সানমুন আহমেদ : পুরান ঢাকায় অনেক পুকুরই দখল-দূষণে হারিয়ে গেছে। অনেকগুলো আছে অস্তিত্ব সংকটে। মোটামুটিভাবে টিকে আছে হাতেগোনা কয়েকটি। ঢাকার যে কয়টি পুকুর এখনো টিকে আছে তার মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন পুকুর হলো পুরান ঢাকার ‘নবাববাড়ি পুকুর’। ঐতিহ্যবাহী এই পুকুরটি পুরান ঢাকার ইসলামপুরের আহসান মঞ্জিলের পাশে অবস্থিত। সাধরণত পুকুর চারকোনা আকৃতির হয়। তবে এই পুকুরটি সম্পূর্ণ গোলাকার। আর এরকম গোলাকার পুকুর ঢাকায় একটি মাত্র রয়েছে। এটি স্থানীয়দের কাছে গোল তালাব নামেও পরিচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী এই পুকুরটি ১৮৮৬ সালে খনন করান নবাব আব্দুল বারী। পুকুরটির বর্তমান আয়তন প্রায় ছয় বিঘা। পুকুরের পাড়সহ এর আয়তন প্রায় আট বিঘা। যদিও খননের পর থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে এই পুকুরটি। সংস্কার করা হলেও পুকুরের আয়তনে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। পুকুরের চারপাশে নারিকেল গাছের সারি। নিরাপত্তার স্বার্থে পুকুরের চারদিকে প্রায় চার ফুট উচু গ্রিল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। বিশাল এই পুকুরে একটি মাত্র পাড়ে রয়েছে ঘাট। সেটি সকাল ৭টায় খোলা হয় এবং সন্ধ্যা ৭টায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে পুকুরটিতে গোসল করার জন্য নেওয়া হয় ৫ টাকা করে।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) পুকুরটির পাড়ে গেলে দেখা যায় রমজানের দুপুর বেলায় আশপাশের শ্রমজীবী মানুষ গোসল করতে এসেছেন। তাদের স্বাচ্ছন্দ্য নিয়েই গোসল করতে দেখা যায়। বাদামতলীতে একটি ফলের আড়তে কাজ করা মো. সুমন মিয়া বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। গ্রামে সব সময় পুকুরে গোসল করা হতো। কিন্তু ঢাকায় আগে যেখানে কাজ করতাম সেই এলাকায় পুকুর ছিল না। কিন্তু এই এলাকায় পুকুর থাকায় বেশিরভাগ দিনেই এই পুকুরে গোসল করা হয়। এই পুকুরে গোসল করলে মনে হয় গ্রামের পুকুরেই গোসল করছি।
পুকুরের পাশেই একটি হোটেলে কাজ করা আজমত আলী বলেন, এই পুকুরে গোসল করতে বেশ ভালোই লাগে। কারণ এই পুকুরের পানি পরিষ্কার। পুরান ঢাকার অন্য যে পুকুরগুলো আছে সেগুলোর পানি এই পুকুরের পানির মতো এত ভালো না। তাছাড়া যখন চারপাশে তাপমাত্রা খুব বেড়ে যায় তখন এই পুকুরে গোসল করতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।
ইসলামপুরের একরাম উদ্দীন প্লাজার এক ব্যবসায়ী ও পুরান ঢাকার বংশালের স্থানীয় এক বাসিন্দা ওয়ালীদ হোসেন ফাহিম বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইসলামপুরের এই পুকুরটি দেখে আসছি। অন্য এলাকায় পুকুর থাকলেও এই পুকুরটির মতো এত ভালো পুকুর আর কোথাও নেই। তাছাড়া এখন যেভাবে চারপাশে আগুন লাগছে পাশে এ রকম একটি পুকুর থাকলে সেখান থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করা সহজ হয়ে যায়।
মৌলভী খাজা আবদুল্লাহ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মালিকানাধীন পুকুরটি পরিচালনা করছেন নবাব পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত ‘নবাববাড়ি ট্যাংক কমিটি’। নবাববাড়ি পুকুরের দায়িত্বে নিয়োজিত মো. কাইয়ুম বলেন, এই পুকুর অনেক জায়গা থেকে লোকজন আসে দেখতে। পুরান ঢাকার স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি এখানে নিয়মিত বাদামতলী শ্রমজীবী, সদরঘাটের শ্রমিকসহ যাদের গোসল করার জায়গা নেই তারা এখানে গোসল করতে আসে। বিভিন্ন উৎসবেও এখানে মানুষ গোসল করতে আসে বলে জানান তিনি। সূত্র : দেশ রূপান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।