মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে পাওনা টাকা চাওয়ায় এক ব্যবসায়ীকে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার ব্যবসায়িক অংশীজন ও সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জে ও এম তৌফিক আজমের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা নথিভূক্ত করার অভিযোগে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। একইসাথে আইজিপি, স্বরাষ্ট্র সচিব ও ঢাকা বিভাগীয় ডিআইজি বরাবর অভিযোগের কপি প্রেরণ করেছেন তিনি।
ভূক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী উপজেলার বাইমাইল এলাকার সেলিম হোসেন। তিনি স্থানীয় বায়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ব্যবসায়িক অংশীজন সৈয়দ আবু সুফিয়ানের সঙ্গে জমির ব্যবসা করে আসছেন। অভিযুক্ত ব্যবসায়িক অংশীদার সুফিয়ানের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া হলেও তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা।
পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগ, ভুক্তভোগী পরিবার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ব্যবসায়িক লেনদেন চলাকালে সুফিয়ানের কাছে ১৪ কোটি টাকা পান সেলিম হোসেন। তবে পাওনা টাকা চাইলে বিভিন্ন অজুহাতে সুফিয়ান কালক্ষেপণ করেন। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ-বৈঠকও হয়। পরে বাধ্য হয়ে সেলিম পাওনা টাকার দাবিতে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাইর থানার তৎকালীন ওসি মো. জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ওরফে মিঠুসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে থানা প্রাঙ্গণে সালিশ-বৈঠকে বসা হয়।
সালিশে পাওনা ১৪ কোটি টাকার মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং উপজেলার উত্তর জাইল্যা মৌজার ১৭১ শতক জমি সেলিম হোসেনকে দলিল করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন সুফিয়ান। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে টাকা বা জমি কোনোটিই ফেরত দেননি সুফিয়ান। উল্টো সেলিম ও তাঁর ছেলে মো. পলাশকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। পরে চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল পাওনা টাকার দাবিতে সেলিম হোসেন মানিকগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (মামলা নম্বর-৩৮৪/সিং) একটি মামলা করেন সেলিম।
গত ২৩ আগস্ট দুপুরে পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে সিঙ্গাইর সদরে সেলিম হোসেনের ছেলে ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুফিয়ান ও তাঁর লোকজনের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সেলিমসহ উভয়পক্ষের লোকজনকে থানায় নিয়ে যান। ওই দিন রাতে সেলিম ও তাঁর ছেলে পলাশসহ ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে থানায় ২০ লাখ চাঁদাদাবির অভিযোগে মামলা করেন সুফিয়ান। পরের দিন দুপুরে পুলিশ সেলিমকে আদালতে পাঠালে জামিনে বের হন তিনি।
ভূক্তভোগী সেলিম হোসেন বলেন, পাওনা ১৪ কোটি টাকা চাইলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসানের ঘনিষ্ট পরিচয়ে হুমকি ধামকি দিতেন। পরবর্তীতে পাওনা টাকার জন্য আদালতে মামলা করেন তিনি। তবে মামলাটি তুলে নিতে আসামি সুফিয়ান তাঁকে চাপ দেন। টাকা না দিতেই ওসির সহযোগিতায় সুফিয়ান তাঁর (সেলিম) ও ছেলে পলাশের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। এই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
পাওনা টাকা ও চাঁদাবাজির মামলার বিষয়ে সৈয়দ আবু সুফিয়ানের সাংবাদিকদের বলেন, সেলিমকে ৫০০ শতাংশ জমি কেনার জন্য ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু সেলিম ১৭১ শতাংশ জমি তাঁর নামে সাফ কবলা রেজিষ্ট্রি করে দেন। বাকি জমি রেজিষ্ট্রি করে দিতে চাপ দিলে নানা ধরনের তালবাহানা করতে থাকে। তিনি (সেলিম) কোন টাকা পান না। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পর তৎকালীন ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান মিঠু ও সেলিম সহ অনেক লোকজন থানায় বসে মব সৃষ্টি করে একটি সাদা কাগজে তাঁর স্বাক্ষর নিয়ে সেলিম ১৪ কোটি টাকা পান এবং ১৭১ শতাংশ জমি ফেরত দেওয়ার কথা লিখে নেন। বিষয়টি ওই সময়ে লিখিত ভাবে না জানালেও মৌখিকভাবে পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে।
সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জেওএম তৌফিক আজম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ওই ব্যক্তির (সেলিম) বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মারধর ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সুফিয়ান নামের এক ব্যক্তি মামলা করেছেন। মামলা থেকে বাঁচতে তিনি (সেলিম হোসেন) তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। তিনি বলেন, পাওনা টাকার দাবিতে আদালতে করা মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।