জুমবাংলা ডেস্ক : কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদ। জেলা শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত এ মসজিদ নিয়ে মুসলিমসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস, এখানে দান করলে মনের বাসনা পূরণ হয়। আর তাই তিন মাস পরপর দানবাক্স খুলে নগদ টাকা পাওয়া যাচ্ছে কয়েক কোটি। সঙ্গে থাকছে বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হিরে।
সাধারণত তিন মাস পর পর দানসিন্দুকগুলো খোলা হয়। সর্বশেষ ৯ ডিসেম্বর ৯টি দানবাক্স থেকে মেলে ২৩ বস্তা টাকা। মসজিদ-মাদ্রাসার ১৩৮ জন ছাত্র এবং রূপালী ব্যাংকের ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে মোট ১৯৮ ব্যক্তি দিনভর গুনে পান ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এযাবৎ পাওয়া দানের টাকা এটিই সবচেয়ে বেশি। টাকার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ হিসাবে, এ বছর পাওয়া গেছে ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা। ২০২২ সালে তিন ধাপে পাওয়া গিয়েছিল ১১ কোটি ২৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯২ টাকা। আর ২০২১ সালে পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ৮০ লাখ ১৯ হাজার ৬২৪ টাকা।
গত তিন বছরই দানের টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। দানের পরিমাণ বাড়তে থাকায় দেশবাসীর কৌতূহল—দানের এত টাকা আসলে কোথায় ব্যয় হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসক মসজিদ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ২৯ সদস্যের কমিটিতে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন। পাগলা মসজিদের নামে রূপালী ব্যাংকে একটি হিসাব রয়েছে। এই হিসাবে দানের টাকা জমা রাখা হয়। ওয়াক্ফ এস্টেটের অডিটর দ্বারা প্রতিবছর পাগলা মসজিদের আয়-ব্যয়ের অডিট করা হয়।
কমিটি সূত্র জানায়, অডিটের পর প্রতি অর্থবছরে আয়ের ওপর ৫ শতাংশ ওয়াক্ফ প্রশাসন চাঁদা নিয়ে যায়। ব্যাংকে রাখা দানের টাকা থেকে মসজিদ-মাদ্রাসার ৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ৫ লাখ টাকা, আনসারের বেতন বাবদ প্রায় ২ লাখ, মসজিদ-মাদ্রাসার ১৩০ ছাত্রের যাবতীয় ভরণপোষণ ও জামাকাপড় বাবদ প্রায় ৫ লাখ, বিদ্যুৎ বিল প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার, মসজিদ-মাদ্রাসার গ্যাস বিল বাবদ প্রায় ১৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এ ছাড়া আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ বছরে প্রায় ৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়।
কমিটি জানায়, ব্যাংকে জমা টাকার লভ্যাংশ থেকে গত অর্থবছরে ১১১ জন ক্যানসার রোগীকে ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।হার্টের সমস্যাজনিত ৪৮ জন রোগীকে ২০ হাজার, ৩৫ জন কিডনি রোগীকে ২০ হাজার, ২৭ জন পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীকে ২০ হাজার এবং ১০৪ জন সাধারণ রোগীকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
গত অর্থবছরের ৩০ মার্চ পাগলা মসজিদ থেকে চিকিৎসা সহযোগিতা বাবদ ৩০ হাজার টাকা পান ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী, জেলা শহরের হারুয়া এলাকার আবু হানিফ। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে না পেরে পাগলা মসজিদে আবেদন করি। পরে কমিটি ৩০ হাজার টাকা মঞ্জুর করে।’
এ ছাড়া পাগলা মসজিদটি ভেঙে ছয়তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।
পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাগলা মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয়। পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা যাচাই-বাছাইয়ের পর নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।