।
যদিও কার্নি সরকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনর্গঠনে আগ্রহী। এখন ধীরে ধীরে সম্পর্ক জোরদার করার দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দ, যিনি সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।
অটোয়ার ওপর খালিস্তানপন্থী এবং ভারত-বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকেও নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ না জানানোর জন্য চাপ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মতামত প্রকাশ করা হয়েছে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী শিখস ফর জাস্টিস (এসএফজে) নরেন্দ্র মোদি কানাডায় এলে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছে।
এবারের সম্মেলনে মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারাও আলবার্টায় উপস্থিত থাকবেন। দক্ষিণ আফ্রিকা এ বছর জি-২০-এর স্বাগতিক দেশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।