লাইফস্টাইল ডেস্ক : বর্তমানে নানান ধরনের বীজ খুব জনপ্রিয়। প্রতিদিনের খাদ্য চাহিদাতে বীজ রাখা জরুরি। কারণ আমাদের প্রতিদিন খাবার তালিকা যা যা থাকে তা থেকে আমাদের শরীরের সকল পুষ্টি সম্পূর্ণভাবে পরিপূর্ণ হয় না। আর যেকোনো বীজের মধ্যেই যে ধরনের পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে তা অন্যান্য অনেক খাবার থেকে পাওয়া মুশকিল। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সকালে কিংবা বিকালে বা নিজস্ব খাবারের রুটিন অনুযায়ী যে কোন বীজ খেতে পারেন। নানান বীজের নানান পুষ্টিগুণ সেই পুষ্টিগুলো সম্পর্কে আজকে জানা যাক:
চিয়া বীজ
স্বাস্থ্য-সচেতন মানুষের খাবারের তালিকায় চিয়া সিড থাকবেই। চিয়া সিড একধরনের মিন্ট প্রজাতির পুষ্টিকর বীজ। এতে রয়েছে ৪৭% ফ্যাট, ৩৪% প্রোটিন ও ১৪% কার্ব এছাড়াও রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস সহ আরও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। চিয়া সিড ‘অ্যান্টি–এজিং’ নামেও খুব পরিচিত। চিয়া সিড ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অনেক উপকারী , এর উচ্চ ফাইবার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে, ওজন নিয়ন্ত্রণে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসকে সহায়তা করে। এটি হার্ট ভালো রাখতেও সাহায্য করে অনেক। এর ফাইবার আর ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই কার্যকরী। চিয়া সিড শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এছাড়াও নিয়মিত খেলাধুলা করেন বা যারা ক্রীড়াবিদ তাদের জন্য চিয়া সিড অত্যন্ত কার্যকরী। কারণ এর প্রোটিন উপাদান পেশী মেরামত এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।
পাম্পকিন বীজ
মিষ্টি কুমড়া একটি অন্যতম উপকারী সবজি। এর সাথে সাথে মিষ্টি কুমড়ার বীজও আমাদের শরীরের জন্য আরও বেশি উপকারী। প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম উৎস এই কুমড়ার বীজ। কুমড়ার বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস কপার,ভিটামিন ই, আয়রন ও ফাইবার, এতে ৪৯% ফ্যাট, ১৫% কার্ব এবং ৩০% প্রোটিন আছে। এর ভিটামিন ই, জিঙ্ক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেগুলো শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি শর্করার মাত্রা হ্রাস করে যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও এর ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপে সাহায্য করে। আবার ওজন কমাতে ও হাড় মজবুত করতেও ব্যাপক কার্যকরী এই মিষ্টি কুমড়ার বীজ। কারণ প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম -এ সমৃদ্ধ এই বীজ। এর পাশাপাশি চুলে পুষ্টি যোগায় এবং চুল মজবুত করতেও সাহায্য করে কুমড়া বীজ।
তিলের বীজ
পিঠা, ফাস্টফুড, পাউরুটি এবং বিভিন্ন খাবারে সজ্জার উপকরণ হিসেবে দেখে থাকি এই তিলের বীজ। স্বাদে ভালো হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিগুণেও ভরপুর এই তিল। এতে রয়েছে ১৮% প্রোটিন, ৫০% ফ্যাট, ২৩% কার্ব এছাড়াও আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন এবং জিঙ্কের মতো উপকারী উপাদান। তিল লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং ঘুমের সমস্যাও দূর করে। তাই যারা অনিদ্রা সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য তিলবীজ খুবই উপকারি। এছাড়াও লিভার বা যকৃত ঠিক থাকলে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ঠিক থাকে। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং এর স্বাস্থ্যকর প্রোটিন রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এই তিল।
সূর্যমুখীর বীজ
স্বাস্থ্য উপকারের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী এবং সুস্বাদু খাদ্য হলো এই সূর্যমুখী বীজ। সালাদ অথবা মাখন তৈরিতে এর ব্যবহার প্রায়ই লক্ষ করা যায়। পুষ্টির ‘পাওয়ার হাউস’ হিসেবে গণ্য করা হয় এই সূর্যমুখীর সিডকে। এতে আছে ৫১% ফ্যাট, ২০% কার্ব, ২১% প্রোটিন এছাড়াও আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সামগ্রী রয়েছে। এর স্বাস্থ্যকর চর্বি খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এর ভিটামিন ই একটি প্রদাহ বিরোধী এজেন্ট হিসাবে কাজ করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে হৃদয়কে রক্ষা করে। এটি মস্তিষ্কের কোষ এবং নিউরনকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। সূর্যমুখীর বীজে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা মস্তিষ্কের বিকাশ এবং কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ভিটামিন ই আপনার ত্বকেও প্রতিফলিত হয়। সূর্যমুখী সিডের ফাইবার সামগ্রী কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে যা একটি স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাড় মজবুত করতে, ওজন কমাতে, চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও ব্যাপক সহায়তা করে এই বীজ। এছাড়াও সূর্যমুখী বীজের উচ্চ ফাইবার উপাদান রক্তে গ্লুকোজ শোষণ কমিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য খুবই সুবিধাজনক।
ফ্লাক্স সিড
ফ্লাক্স সিড বা তিসি বীজ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের জন্য এই তিসি বীজ খুবই জনপ্রিয়। উচ্চ রক্তচাপ আমাদের শরীরে অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। তাই নিয়মিত তিসি বীজ গ্রহণ করুন উচ্চ রক্তচাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর জন্য। এতে রয়েছে ৬৪% ফ্যাট, ৩৬% প্রোটিন ও ৯% কার্ব। এর পাশাপাশি আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, অ্যাসপার্টিক অ্যাসিড ও গ্লটেমিক অ্যাসিড যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং যেকোনো ধরনের সংক্রমণের থেকে রক্ষা করে।
যারা নিরামিষ খান তাদের মাছের তেলের চাহিদা পূরণ করে দিতে পারে এই ফ্লাক্স সিড তেল। এটি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা ত্বক নখ ও চুলকে স্বাস্থ্যকর চেহারা দেয়। এছাড়াও চুলে ফ্লাক্স সিড তেল ব্যবহার করলে দারুণ উপকার লক্ষ করা যায়। এতে ক্যালোরি কম থাকে, যার ফলে আপনার বিপাককে একটি গুরুতর উৎসাহ দেয় এবং ওজন বৃদ্ধি রোধ করে। হাঁপানি রোগীদের অ্যালার্জি কমাতে সাহায্য করে এই তিসি বীজ। নিয়মিত দুই টেবিল চামচ তিসি বীজ পানিতে ভিজিয়ে গ্রহণ করুন, খুব তাড়াতাড়ি ফল দেখতে পাবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।