জুমবাংলা ডেস্ক : গ্রামবাংলার এক চিরচেনা পাখি বক। সকাল থেকে খাল-বিল, নদী-নালাসহ বিভিন্ন জলাশয়ে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। কখনো শিকার ধরতে জলের ধারে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর ছোঁ মেরে লম্বা ঠোটের সাহায্যে চোখের পলকে শিকার করে ছোট ছোট মাছসহ নানা জলজ প্রাণী।
বক সাধারণত ব্যাঙ, ছোট, মাছ, সাপ ও জলজ পোকা খেয়ে জীবন ধারণ করে থাকে। পৃথিবীতে মোট ৬৪টি প্রজাতির বক থাকলেও বাংলাদেশে সাধারণত কানিবক, সাদাবক, গো-বকসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বক দেখতে পাওয়া যায়।
প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট, অপরিকল্পিত গাছপালা নিধনে বিলুপ্ত হওয়ার পথে এই পাখিটি। দিনদিন আহারের জায়গা কমে যাওয়ায় জীবন বাঁচাতে ময়লার ভাগাড়ে খাদ্যের সন্ধান করছে জলচর এই পাখি।
পরিবেশবিদরা বলছেন, বক মৎস্যভোজী পাখি হলেও খাদ্যসংকটে তারা গ্রহণ করছে বিষাক্ত ময়লা-আবর্জনা। খাবার না পেলে অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে এসব পাখি। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
চাঁদপুর শহরের সবচেয়ে বড় ময়লার ভাগাড় স্বর্ণখোলা এলাকায়। যেখানে সকাল থেকেই পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, হাসপাতাল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানের ময়লা সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। আর এসব ময়লা থেকেই খাবার সংগ্রহে চিল, কাকের পাশাপাশি ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বক ছুটে আসে। খাল-বিল আর জলাভূমির সংকটে মৎস্যভোজী বকের খাদ্য গ্রহণের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে ময়লার ভাগাড় ও ডাস্টবিন।
স্থানীয় বাসিন্দা জামাল ভূঁইয়া বলেন, সারা জীবন জেনেছি বক মাছ, ব্যাঙ খায়। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে দেখছি ময়লার ভাগাড়ে ঝাঁক বেঁধে বক খাবার খেতে আসে। আসলে আগের মতো খাল-বিল না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে ময়লার ভাগাড়ে আসে খাবারের সন্ধানে। এখানে বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়, যা তাদের খাবার নয়। কিন্তু জীবন বাঁচাতে তারা এগুলোই খাচ্ছে।
আরেক বাসিন্দা ওসমান মিয়া বলেন, নির্বিচারে গাছপালা কাটায় একদিকে বাসস্থান সংকট, অপরদিকে খাদ্যের অভাবে টিকে থাকা দায় হয়েছে বকদের। বক ছাড়াও এসব ময়লার ভাগাড় থেকে খাবার সংগ্রহ করছে গরু। শহরের অনেক খামারি সকাল বেলা তাদের গরু ছেড়ে দেয় এই ভাগাড়ে। এসব আবর্জনা খেয়ে বেড়ে ওঠা গরুর দুধ ও মাংস খাচ্ছে মানুষ। ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. সুলতানা তৌফিকা আক্তার বলেন, নগরায়নের কারণে এখন আর আগের মতো জলাশয় দেখতে পাওয়া যায় না। ফলে বকসহ অন্যান্য পশু-পাখি খাদ্যের ঘাটতিতে পড়ছে। যে কারণে বাধ্য হয়ে তারা ময়লার ভাগাড় থেকে আবর্জনা খেয়ে জীবন ধারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা খুবই আশঙ্কাজনক। কারণ এই ময়লার ভাগাড়ে অনেক বিষাক্ত পদার্থ মিশ্রিত থাকে। এর ফলে অনেক পশু-পাখি মারা যাচ্ছে। তাদের বংশ বিস্তার কমে যাচ্ছে। যেসব গরু এই ময়লা খেয়ে বড় হচ্ছে, মানুষ তার মাংস ও দুধ খেয়ে সেই ক্ষতিকর পদার্থগুলো মানবদেহেও যাচ্ছে।
জেলায় কি পরিমাণে জলাশয় রয়েছে বা ভরাট হয়েছে তার হিসেবে নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের। তবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সকলকে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আসলে আমি এই খবরটি জানতাম না। পশু-পাখি খাবার সংকটে থাকলে তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে টিকে থাকতে চায়। এটি প্রকৃতির জন্য ভালো কোনো লক্ষণ নয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজেদের স্বার্থেই পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে হবে। আর এর জন্য সরকারের পাশাপাশি সকলকে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।