ডা. এম ইয়াছিন আলী : হাড়ের ভেতরের ঘনত্ব বাড়া বা কমা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে হাড় বৃদ্ধির প্রবণতা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ২০ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের ভেতরের গঠন ও ক্ষয় একই গতিতে চলতে থাকে। তবে বয়স ৪০ বছর পার হলেই হাড়ের ক্ষয়ের মাত্রা একটু একটু করে বৃদ্ধি পেতে থাকে। পুরুষের তুলনায় নারীর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। বিশেষ করে নারীদের মেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধের পর শরীরে ইস্ট্রোপেন নামক হরমোন কমে যাওয়ায় হাড়ের ক্ষয়ের মাত্রা ক্রমে বেড়ে যেতে থাকে।
যে কারণে নারীর হাড়ক্ষয় বেশি হয় : মেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া। পর্যাপ্ত শারিরীক পরিশ্রম না করা। বেশি বেশি ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি গ্রহণ না করা। শরীরের ওজন (বিএমআই অনুযায়ী) অতিরিক্ত কম হলে। অতিরিক্ত ধূমপান বা অ্যালকোহল পান করলে। এছাড়া এমন কিছু অসুখ আছে, যা হাড়ক্ষয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যেমন- শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে। শরীরে থাইরয়েড বা প্যারালাইরয়েড হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে। যে রোগে খাবার শোষণ ব্যাহত হয়, যেমন- সিলিয়াজ ডিভিজ, ক্রনস ডিজিজ ইত্যাদি। যেসব রোগে দীর্ঘদিন শুয়ে থাকতে হয় অর্থাৎ হাঁটাচলা করতে পারে না, সেক্ষেত্রে হাড়ের ক্ষয় বেশি হয়। যেমন- ব্রেইন স্ট্রোক, এমআইভি, স্তন ক্যানসার ইত্যাদি। কিছু ওষুধও হাড়ক্ষয় বাড়িয়ে দেয়। যেমন- কটিকেস্টেরয়েড, খিঁচুনিবিরোধী ওষুধ, ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ ইত্যাদি।
হাড়ক্ষয়ের লক্ষণ : যেহেতু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ক্ষয় প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে যায়, তাই প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কিন্তু হাড়ের ভেতরের উপাদান বা ত্বক বেশি পরিমাণ কমে গেলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। যেমন- সারা শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়, বেশিক্ষণ হাঁটাহাঁটি বা চলাচল করতে কষ্ট হয়, শরীরে ভারসাম্য কমে যায়। ফলে পড়ে গিয়ে হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। আত্মবিশ^াস বা মনোবল কমে যায়। এ কারণে নারীদের হিপ ফ্যাকচার বেশি হয়।
হাড়ক্ষয় নির্ণয় : রোগ সহজেই নির্ণয় করা যায়। চিকিৎসক রোগীর কিনিকান উপসর্গ পর্যবেক্ষণ, রোগীর বয়স, পূর্ববর্তী রোগ ও হাড়ের এক্স-রে এবং বিএসডি (বোন মিনারেল ডেনসিটি) পরীক্ষার মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্ব নির্ণয় করা যায়।
প্রতিরোধে করণীয় : সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন। যেমন- প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ননী তোলা দুধ, কম ¯েœহজাতীয় দই, কডলিভার ওয়েল ইত্যাদি খেতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা ও ব্যায়াম করুন। ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন। পতন বা পড়ে যাওয়া বোধ করুন। পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রত্যেক নারীর হাড়ের ঘনত্ব নির্ণয় করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চিকিৎসা : চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো- হাড় শক্তিশালী করে তোলা, হাড়ক্ষয়ের প্রবণতা কমানো। এ চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহৃত হয়। উল্লেখযোগ্য ওষুধ হলো- এলেন্ডানেট সোডিয়াম, রিমোড্রোনেট সোডিয়াম, ইবানড্রেনিক অ্যাসিড, জলিবিক অ্যাসিড ইত্যাদি। হরমোনের সমস্যা থাকলে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সালিলেন্ট।
হাড়ক্ষয়ের চিকিৎসা না করলে পরিণতি : প্রাথমিক অবস্থায় উপসর্গ থাকে না বলে যন্ত্রণাদায়ক হয় তখন, যখন হাড়ে ফাটল ধরে বা হাড় ভেঙে যায়। তাই প্রাথমিক অবস্থায় ব্যবস্থা নিয়ে সুস্থ থাকুন।
লেখক : বাতব্যথা, প্যারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল
সূত্র : আমাদের সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।