স্পোর্টস ডেস্ক : মাস তিনেক আগে ১৭তম জন্মদিনের কেক কেটেছেন, যার মুখ থেকে এখনও যায়নি কিশোরসুলভ হাসি, সেই লামিনে ইয়ামালের মাঠের রূপ পুরোই আলাদা। গতিময় সব আক্রমণে প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে দেওয়ায় দারুণ পটু তিনি। একই গতিতে ছুটে চলেছেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। সবশেষ তার ক্যারিয়ারে যোগ হয়েছে সর্বকনিষ্ট খেলোয়াড় হিসেবে কোপা অ্যাওয়ার্ড জয়ের কীর্তি। এবার তার চোখে সবচেয়ে কম বয়সে ব্যালন দ’র জয়ের স্বপ্ন, ভেঙে দিতে চান ‘দা ফেনোমেনন’ রোনালদোর রেকর্ড।
বার্সেলোনায় ক্যারিয়ারের শুরু থেকে দারুণ সব কীর্তি আর রেকর্ড গড়ে চলেছেন ইয়ামাল, স্পেন জাতীয় দলেও সেই যাত্রা থেমে নেই। গত ইউরোতে স্প্যানিশ শিরোপা জয়ে অসামান্য ভূমিকা ছিল তার। এর আগে ২০২৩-২৪ মৌসুমে ক্লাবের হয়েও তার পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া।
দুইয়ে মিলিয়ে সোমবার রাতে প্যারিসে ব্যালন দ’রের জমকালো অনুষ্ঠানে অনূর্ধ্ব-২১ বছর বয়সী পুরুষ ফুটবলে বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন ইয়ামাল। ২০২১ সালে পেদ্রি ও ২০২২ সালে গাভির পর বার্সেলোনার তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে পুরস্কারটি জিতলেন ২০০৭ সালের ১৩ মে জন্ম নেওয়া ইয়ামাল।
সবচেয়ে কম বয়সে পুরস্কারটি জয়ের পথে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন সতীর্থ গাভিকে, ১৮ বছর বয়সে পুরস্কারটি জিতেছিলেন এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার।
দলীয় সাফল্যের মাঝে ব্যক্তিগত এই অর্জনে দারুণ খুশি ইয়ামাল। ট্রফি হাতে নিয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আশেপাশের সবাইকে।
“এই পুরস্কারটি পাওয়া খুব সম্মানের। আমি আমার মা, বাবা ও দাদিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা আমাকে সবসময় সমর্থন করেছেন। এছাড়া আমি আমার সতীর্থ, বার্সেলোনার সব স্টাফ, স্পেন জাতীয় দল এবং আমার কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে, শাভি এর্নান্দেস ও হান্সি ফ্লিককে ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
গত বছর পুরস্কারটি জিতেছিলেন রেয়াল মাদ্রিদের জুড বেলিংহ্যাম। ২০১৮ সালে পুরস্কারটি দেওয়া শুরু করে প্যারিস সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’-প্রথম দুই বছরে তা জিতেছিলেন কিলিয়ান এমবাপে ও মাটাইস ডি লিখট।
এ বছরের সেরা ফুটবলার হওয়ার সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও ছিলেন ইয়ামাল। ভোটাভুটিতে শেষ পর্যন্ত অষ্টম হয়েছেন তিনি। প্রথমবারের মতো পুরস্কারটি জিতেছেন তারই জাতীয় দল সতীর্থ মিডফিল্ডার রদ্রি।
তবে, ইয়ামাল যে ছন্দে ও ধারাবাহিকতায় এগিয়ে চলেছেন এবং যে অবিশ্বাস্য গতিতে উপরের দিকে উঠছেন, তাতে খুব শিগগিরই হয়তো তার হাতে দেখা যাবে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত পুরস্কারটি, ব্যালন দ’র। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ী এবং ইতিহাসের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন রোনালদো তার দুটি ব্যালন দ’রের প্রথমটি জিতেছিলেন ২১ বছর বয়সে, ১৯৯৭ সালে।
সাফল্যের ধারায় এগিয়ে, ব্যালন দ’র উঁচিয়ে ধরে কিংবদন্তির রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন ইয়ামালও।
“তারা আমাকে বলেছে (একদিন আমি রোনালদোর রেকর্ড ভেঙে দিতে পারি) এবং তার মতো ক্যারিয়ার পাওয়া হবে চমৎকার ব্যাপার। আশা করি, যত দ্রুত সম্ভব আমি এটা জিততে পারব, এটা সব খেলোয়াড়ের লক্ষ্য, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজেকে (ফুটবলে) উপভোগ করা। নিজের খেলা উপভোগ করতে পারলে, সবকিছুই আরও ভালো হবে।
২০২৩ সালে বার্সেলোনার জার্সিতে সিনিয়র ফুটবলে অভিষেক হয় ইয়ামালের এবং অল্প সময়েই নজর কাড়েন তিনি। দারুণ সব পারফরম্যান্সে কোচের আস্থা অর্জন করে গত মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ৫০টি ম্যাচ খেলেন তিনি; সাতটি গোল করার পাশাপাশি করেন সাতটি অ্যাসিস্টও।
ওই পারফরম্যান্সে জায়গা করে নেন ইউরোর স্পেন দলে। ২০১২ সালের পর দেশকে প্রথমবার মহাদেশ চ্যাম্পিয়ন করার পথে আসরে সাত ম্যাচের সবগুলো খেয়ে চারটি গোল করেন তিনি। এর মধ্যে সেমি-ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে বক্সের বাইরে থেকে উপরের কোণা দিয়ে গোল করার মুহূর্তটি নিশ্চিতভাবেই তার ক্যারিয়ারে বিশেষ জায়গা নিয়ে থাকবে।
পরে সেটা আসরের সেরা গোলের পুরস্কারও জিতে নেয়। আসরের সেরা তরুণ খেলোয়াড় হওয়ার পাশাপাশি আসরের সেরা একাদশেও জায়গা করে নেন বর্তমান ফুটবলের বিস্ময়বালক ইয়ামাল।
চলতি মৌসুমেও একই ছন্দে এগিয়ে চলেছেন তিনি, বার্সেলোনার নতুন কোচ হান্সি ফ্লিকের কোচিংয়ে প্রতিপক্ষের জন্য হয়ে উঠেছেন আরও ভয়ঙ্কর। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এবার এখন পর্যন্ত ১৪ ম্যাচ খেলে ছয়টি গোল ও সাতটি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel