জুমবাংলা ডেস্ক: বসতবাড়ির জমি লিখে না দেওয়ায় ৮০ বছর বয়সী মাকে মারধর করে দুই হাত ভেঙে দিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা ছেলে ও তার স্ত্রী। নির্যাতনের শিকার নারীকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার হাত, পা ও মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
আঘাতের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলে রাজীব আলী ডনকে বৃহস্পতিবার (৫ মে) গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
রাজীব আলী ডন ন্যাশনাল ব্যাংক নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। তার স্ত্রী খালেদা বেগম গৃহিণী।
ঈদের দিন মঙ্গলবার (৩ মে) রাত ৮টার সময় দিনাজপুর শহরের বড়বন্দর নতুন পাড়া মহল্লার বাড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার মা রেজিয়া খাতুন প্রাইমারি স্কুলের সাবেক শিক্ষক ছিলেন। তিনি বড়বন্দর নতুন পাড়া মহল্লার মৃত বাহার আলীর স্ত্রী। তার স্বামীও দিনাজপুর জিলা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
মামলা, ভুক্তভোগী ও স্বজনদের দেওয়া তথ্যের মাধ্যমে জানা গেছে, রেজিয়া বেগমের দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে মারা গেছেন। স্বামীও গত হয়েছেন অনেক আগে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ছেলে রাজীব আলী ডন ব্যাংক কর্মকর্তা। ছোট ছেলে ও বড় ছেলের রেখে যাওয়া এক সন্তানকে নিয়ে বড়বন্দর নতুন পাড়ায় বসবাস করেন তিনি। বেশ কিছুদিন থেকেই ছেলে মায়ের কাছে বসতবাড়ির ১৬ শতাংশ জমি লিখে নিতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু মা তাতে রাজি হচ্ছিলেন না। একসময়ে ছেলের জেদাজেদি ও নির্যাতনের কারণে তিন শতাংশ জমি লিখে দেন। কিন্তু সম্পূর্ণ জমিই লিখে নেওয়ার জেদ ছাড়েননি। বাকি জমি লিখে না দেওয়ায় নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। গত ১৯ রমজান মাকে নির্যাতন করেন। সেদিন পরিবারের লোকজন ও পুলিশের সমঝোতায় ছাড় পান তিনি।
ঈদের দিন রাত ৮টার সময় ছেলে ও তার স্ত্রী মিলে রেজিয়া বেগমকে বাকি জমি লিখে দিতে চাপ দেন। এতে রাজি না হওয়ায় তারা অমানবিক নির্যাতন করেন। চলাফেরার সাহায্যে ব্যবহার করা লাঠি কেড়ে নিয়ে সেই লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারধর করেন এবং লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেন। হাত, পা, পিঠ, পেটসহ শরীরের সমস্ত স্থানেই আঘাত করা হয়। নির্যাতন সইতে না পেরে একপর্যায়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আবারও বাইর থেকে বাড়িতে এনে নির্যাতন অব্যাহত রাখেন। একপর্যায়ে তিনি কান্নাকাটি শুরু করেন। এ সময় বড় ছেলের সন্তান (নাতি) লিমান ফুফুদেরকে খবর দেয়। তারা ও এলাকাবাসী এসে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। নির্যাতনের ফলে দুই হাত ভেঙে গেছে। মাথায় আঘাত পেয়েছেন, হাতে ও পায়ে ক্ষত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে খবর পেয়ে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অপারেশন থিয়েটারের সামনে দুই হাতে প্লাস্টার করার জন্য দুই মেয়েকে নিয়ে অপেক্ষা করছেন রেজিয়া বেগম। তার দুই হাত ফোলা। বাহুতে আঘাতের পর কালো দাগ পড়েছে। পায়েও রয়েছে একই দাগ। তার পিঠে শক্ত কিছুর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঠিকভাবে হাঁটতে পারছেন না। তাকে যখন হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় তখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে অনেক কষ্টে চলতে হচ্ছে।
ছোট মেয়ে জনতা ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা মোছা. সামসি জাহান বকুল বলেন, ‘এর আগেও মাকে মারধর করেছে ভাই। এবারে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দিয়ে নিজেই মায়ের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গিয়েছিল। এ সময় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আমি এই ঘটনায় একটি মামলা করেছি। আমি চাই, যাতে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।’
আরেক মেয়ে আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘আমার বাবা শিক্ষক, মাও শিক্ষক ছিলেন। ভাইবোন সবাই শিক্ষিত। বাবা-মা আমাদের শিক্ষিত করেছেন। সেই পরিবারে মাকে মারধর করা হয়েছে, এটি মেনে নেওয়ার মতো না। আমরা চাই, তার এমন শাস্তি হোক যাতে করে আর কোনও ছেলে তার মাকে মারধর না করে।’
অপারেশন থিয়েটারের সামনে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রেজিয়া বেগম বলেন, ‘বার বার ছেলেকে বলছিলাম, বাবা আমি তোমার মা, আমাকে মারিস না। আমি বংশের সবচেয়ে বড় সন্তান। তোর বাবা কিংবা আমার বাবা ও পরিবারের কোনও লোকজন আমার গায়ে কখনও হাত তোলেনি। কিন্তু আমার ছেলে কোনও কথা না শুনেই আমাকে মারধর করে। ছেলের নির্যাতনে আমি হাসপাতালে। আর যে ছেলেকে আদর-যত্ন করে মানুষ করেছি সেই ছেলে জেলে। আমি দেশের প্রচলিত আইনে এই ঘটনায় ছেলের বিচার চাই। যাতে কোনও মা ছেলের দ্বারা নির্যাতনের শিকার না হয়।’
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘ওই ছেলে থানায় এসেছিল, মায়ের বিরুদ্ধে মামলা দিতে। কিন্তু পুলিশ মাকে মারধরের বিষয়টি জানার পর তাকে আটক করে। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দিলে ওই মামলায় আসামি করে আদালতে পাঠানো হয়। বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।