জুমবাংলা ডেস্ক : তিন বছরের মধ্যে নারিকেল ধরবে—এই আশায় ভিয়েতনামি নারিকেলের বাগান করেছিলেন ঝিনাইদহের শতাধিক কৃষক। কিন্তু পাঁচ বছরেও নারিকেল ধরেনি। টাকা-পয়সা খরচ করে এবং দীর্ঘদিন শ্রম দিয়ে কোনও ফল না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় তারা। বাধ্য হয়ে অনেকে গাছ কেটে ফেলছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ছয় উপজেলায় প্রায় ২১শ’ ভিয়েতনামি নারিকেল গাছ রয়েছে। বাগানি ও কৃষক রয়েছেন শতাধিক। এখন পর্যন্ত তাদের কারও গাছে নারিকেল আসেনি। লাখ লাখ টাকা খরচ করে এত বছর পরও ফল না আসায় লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
সদর উপজেলার খাজুরা গ্রামের জাহিদ জোয়ার্দার বলেন, ‘ঝিনাইদহ হর্টিকালচারের একটি প্রদর্শনী প্লটের আওতায় ৪০টি ভিয়েতনামি নারিকেলের গাছ লাগিয়েছিলাম। পাঁচ বছরে দুই-চারটি গাছে চোমর বের হলেও, নারিকেল দাঁড়ায়নি কোনও গাছে। হর্টিকালচার সেন্টারের তত্ত্বাবধানে পরিচর্যা করেও লাভ হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমাকে প্রজেক্টটি দেওয়া হয়, তখন কোটি টাকার স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। অথচ গাছে নারিকেল না আসায় এখন কেউ খোঁজও নেন না।’
ঘোড়শাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পারভেজ মাসুদ লিটন জানান, ঝিনাইদহ হর্টিকালচার সেন্টারের তত্ত্বাবধানে ২০১৬ সালে পুকুর পাড়ে ২০টি ভিয়েতনামি নারিকেল গাছ লাগান। একজন উপ-সহকারী কৃষি অফিসারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে গাছগুলোর পরিচর্যা করা হলেও, চারটি গাছে কয়েকটি নারিকেল আসে। বাকি গাছে কোনও চোমর বের হয়নি।
কালীগঞ্জ উপজেলার প্রবাসী শরিফুল বলেন, ‘সৌদি আরবে থাকার সময় টেলিভিশিন ও ইউটিউব চ্যানেলে ভিয়েতনামি নারিকেল নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম। এরপর মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ৬০০ টাকা দরে ৪০টি ভিয়েতনামি নারিকেল চারা কিনে বাগান করি। কিন্তু চার বছরেও নারিকেল না আসায় এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় আবারও বিদেশ চলে এসেছি। বাগান এখনও তেমনই রয়ে গেছে।’
এদিকে ঝিনাইদহ হর্টিকালচার সেন্টারের সাত বছর বয়সী কয়েকটি ভিয়েতনামি গাছেও আজ পর্যন্ত নারিকেল আসেনি। কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আশরাফ হোসেন স্বপন, শিবনগরের সুরত আলী গাছে নারিকেল না আসায় গাছ কেটে ফেলেছেন। তবে একই উপজেলার ঘিঘাটি গ্রামের খলিলুর রহমানের একটি গাছে ৩০-৩৫টি নারিকেল ধরলেও পরিণত হতে হতে ফেটে যাচ্ছে। নারিকেলগুলো আকারে বেশ ছোট।
তিনি জানান, বিশেষ পরিচর্যা ছাড়াই গাছে নারিকেল এসেছে। নারিকেলের আকার, ফেটে যাওয়া ও বিভিন্ন রোগবালাইয়ের কারণে ভিয়েতনামি নারিকেল চাষে এলাকাবাসীকে নিরুৎসাহিত করেছেন তিনি।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, ‘ভিয়েতনামি নারিকেল বাগান করতে প্রচুর পরিচর্যা করতে হয়। কৃষকরা নিয়মিত পরিচর্যা করেন না বলে ফলনও পাচ্ছেন না।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) সাবেক মহা পরিচালক ও নারিকেল বিশেষজ্ঞ ড. নাজিউল ইসলাম বলেন, ‘ভিয়েতনামি নারিকেল গাছের জন্য সর্বক্ষণ বাতাসের গতিবেগ থাকতে হবে ১৫- ২০ কিলোমিটার। বাগানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমপক্ষে তিন মিটারের নিচে থাকবে না। দিন-রাতে তাপমাত্রার পার্থক্য থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সমুদ্র উপকূলীয় দেশগুলোতে এই প্রজাতির নারিকেল চাষে অনুকূল আবহাওয়া রয়েছে। আমাদের দেশের আবহাওয়া ভিয়েতনামি নারিকেল চাষের অনুকূল নয়। লাগানোর দুই-আড়াই বছর পর ফল ধরে। কিন্তু সাত বছর পর ধরে না। গাছের জীবনকাল ১০ বছর। যারা বাগান করেছেন, তারা ভুল করেছেন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।